ক্যাটাগরি

পরিস্থিতি ভালো হলে তবেই স্কুল খুলবে: প্রধানমন্ত্রী

নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের
হাতে নতুন বই পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রমের উদ্বোধন করে বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা
এখন ১৫ জানুারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি, এর মধ্যে যদি অবস্থা ভালো হয়, খোলা হবে; যদি না
হয়, আমরা খুলব না। কিন্তু আমি মনে করি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত
থাকবে।”

অন্যবছর গণভবনে এ অনুষ্ঠানের
আয়োজন হলেও মহামারীর মধ্যে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার এ অনুষ্ঠান হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক
সম্মেলন কেন্দ্রে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন। তার পক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিভিন্ন পর্যায়ের ২৩ জন শিক্ষার্থীর
হাতে নতুন বই তুলে দেন।

রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও
মাদ্রাসার প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল এ অনুষ্ঠানে, তাদের সবাই এদিন নতুন বই
পেয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। 

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের
প্রকোপ বাড়তে থাকলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কওমি মাদ্রাসা বাদে অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা
করা আছে।

মহামারীর মধ্যে এবার বছরের
প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে বই উৎসব না করে ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ভাগে ভাগে শিক্ষার্থীদের
হাতে বই পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন,“আমি
জানি, এই করোনাভাইরাসের কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে কষ্ট পাচ্ছে আমাদের
ছাত্রছাত্রীরা। তার কারণ, স্কুল ছাড়া সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা, এটা যে কত কষ্টকর, এটা
সত্যিই খুব দুঃখের।

তারপরও ডিজিটাল বাংলাদেশে
এখন শিক্ষার্থীরা যে ঘরে বসে অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে
তিনি বলেন, “যার ফলে অন্তত ছেলেমেয়েরা একেবারে শিক্ষা
থেকে দূরে যাচ্ছে না। কিছুটা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। আর সেই সাথে আমরা মনে করি, আমাদের
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, সেখানেও
অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এবং এটা চলমান থাকবে।”

এই মহামারী থেকে কবে মুক্তি
মিলবে, পুরো বিশ্ব সেই অপেক্ষাতেই  রয়েছে মন্তব্য
করে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা যখন একটু সিদ্ধান্ত নিলাম যে স্কুল খুলব, তখন আবার নতুন
করে দ্বিতীয় ধাক্কা এলো করোনাভাইরাসের। কাজেই আমরা ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করেই…।”

মহামারীর মধ্যে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা মোকাবেলা করার
ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

এবার ১২ দিনে পাঠ্যবই বিতরণ
 

পরীক্ষার্থীদের তৈরি করতে ফ্রেব্রুয়ারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ভাবনা

এবার নতুন বছরে মোট ৩৪ কোটি
৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে
জানান।

তিনি বলেন, “আমরা বিনামূল্যে
বই দিচ্ছি, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা হাতে নতুন বই পায়। একটা নতুন বই পেলে একটু ভালোও
লাগে। বইটা হাতে পাবে, মলাটটা লাগাবে, নামটা লিখবে, সুন্দরভাবে দেখবে, পড়বে… সেটাই একটা আলাদা আনন্দ। সেই আনন্দটা যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পায়, সেজন্যই
আমরা ব্যবস্থা নিই প্রতিবছর।”

এবার মহামারীর মধ্যে বিপুল
সংখ্যক নতুন বই ছাপানো যে অনেক কঠিন ছিল, সে কথা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ
জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বই বিতরণের সময়
এক সাথে যেন বেশি সমাবেশ না হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভাগে ভাগে সবাইকে বিতরণ করাই ভালো।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি ঘরে বসে থাকা
অত্যন্ত কষ্টকর, সময় কাটানোও কষ্টকর। তারপরও খালি পাঠ্যবই না, এমন অনেক বই আছে, পড়া
যায়, যা পড়ার জন্য আমি অনুরোধ করব।”

আর শিক্ষার্থীরা যাতে খেলাধুলা
করতে পারে, নিয়মিত কিছুটা রোদে বা খোলা হাওয়ায় যেতে পারে, অভিভাবকদের সেই পরামর্শ দেন
সরকারপ্রধান। পাশাপাশি বাইরে গেলে সবাইকে মাস্ক পরতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেন।

“আমাদের আজকের শিশুরাই
আগামী দিনের ভবিষ্যত। তারাই তো একদিন এই দেশে কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে,
কেউ বিজ্ঞানী হবে, কেউ মন্ত্রী হবে, কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে। কেউ না কেউ তো কিছু হবে।
কাজেই সেইভাবে শিক্ষাগ্রহণ করবে।”

শেখ হাসিনা বলেন,
“বাংলাদেশের প্রত্যেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। দেশে এবং বিদেশেও
তারা নাম করবে। শিক্ষা যেহেতু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কাজেই সেই শিক্ষাগ্রহণের সাথে
সাথে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত
বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”

বাংলাদেশের একটি মানুষও
যেন ঠিকানাবিহীন না থাকে, সেই লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা ভূমিহীন,
গৃহহীন, তাদেরকে আমরা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। প্রত্যেকের একটা ঠিকানা থাকবে। প্রত্যেক
ঘরে শুধু বিদ্যুতের আলো না, শিক্ষার আলোও যাতে জ্বলে, শিক্ষার আলোও আমরা জ্বালব।
সেভাবেই আমরা কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি।”

গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা
করেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন,
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক
সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।