শুক্রবার ভার্চুয়াল এক ভাষণে মোদী দেশের কৃষক সমাজকে বার্তা দিয়েছেন। বরাবরের মতো এবারও তিনি সরকারের কৃষি প্রকল্পের সাফাই গেয়েছেন। একইসঙ্গে কৃষকদের সমস্যা নিয়ে কিছু লোক ‘মিথ্যা বলছে’, ‘গুজব ছড়াচ্ছে’ উল্লেখ করে বলেছেন, কৃষক আন্দোলন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের করা বিতর্কিত তিনটি কৃষি সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকরা গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করে আসছে। দিল্লি অভিমুখী সড়কও তারা অবরোধ করেছে।
দিল্লি ও আশপাশের এলাকাগুলোতে গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডাতেও আন্দোলনরত কৃষকরা তাদের দাবিতে অনঢ় থেকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষক ও সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও কোনও ফল বয়ে আনেনি।
কৃষকদের আশঙ্কা, নতুন কৃষি সংস্কার আইন ভারতের নিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থা ভেঙে দেবে এবং সরকারও ধীরে ধীরে নির্ধারিত মূল্যে গম ও ধান কেনা বন্ধ করে দেবে; যার ফলে তাদেরকে ফসল বেচতে বেসরকারি ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে নামতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এর আগেও কৃষকদের এ শঙ্কা দূর করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। শুক্রবার ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের ৭ কৃষকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলে তিনি সরকারের কৃষি প্রকল্প ‘পিএম কিষাণ’ থেকে কৃষকরা কীভাবে উপকৃত হয়েছে তা বর্ণনা করেছেন।
মোদীর সঙ্গে কথোপকথনে ৭ কৃষক এই স্কিমের প্রশংসা করলেও মাঠে বিক্ষোভকারী হাজারো কৃষকের কেউই তা করেননি।
মোদী তার ব্ক্তব্যে কৃষকদের সমর্থন দিয়ে বিক্ষোভ উস্কে দেওয়ার জন্য বিরোধী রাজনীতিবিদদের দায়ী করেছেন। বলেছেন, “আজ যারা কৃষকদের সমর্থন দিচ্ছেন, তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন কি করেছিলেন? রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তারা আজ কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি ছুড়ছেন।”
কৃষকদেরকে আবারও আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে মোদী বলেছেন, “আমি এমনকী আজ যারা আমার বিরোধিতা করছে তাদেরকেও কৃষক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার সরকার আলোচনা করতে প্রস্তুত… আমি কৃষকদেরকে কারও কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
মোদী সরকারের সঙ্গে এ পর্যন্ত কৃষক নেতাদের ছয় দফা বৈঠক হলেও তা কোনও ফল বয়ে আনেনি।
মোদী শুক্রবার তার ভাষণে কৃষকদের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়েরও কড়া সমালোচনা করেছেন। অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, “মমতা ১০ বছর ধরে সরকার চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক কারণেই তার সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প চালু করতে দিচ্ছে না। ”
মোদী জানান, ৭০ লাখ কৃষক অনলাইনে কৃষকনিধি সম্মান প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছেন। অথচ আক্ষেপের বিষয়, সারা দেশে এ প্রকল্প চালু হয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে তা চালু করা যাচ্ছে না।
মোদীর এ কথার পরপরই তৃণমূল শিবির থেকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, “কিষাণনিধি প্রকল্পে রাজ্যকে এড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নাক গলাতে চাইছে। কেন্দ্র রাজ্যের কথা শুনলে এই প্রকল্পে রাজ্য সরকারের কোনও আপত্তি নেই।”