সেশনজট নিরসন ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক ফাইনাল ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হলেও আবাসিক হল বন্ধ থাকায় ঢাকা এসে কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি, ফেইসবুক গ্রুপে জনমত যাচাইসহ শুক্রবার বিকেলে পরীক্ষা নেওয়ার আগে আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
শনিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা আবাসিক খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত না করেই স্নাতক সমাপনী বর্ষ ও স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে। সেশনজট নিরসন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জরুরি।
হল বন্ধ রেখে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত ঢাবির, দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা
“কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য হলে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ একপাক্ষিক, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিপরীত, বিদ্যমান বাস্তবতায় অনুপোযুক্ত সমাধান এবং কোনো অবস্থাতেই অভিভাবকসুলভ নয়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থী ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জন্য এটি স্পষ্টতই অনভিপ্রেত এবং করোনাকালীন বাস্তবতায় আর্থিক সক্ষমতার বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই প্রস্তাবনায় শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হয়নি, সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হয়নি এবং হলে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া হয়নি।”
স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই সংকট-প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির ঐতিহ্যিক ধারায় দায়বদ্ধ। আমরা মনে করি, পরীক্ষার্থীদের জন্য হল উন্মুক্ত করে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে, সঠিক রূপকল্প ও বিভিন্ন স্তরে পরীক্ষা গ্রহণ করা বাস্তবসম্মত, ন্যায়ানুগ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার জন্য উত্তম সমাধান। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ-প্রত্যাশা-অধিকারের আলোকে হল খুলে দিয়ে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।”
একই দাবি জানিয়ে ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা স্বাক্ষরিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষ সমূহ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সময়োপয়োগী ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ইতিবাচক। কিন্তু আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“বিশেষ করে নারী ও ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই সময়ে ঢাকায় থাকার জায়গা ব্যবস্থা করা অনেকের পক্ষে সম্ভবপর নয়। ইতিমধ্যে পরীক্ষার্থীরা আবাসনের জন্য হল খুলে দেওয়ার পক্ষে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেছে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত দাবির সাথে একমত পোষণ করছে। তাই ছাত্র অধিকার পরিষদ শিক্ষার্থীদের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সাপেক্ষে পরীক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।”