বন্ধ হওয়া গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ, রংপুরের শ্যমপুর ও জয়পুরহাট চিনিকল এলাকার মোট ১ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন আখ নিয়ে এ বছর এ চিনিকলের ৫৮তম আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হয়েছে।
এ প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুঁজতে লোকসানে ধুকতে থাকা দেশের বৃহত্তম চিনিকলের সাথে সংশ্লিষ্ট চাষিসহ সাবেক ও বর্তমান কর্মীরা জানিয়েছেন তাদের ভাবনা।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আবু বকর জানান, এবার বন্ধ হওয়া রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলের ৫০ হাজার মেট্রিক টন, গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ চিনিকলের ৫২ হাজার মেট্রিক টন এবং নিজস্ব ৬০ হাজার মেট্রিক টন আখসহ জয়পুরহাট চিনিকলে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিকটন। এ থেকে উৎপাদন হবে ১০ হাজার ৬৯২ মেট্রিক টন চিনি।
তিনি বলেন, এবার চিনি আহরণের শতকরা হার ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৬০ ভাগ। মিলগেটে এবারও প্রতি কুইন্টাল আখ ৩৫০ টাকা এবং বাইরের কেন্দ্রগুলো থেকে ৩৪৩ টাকা দরে আখ কেনা হচ্ছে।
তবে কৃষকরা জানাচ্ছেন, আগের বছরগুলোতে আখের কম মূল্য নির্ধারণ, মূল্য পরিশোধে চিনিকল কর্তৃপক্ষের গড়িমশিসহ নানা কারণে আখের বদলে কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছেন বিকল্প ফসল চাষে। ফলে জয়পুরহাট চিনিকল এলাকায় আশঙ্কাজনকভাবে আখ চাষ কমে গেছে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার খঞ্জনপুর উত্তর পাড়া গ্রামের আখ চাষি নগেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “বাপু, আগে কুশারের (আখ) ট্যাকা নিয়া ঝামেলা হতো না, মিলত কুশার নিয়ে যাওয়া মাত্র ট্যাকা পাইছি। এখন আখের আবাদও কমে দিছি, কারণ মিলত গেলে ঠিক মত পেমেট (আখের সঠিক দাম) দেয় না, তাই অন্য ফসলের আবাদ করছি।”
চকশ্যাম গ্রামের আখচাষি আবু বকর বলেন, আখ চাষ করে ফসল পেতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগে। আর এই এক বছরে সেই জমিতে তিনটি ফসল ফলানো সম্ভব। তিনটি ফসলের যে দাম পাওয়া যায়, সমপরিমাণ মূল্য আখ চাষে পাওয়া গেলেও সময় মত আখের মূল্য পরিশোধে বরাবরই চিনিকল কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।
কৃষকরা এখন আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকছেন বলেও জানান পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া এলাকার মামুনুর রশিদ ও নিশির মোড় এলাকার সুজন কুমারসহ কয়েকজন আখচাষি।
জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম মনে করেন, মান্ধাত্মা আমলের যন্ত্রপাতির বদলে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করার পাশাপাশি উন্নত জাতের আখ চাষ বাড়াতে পারলে চিনিকলটি লাভের মুখ দেখবে।
লোকসানের কারণ বলতে গিয়ে এ চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলছেন, চিনিকলে আগে অল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ৫ থেকে ৬ মাস ধরে আখ মাড়াই হতো। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে সেখানে দিন দিন জনবল বাড়ছে। আখ মাড়াই হচ্ছে বছরে এক থেকে দেড় মাস ধরে। কখনো তাও হয় না, তাই মাথা ভারি এ জনবলের বেতন ভাতাও লোকসানের বড় কারণ।
তাই অপ্রয়োজনীয় জনবলকে সরকারের উৎপাদনশীল বিভাগগুলোতে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে এ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর বলেন, “এ বছর ১৮ ডিসেম্বর থেকে জয়পুরহাট চিনিকলের ৫৮তম মাড়াই মৌসুম শুরু হয়েছে। আমরা আসেলে ঋণের ভারে জর্জরিত। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আগামী বছর থেকে সরকারি উদ্যোগের সুফল মিলতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।