মিষ্টির
দোকান ও চা স্টল বন্ধ এবং হাটবাজারে লোক সমাগম কমে যাওয়ায় খোলা বাজারেও খুচরা
দুধের চাহিদা কমে গেছে। এ অবস্থায় খামারিরা খোলাবাজারে স্বল্প মূল্যে দুধ
বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের
শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি মিল্ক
ভিটা কারখানার ডিজিএম ইদ্রিস আলী জানান, ৯০০ মেট্রিক টন উৎপাদিত গুড়াদুধ অবিক্রিত
অবস্থায় মিল্ক ভিটার গুদামে মজুদ রয়েছে; যে কারণে নতুন
করে এ দুধ উৎপাদন করাও সম্ভব হচ্ছে
না। ফলে কারখানার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
খামারিদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকারি নির্দেশে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার নির্দেশ দিলে চালু করা হবে। এতে খামারিদের সাময়িক অসুবিধা হলেও আমাদের কিছু করার নেই।”
আশির দশকে সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলা
এবং পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর
নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ দুগ্ধ অঞ্চল গড়ে ওঠে। এসব উপজেলা প্রাণিসস্পদ অফিসের তথ্যমতে
এ অঞ্চলে প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি গো-খামার রয়েছে। প্রতিটি কৃষক
তাদের বাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভী লালনপালন করেন্।
এ
এলাকা থেকে মিল্ক ভিটা,
আড়ং, প্রাণ ডেইরি, ফার্ম ফ্রেস, অ্যামোমিল্ক, আফতাব, রংপুর ডেইরি, ব্র্যাকসহ
প্রায় ২০টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে সারাদেশে বাজারজাত
করে থাকে।
শাহজাদপুর
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
মি্জানুর রজমান বলেন, শুধু তার উপজেলায় তিন হাজার ৮০০ রেজিস্টার্ড ও চার হাজার ১০০
নন-রেজিস্টার্ড খামার রয়েছে। এর বাইরে এ উপজেলায় আরও প্রায় দেড় হাজার কৃষক গরু
লালন-পালন ও দুগ্ধ উৎপাদন করেন।
করোনাভাইরাসের
প্রভাবে এসব অঞ্চলের বেশির ভাগ ছানা ও মিষ্টিজাত
কারখানা ও চায়ের দোকান বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব জায়গায় খামারিরা তাদের দুধ
সরবরাহ করতে পারছেন না।
শাহজাদপুরের
মাদলা নতুনপাড়ার খামারি
জাহাঙ্গীর হোসেন, আলমগীর হোসেন ও আব্দুল
হালিম বলেন, দুধ বিক্রি করতে না পেরে তারা খামারের উৎপাদিত দুধ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে
পাঠাচ্ছেন। কিছু দুধ বিক্রি করতে পারলেও দাম পেয়েছেন
মাত্র ১০ টাকা লিটার।
পাবনার
বেড়া উপজেলার সানিলা এলাকার খামারি আব্দুস সালাম বলেন, “খামারে দৈনিক
১০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। কয়েকদিন আগেও একটি
প্রতিষ্ঠান আমার থেকে দুধ নিয়ে ঢাকায় পাঠাত। অথচ গত দুই দিন
ধরে তারা আর দুধ নেয় না। তাই বাধ্য হয়ে বাজারে ২০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছি।”
সাঁথিয়া
উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের খামারি বেলায়েত হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের
প্রভাবে হঠাৎ করেই বাজারে গো-খাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। চারদিন আগেও ৪৫ কেজি
ওজনের এক বস্তা ভুসির দাম ছিল ১২২০ টাকা। এখন তা কিনতে হচ্ছে ১৫০০ টাকায়। এছাড়া
তিন-চারদিনের ব্যবধানে ৩০০ টাকা মণের খড়ের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ টাকায়।
মিল্কভিটার
আওতাধীন শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির
সভাপতি ওয়াজ আলী বলেন,
“মিল্কভিটা বন্ধ থাকায় তাদের সমিতিভুক্ত
খামারিরা দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা পানির দরে ফেরি
করে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
সাঁথিয়া
উপজেলার আমাইকোলা গ্রামের দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সেফ মিল্কের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক মাসুদ শেখ বলেন,
“এক সপ্তাহ আগেও প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার লিটার দুধ ঢাকায়
পাঠাতাম। অথচ এখন ৫০০ লিটারের বেশি পাঠাতে পারছি না। যে সব খামারিদের কাছ থেকে দুধ
সংগ্রহ করতাম তারা আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানে দুধ দিতে না পেরে খোলা বাজারে পানির দরে
দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
ভাঙ্গুড়া
দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি
ফজলুর রহমান জানান, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার কৃষকরা ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে দুধ
বিক্রি করছে। আবার অনেককে স্থান ভেদে ১৫ টাকা দরেও দুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ
অবস্থায় দুগ্ধ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারকে বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন এই খামারি।