ক্যাটাগরি

২৪ পৌরসভায় নৌকা-ধানের শীষের লড়াই সোমবার

প্রথম ধাপে প্রায় সোয়া ৬ লাখ ভোটারের ২৪টি পৌরসভায় সোমবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ হবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সংশয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।

একদিন আগেই ভোটের সংঘাতে কুষ্টিয়ায় দুজন নিহত হলেও ভোটের সময় পরিস্থিতি শান্ত থাকবে বলে আশা করছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।

তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে ও নির্বাচনী পরিস্থিতি ভালো। আশা করি, ভোটেও তা বজায় থাকবে।”

মহামারীকালে শীতের মধ্যে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন ঘিরে তেমন উত্তাপ দেখা যায়নি।

পাঁচটি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে ৯৪ প্রার্থী থাকলেও বরাবরের মতোই ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা আর বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির প্রার্থীরা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এসব পৌর এলাকায়, তারা দলীয় প্রতীকে। পাশাপাশি লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও।

সহস্রাধিক প্রার্থী রয়েছে সাধারণ ও কাউন্সিলর পদে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের প্রচার নিয়েই মূলত দুয়েকটি এলাকায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

পৌর ভোট: অধিকাংশ মেয়র প্রার্থীই ব্যবসায়ী

কুষ্টিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ২ পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত
 

অশোক দেবনাথ বলেন, দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও পরস্পরবিরোধী অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে রয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে বরাবরের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটের সব আয়োজন রাখা হয়েছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। সুরক্ষা সামগ্রী থাকবে; ভোটার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট তা অসুরণ করবেন।

নির্বাচন ভবন

নির্বাচন ভবন

স্থানীয় সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিও তুলনামূলকভাবে ভালোর প্রত্যাশা রাখেন তিনি।  

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ইভিএমের ‘মক ভোটিং’ হয়েছে।

আসাদুজ্জামান জানান, প্রথমধাপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ১১৬১ জন, মেয়র প্রার্থী ৯৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৮০১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ২৬৬ জন।

তিনি জানান, নির্বাচনী এলাকায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে সেসব বন্ধ থাকবে। ২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাত খেকে ২৯ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখা থাকবে। ২৭ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাত থেকে ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত পযন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্রাক-পিকআপ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনের গাড়ি ও মহাসড়কে এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

চলতি বছর মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে জাতীয় সংদের উপ নির্বাচনগুলো করেছে নির্বাচন কমিশন। অক্টোবর থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো শুরু হয়। বছর শেষে পৌরসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের পালা আসবে।

মহামারীকালে ভোটারের এমন লাইন দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয় (ফাইল ছবি)

মহামারীকালে ভোটারের এমন লাইন দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয় (ফাইল ছবি)

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ইভিএমে পাঁচটি উপ নির্বাচন হয়। এরমধ্যে ইভিএমের ভোটে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ৫.২৮%, ঢাকা-৫ আসনে ১০.৪৩% এবং নওগাঁ-৬ আসনে ৩৬.৪৯% ভোট পড়ে। সর্বশেষ ঢাকা-১৮ উপ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৪ শতাংশ ভোটার। 

তবে সিরাজগঞ্জ-১ উপ-নির্বাচনে ৫১.৭৬% ভোট পড়ে।

এছাড়া ব্যালট পেপারে যশোর-৬ আসনে ভোট পড়ে ৬৩.৫ শতাংশ। আর বন্যার মধ্যেও বগুড়া-১ আসনে ভোট দেয় ৪৫.৫ শতাংশ ভোটার। দুটি আসনে গড় ভোটের হার ৫৫ শতাংশ।

যেসব পৌরসভায় ভোট

পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, কুষ্টিয়ার খোকসা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনার চালনা, বরগুনার বেতাগী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোণার মদন, মানিকগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, সুনাগঞ্জের দিরাই, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড।

প্রথম ধাপের ২৫টি পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও গাজীপুরের শ্রীপুরের একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যু হলে ভোট পিছিয়ে দ্বিতীয় ধাপে নেওয়া হয়।

১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায় ভোট হবে। এর মধ্যে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএম এবং ৩২ পৌরসভায় ব্যালটে ভোটগ্রহণ হবে। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে সর্বশেষ তফসিল দেওয়া হয়েছে; ভোট হবে ব্যালট পেপারে।

মহামারীর মধ্যে এবার চার ধাপে পৌর নির্বাচন করছে কমিশন। তার মধ্যে তিন ধাপে ১৫০টি পৌরসভার তফসিলও হয়েছে। বাকি যেসব পৌরসভা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন উপযোগী হচ্ছে, সেসব এলাকায় চতুর্থ ধাপের ভোট হবে।

একনজরে ২৪ পৌরসভা

>> প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী: ১১৬১

>> মেয়র প্রার্থী: ৯৪

>> সাধারণ কাউন্সিলর: ৮০১

>> সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী: ২৬৬

>> ভোটার: ৬, ২৪, ৮০৭ (পুরুষ ৩,০৭, ০৩৭; নারী ৩,১৭,৭৭০)

>> ভোটকেন্দ্র: ৩১৯

>> পুলিশ সদস্য ১২৭৬, আনসার সদস্য ২৮৭১, র‌্যাবের টিম ৭২, বিজিবি ৫০ প্লাটুন, মোবাইল ফোর্স ৭২টি ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ২৪টি।

>> প্রতি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১১ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবে।

আইন শৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল

এনআইডি উইং মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পৌরসভা ভোটের আইন শৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

এতে জননিরাপত্তা বিভাগ, পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একজন করে উপযুক্ত প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন ভবনে স্থাপিত এ সেল ভোটের দিন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কমিশনকে জানাবে, ইসির নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো, ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়, ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল পরিবহন ও ভোটের কাজে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীর সমন্বয় করে রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসারকে সহায়তা দেবে।

ভোটের জন্য প্রস্তুত ২৪ পৌরসভা
 

কেন্দ্রের নিরাপত্তা

সাধারণ কেন্দ্রে তিনজন পুলিশ সদস্য (অস্ত্রসহ), একজন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য পিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন এপিসি (অস্ত্র/লাঠিসহ) ও অঙ্গীভূত আনসার (লাঠিসহ তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী সদস্য) নিয়ে সাধারণ কেন্দ্রে মোট ১১ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে।

গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন পুলিশ সদস্য (অস্ত্রসহ), একজন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য পিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন এপিসি (অস্ত্র/লাঠিসহ) ও অঙ্গীভূত আনসার (লাঠিসহ চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী সদস্য) মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৩ জন।

ইভিএমে ভোট যেভাবে

ইভিএমে হবে ভোটগ্রহণ (ফাইল ছবি)

ইভিএমে হবে ভোটগ্রহণ (ফাইল ছবি)

কন্ট্রোল ইউনিটে ভোটার শনাক্ত করে ব্যালট ইউনিটে ভোট দিতে হবে। ব্যালট ইস্যু করার পর ইভিএমে ভোট দেবেন ভোটার।

মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের তিনটি পদে পছন্দের প্রতীকের পাশের সাদা বোতাম চাপ দিতে হবে। ভোট নিশ্চিত করতে সবুজ বোতামে চাপ দিতে হবে।

ব্যালট ইউনিটে একই পদ্ধতিতে (সাদা ও সবুজ- দুই বোতাম চেপে) তিনটি পদে ভোট দিতে হবে।

স্মার্ট কার্ড ব্যবহার, স্মার্ট কার্ডের নম্বর ব্যবহার, ১৭/১৩/১০ ডিজিটের পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার, ভোটার নম্বর অথবা আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটার শনাক্ত করবেন।

আঙুলের ছাপ ম্যাচিং না হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার প্রথমে ভোটারের ও পরে নিজের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করবেন। এ ভোটারকে শনাক্ত করণের দায় সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার। মোট ভোটারের সর্বোচ্চ ১% ভোটারকে শনাক্ত করে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন।