ক্যাটাগরি

বীরদের কণ্ঠে বীরত্বের গল্প ধারণ করে রাখবে সরকার

মুক্তিযুদ্ধ
বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে গবেষণা গ্রন্থ ‘নৌ-যুদ্ধ
একাত্তর’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন।

মোজাম্মেল
বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কর্মসূচি নিয়েছি ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’। জীবিত মুক্তিযোদ্ধার
মৌখিক ভাষ্য আমরা ১৫ থেকে ২০ মিনিটে শুনতে চাই, সেটা আর্কাইভে রাখব। যতদিন এই পৃথিবী
থাকে ততদিন যেন সংরক্ষিত হয়।

“আশা
করি আমরা আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে রেকর্ড করা শুরু করব। প্রত্যেক ব্যক্তির (বীর মুক্তিযোদ্ধ)
বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেকর্ড করবে এবং সেগুলো সারাজীবন সংরক্ষিত থাকবে।”

বীর মুক্তিযোদ্ধরা
কীভাবে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, কীভাবে যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধকালীন স্মৃতি- সেসব বিষয় তাদের
কণ্ঠে রেকর্ড করা হবে জানান মন্ত্রী।

“১৫-২০
মিনিট ভিডিও করে রাখব কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে এলেন, অভিজ্ঞতা কী। ভবিষ্যতে ইতিহাসবিদরা
সঠিক ইতহাস লিখবে।”

মন্ত্রণালয়ের
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী ধারাভাষ্য
আকারে বর্ণনা রেকর্ড করে তা সংরক্ষণের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারের ব্যবস্থা
করা হবে। এজন্য ৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মন্ত্রণালয়।
২০২২ সালের ‍জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা।

বাংলাদেশের
স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে যেসব ইতিহাস লেখা হয়েছে, তার কোনোটিকেই পূর্ণাঙ্গ বলে মনে করেন
না বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক।

তিনি
বলেন, “যেসব ইতিহাস লেখা হয়েছে, লেখকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই অন্ধের হাতি
দেখার মত। পরিপূর্ণ কোনো চিত্র উঠে আসেনি। … যে যখন লিখেছি আমাদের দুর্ভাগ্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকলের জন্য না, নিজেকেই
প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, আমি একাই যুদ্ধ করেছি, অন্যরা আমাকে সাহায্য করেছে, আমিই সব
পরিকল্পনা করেছি, নেতৃত্ব দিয়েছি, সব আমার ব্রেন থেকে এসেছে, অন্যরা ফলো করেছে- নিজেকেই
ফোকাস করেছে বেশি।

“সেগুলো
পরিহার করে ইতিহাসের আলোকে যার যেটা অবদান সেটা আমরা কম্পাইল করে যেন একটা বই করতে
পারে সে বিষয়ে আপনাদের (বীর মুক্তিযোদ্ধা) সহযোগিতা চাই। আমরা যেন নিজের অংশটুকু ছোট
ছোট করে লিখে রাখি, আমি কী দেখেছি, আমি কী জানি। ইতিহাস তো লিখতেই হবে।”

তিনি
বলেন, “নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আলাদা আলাদা লেখা চাওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের
কাছ থেকেও লেখা নিয়ে কম্পাইল করে ছোট আকারে বই করা হবে, যাতে মানুষ পড়তে পারে।”

জিয়া,
এরশাদ, খালেদা জিয়া মিলে ৩০ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে
চেয়েছিলেন বলে দাবি করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

“আমরা
যারা যুদ্ধ করেছি আমাদের জীবদ্দশায় যদি ইতিহাস এভাবে বিকৃত হয়, আমরা যেদিন থাকব না
সেদিন কী হতে পারে একটু চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি। তাই আমরা যেন যার যার অংশটুকু
লিখি।”

একাত্তরে
পাকিস্তানী বাহিনী যুদ্ধের নিয়ম লংঘন করে যেসব অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল সেগুলো
তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধ হবে যোদ্ধায় যোদ্ধা, কিন্তু সেখানে
গণমানুষ ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করা বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই না।

“ওরা
লুটপাট, ধর্ষণ ও বর্বরতার কাজে জড়িত হয়েছে বলেই ওদের সৈনিকদের মনোবল আর থাকেনি। সে
কারণে প্রায় এক লাখ সৈনিক সারেন্ডার করতে বাধ্য হয়েছে, এর থেকে অপমানজনক ইতিহাস পৃথিবীতে
আর নেই। কারণ পাকিস্তানী সৈন্যতে মাত্র সাত ভাগ বাঙালি আর ৯৩ ভাগ তাদের লোক ছিল।”

‘নৌ-যুদ্ধ
একাত্তর’ গ্রন্থের লেখক মো. শাহজাহান কবির বীর প্রতীক জানান, গবেষণাধর্মী তার গ্রন্থে
মুক্তিযুদ্ধ এবং এর পটভূমি বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে পরিস্ফুটিত হয়েছে।

“বাংলাদেশের
বিভিন্ন এলাকায় নৌপথে নৌ কমান্ডো বাহিনীর দুঃসাহসিক নৌ অপারেশনের বীরত্বগাথা এবং একাত্তরের
মধ্য অগাস্ট থেকে ডিসেম্বরের বিজয় পর্যন্ত অর্জন গ্রন্থটিতে বর্ণনা করা হয়েছে।”

গ্রন্থটি
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন গ্রন্থাগারে
সংরক্ষণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান লেখক শাহজাহান কবির।

মন্ত্রী
জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকার বই কেনা হবে।

মুক্তিযুদ্ধ
বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, মাহবুব এলাহী বীর প্রতীক, নৌ কমান্ডার মাহবুবুর
রহমান, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুস সত্তার বীর প্রতীক, রবিউল আলম বীর উত্তম, ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন
আহমেদ বীর উত্তম এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডার অ্যাসোসিয়েসনের কো-চেয়ারম্যান
হাবিবুল হক খোকন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।