ক্যাটাগরি

যশোরের রাজনীতিক খালেদুর রহমান টিটো মারা গেছেন

রোববার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে প্রয়াতের মেজ ছেলে খালিদ হাসান জিউস জানান।

তিনি বলেন, ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে তিন দিন আগে তার বাবাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার সকাল ১০টার দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল।

যশোর-৩ আসনের সাবেক সাংসদ খালেদুর রহমান টিটোর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। সোমবার দুপুরে জোহরের নামাজের পর শহরের ঈদগাঁ ময়দানে জানাজা শেষে কারবালা কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে।

এরশাদ সরকারের শেষ দিকে শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রীর পদ পাওয়া এই রাজনীতিবিদ তার রাজনৈতিক জীবনের অনেক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

ইপিসিপি (এমএল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ), গণতান্ত্রিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগও তিনি করেছেন।

১৯৬৩ সালে যশোর এমএম কলেজে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতি হাতে খড়ি হয় খালেদুর রহমান টিটোর। পরে বাম ধারার শ্রমিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৭৪ সাল থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ) করা এ নেতা ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ন্যাপের পক্ষ থেকে জিয়াউর রহমানকে সমর্থন দিয়েছিলেন। পরে ১৯৮১ সালে ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’ গঠিত হলে তিনি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হন।

১৯৮৪ সালে যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন খালেদুর রহমান টিটো। পরে ৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও হন।

এর আগে বিএনপিতে যোগ দিলেও সদর আসনে দল প্রার্থী না করায় ধানের শীষের নির্বাচন তিনি করেননি বলেন জানান জিউস।

১৯৯০ সালের মে মাসে এরশাদের সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান টিটো।  ওই বছরের শেষে গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতন হয়। ১৯৯১ সালের পর জাতীয় পার্টি যখন বেকায়দায়, টিটোকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর দল ত্যাগ করে আবার বিএনপিতে যোগ দেন টিটো। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে আবারও দল ছাড়েন।

২০০৬ সালে টিটো আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ২০০৮ সালে নৌকার প্রার্থী হিসেবে যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

খালেদুর রহমান টিটো ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হবিবুর রহমান আইনজীবী ছিলেন।

সাত ভাইবোনের মধ্যে টিটো দ্বিতীয়। টিটোর শিক্ষাজীবন শুরু হয় যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৬০ সালে এখান থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকার কায়েদে আজম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬৭ সালে কারাগারে থাকার সময়ই যশোর এমএম কলেজ থেকে তার গ্রাজুয়েশন হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হলেও রাজনৈতিক কারণে পড়া শেষ করতে পারেননি টিটো।

১৯৭২ সালের ১৮ মে যশোর শহরের চুটিপট্টির মেয়ে রওশন আরা বেগমের সঙ্গে সংসার জীবন শুরু করেছিলেন টিটো। তাদের তিন ছেলে। ২০০৭ সালে স্ত্রী রওশন মারা যান।

টিটোর বড়ভাই মাসুকুর রহমান তোজোকে ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী নৃশংসভাবে খুন করেছিল।