করোনাভাইরাস
মহামারীর মধ্যে এবার এক দিনে পাঠ্যপুস্তক উৎসব না করে ৪ কোটি
১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই বিতরণ করা
হবে ধাপে ধাপে।
প্রাথমিকের
সব বই বিতরণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠনো হলেও মহামারীর মধ্যে বই ছাপনোর কাজে বিঘ্ন
ঘটায় মাধ্যমিকের সব বই এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়নি।
জাতীয়
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র সাহা বলছেন,
প্রত্যোক ক্লাসের বই পাঠানো হয়েছে। যেসব ক্লাসে বইয়ের সংখ্যা বেশি, সেসব ক্লাসের কিছু
বই এখনও স্কুলে পৌঁছানো যায়নি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সব বই পৌঁছে যাবে।
আওয়ামী
লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে
নতুন বই তুলে দিচ্ছে। গত ১১ বছরে ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৬টি বই বিনামূল্যে বিতরণ
করা হয়েছে।
এবারের
বই বিতরণ শেষ হলে সব মিলিয়ে ৪০১ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮টি বই বিতরণ করা হবে।
এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিম্ন মাধ্যমিক,
মাধ্যমিক এবং ইবতেদায়ীর এক কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯
হাজার ৮৫৭টি বই এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার
৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি বই বিতরণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
তার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বিভিন্ন স্তুরের ২৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন
বই তুলে দেন।
এনসিটিবি
চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র সাহা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অধিকাংশ
বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে, তবে মাধ্যমিকের কিছু বই এখনও পাঠানো যায়নি।
“মাধ্যমিকের
কোনো ক্লাসে যদি ১২/১৩টি বই থাকে, তার মধ্যে ১০টি পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো ছাপার কাজ
চলছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ওইসব বই পাঠানো হবে।”
মাধ্যমিকের
সব বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো সম্ভব না হলেও প্রাথমিকের শতভাগ বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
পাঠানো হয়েছে বলে জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “কোভিভের কারণে উৎপাদনে বিলম্ব হয়েছে।
তবে আমরা এটা নিশ্চিত করেছি, সব ক্লাসের বই গেছে। যেসব ক্লাসে বইয়ের সংখ্যা বেশি, সেসব
ক্লাসের অর্ধেক বই পাঠানো হয়েছে। যেসব ক্লাসে ৭/৮টি করে বই, সেগুলোর সবগুলোই পাঠানো
হয়েছে। আর যেসব ক্লাসে ১৫-১৬টি বই, সেখানে অর্ধেক পাঠানো হয়েছে।”
আগামী ১-৩ জানুয়ারি নবম শ্রেণি, ৪-৬ জানুয়ারি অষ্টম
শ্রেণি, ৭-৯ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণি এবং ১০-১২ জানুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের
বই দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ
শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
অর্থাৎ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ থেকে ১২ জানুয়ারির
মধ্যে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বই তুলে দেবে। তবে কোনো কোনো
বিদ্যালয় বছরের প্রথম দিন থেকে বই বিতরণ শুরু করবে না বলে জানিয়েছে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান
আরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের যেহেতু অনেক বড় বড় রুম আছে, তাই আমরা
বই বিতরণের সময় ভাগ করে নিয়েছি। এক সময়ে ক্লাস ওয়ান, এক সময়ে ক্লাস টু, পরের দিন হয়ত
ক্লাস থ্রি বা ফোরের বই দেব। ৩ জানুয়ারি অল্প কিছু শিক্ষার্থীকে বই দিয়ে এই কার্যক্রম
শুরু করা হবে। এরপর আমরা জানিয়ে দেব, কবে কীভাবে কোন ক্লাসের বই দেব।”
শিক্ষার্থীদের ডায়েরি, আইডি কার্ড বা পরিচিতিমূলক
যে কোনো ডকুমেন্ট সঙ্গে নিয়ে বাবা-মা, অভিভাবক ছাড়াও অন্য যে কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
এলে বই নিয়ে যেতে পারবেন বলে জানান আইডিয়ালের অধ্যক্ষ।
“সবার জন্য বই প্যাকেট করে রেখেছি, স্কুলে আসবে
আর বই নিয়ে যাবে, বেশি সময় এখানে থাকার দরকার পড়বে না।
১২ জানুয়ারি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থী
ভর্তির লটারি হবে জানিয়ে শাহান আরা বলেন, তার আগে বই বিতরণ শেষ করা হবে।
পরিস্থিতি ভালো হলে তবেই স্কুল খুলবে: প্রধানমন্ত্রী
অন্যসব শ্রেণির সব বাই হাতে পেলেও নবম শ্রেণির মাত্র
দুটি বই পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাকি বইগুলোও তাড়াতাড়িই হাতে পাব।”
মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহোদ হোসেন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কীভাবে বই বিতরণ করা হবে তার লিখিত নির্দেশনা এখনও
তিনি হাতে পাননি।
“তবে পত্রিকায় দেখলাম শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, একেক
ক্লাসের বই তিন দিন করে বিতরণ করতে, সরকার যেভাবে বলবে সেভাবেই আমরা বই বিতরণ করব।”
“প্রাথমিকের বই দুই কিস্তিতে আর মাধ্যমিকের বই এক
কিস্তিতে পাওয়া গেছে, (একেক ক্লাসের) চারটি করে বই পেয়েছি। সব বই এখনও পাওয়া যায়নি।
আজকে আরও বই আনতে গেছে, এই বইগুলো পেলে বোঝা যাবে কতগুলো বই পেলাম।”
কবে থেকে বই বিতরণ করা হবে এখনও সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নেননি জানিয়ে ফরহাদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বই বিতরণের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে
তাদের।
“শিল্প প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আমাদের অভিভাবক, তার
সঙ্গে পরামর্শ করে ছোট আনুষ্ঠানিকতায়, সেটা সশরীরে বা ভার্চুয়ালি যেভাবেই হোক, করে
আমরা বই বিতরণ করব।”
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ১২ দিন ধরে বই বিতরণের
নির্দেশনা দেওয়া হলেও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই বছরের শুরুর দিন নতুন বই
হাতে পাবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো.
মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার পরও ৩১ ডিসেম্বরের
মধ্যে তাদের শতভাগ বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
“বছরের প্রথম দিন প্রাথমিকের প্রত্যেক ক্লাসের শিক্ষার্থী
বই পাবে। যেসব স্কুলে শিক্ষার্থী বেশি, সেসব স্কুলে দুই দিন ধরে বই দেওয়া হবে।”
যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক,
সেসব বিদ্যালয় বছরের প্রথম দিনেই বই বিতরণ শেষ করতে পারবে বলে জানান মিজানুর।
তিনি বলেন, এক দিনে কোনো বিদ্যালয় বই বিতরণ শেষ
করতে না পারলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই দিনে বই বিতরণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকের সব বই পাওয়া গেছে কি না, সেই প্রশ্নে
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর বলেন, “পঞ্চম শ্রেণির দু’একটা বই বাদ ছিল,
এতে কোনো সমস্যা হয়নি। পাশ্ববর্তী উপজেলায় সেসব বাফার স্টক ছিল সেখান থেকে এনে কাভার
করা হয়েছে। আমরা শতভাত বই বিতরণের জন্য প্রস্তুত করেছি।”
এ দিকে নতুন নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যেতে
চায়। অভিভাবকরাও তাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঢাকার কাপড়ের ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম জানান, তার
ছেলে ধানমণ্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে উঠছে এবার।
“অনেক দিন থেকেই তো ছেলে স্কুলে যেতে পারে না। তাই
মাস্ক-টাস্ক পড়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই স্কুলে বই আনতে যাব।”