জায়গাটির ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে উল্লেখ করে এটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার বিকালে নগরীর কোতয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি পরিদর্শন গিয়ে ওই এলাকার সংসদ সদস্য নওফেল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
তিনি বলেন, “যাত্রামোহন সেন মানে জে এম সেন হলে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এসে অনুষ্ঠান করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও এখানে এসেছিলেন। সুতরাং উনি অনেক আগে থেকেই অবগত আছেন যে, এটার একটা ঐতিহাসিক মূল্য আছে।
“স্বাভাবিকভাবেই আমি বিষয়টি উনার দৃষ্টিগোচর করব। আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর করব, জাদুঘর করার বিষয়ে সেখান থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার নামে হঠাৎ করে ভেঙে ফেলা হয়েছে, এটা একেবারেই আমার কাছে দুরভিসন্ধিমূলক মনে হয়েছে।”
নগরীর রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি সোমবার ভাঙার চেষ্টা করে একটি পক্ষ। বুলডোজার দিয়ে ভবনের সামনের অংশ ভেঙেও ফেলা হয়।
চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি শনিবার বিকালে পরিদর্শন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ছবি: সুমন বাবু
এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত স্থানীয় ছাত্র-জনতাকে নিয়ে তা থামিয়ে দেন। তিনি বলেন, বাড়ির দখল নিতে আসা পক্ষটি ‘জাল দলিল’ করে আাদলতের আদেশ এনেছিল।
পরবর্তীতে ওই স্থাপনাটি রক্ষায় আন্দোলন করে আসা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও বিশিষ্টজনরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য জায়গাটি রক্ষা করে জাদুঘর করার দাবি তুলেছেন।
ইতিমধ্যে ওই স্থাপনাটি রক্ষা করে জাদুঘর করার প্রস্তাব দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বরাবর চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই জায়গার ওপর স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে হাই কোর্টের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ওই ভবন ভাঙায় নিষেধাজ্ঞা নেওয়া হয়েছে আদালত থেকে।
ঐতিহাসিক স্থাপনায় জাদুঘর করার দাবিতে একমত জানিয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “জাদুঘর করার ব্যাপারে আমার অবশ্যই ভূমিকা থাকবে।”
এই স্থাপনা ভাঙার পেছনে ‘অন্য উদ্দেশ্য’ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখানে একটা পক্ষ বলছেন, তারা আদালত থেকে রায় পেয়েছেন। আদালত থেকে রায় হওয়ার পর জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। বুঝিয়ে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে কীভাবে ভাংচুর হল, পুরাতন একটা স্থাপনাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।
“রায়টা কতটুকু কী হয়েছে, তা পর্যালোচনা করতে হবে। রায়ের ভিত্তিটা কী তা দেখতে হবে, অবস্থান এ রকম থাকবে কি থাকবে না সেটা আদালত কর্তৃক নির্ধারণ হবে। কিন্তু হঠাৎ করে ঐতিহাসিক ভবন ভেঙে দেওয়া হয়েছে সেটা গর্হিত এবং আমার দৃষ্টিতে আইনবিরোধী একটা কাজ হয়েছে।”
যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি ঐহিতাসিক স্থাপনা হিসেবে ‘হেরিটেজ মূল্য’ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেটাকে সম্মান দেখানো উচিৎ ছিল। সেটা ভেঙে দেওয়ার ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।”
চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ভাঙা বাড়ি। ছবি: সুমন বাবু
ওই এলাকার ভেতরে যারা অবস্থান করছেন তাদের বৈধতাটা কী তা দেখতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখানে একটা স্কুল ছিল। দেখতে হবে কিসের ভিত্তিতে কবে থেকে তারা এখানে অবস্থান করছেন।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে নওফেল বলেন, যে কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনা, মালিকানা সূত্রে যিনি পান বা না পান, এটা ভেঙে ফেলার অধিকার কারও নেই। সরকার সেটা সংরক্ষিত ঘোষণার আগ পর্যন্তও যদি কেউ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে সামাজিকভাবে সেটা প্রতিহত করার একটা রেওয়াজ এদেশে রয়েছে।
“তবে এই জায়গাটি নিয়ে যে আলোচনাটা সামনে এসেছে, কাগজপত্র আরও দেখতে হবে। এটা একটা অর্পিত সম্পত্তি এবং জেলা প্রশাসনকে পক্ষভুক্ত না করে, জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা না করে কীভাবে এই জায়গাটা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তা নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে।”
ওই এলাকায় আদালতের একজন নাজিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, “একজন নাজিরের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার না থাকা সত্ত্বেও অর্পিত সম্পত্তি কীভাবে সরকারের মালিকানা থেকে ব্যক্তি মালিকানায় গেল, সেটা তদন্ত করে দেখতে হবে।”
নওফেল বলেন, ওই স্থানে একটা স্কুল ছিল। স্কুলের যখন অনুমতি থাকে, পাঠদানের অনুমতি থাকে, একাডেমিক অনুমোদন থাকে- এতগুলো সরকারি স্বীকৃতি থাকার পরও কীভাবে হঠাৎ করে সেটাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে যেখানে জেলা প্রশাসন অবগত নয়?
“সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, এখানে অনেক ষড়যন্ত্রমূলক কাজ হয়েছে।”