ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার পর ১০ মার্চ থেকে নিখোঁজ এই সাংবাদিক।
এই মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা চকবাজার থানার এসআই মুন্সী আবদুল লোকমান শুক্রবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধানে পুলিশ মাঠে নেমেছে। আমরা তার ছেলেকে নিয়ে তার কর্মস্থলে গিয়েছি। সেখান থেকে ভিডিওফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে।
“ওই ভিডিওফুটেজে দেখা যায়, কাজল ১০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার পরও তার অফিসেই ছিলেন। পরে নিজের মোটরসাইকেলে চড়ে একাই সুস্থভাবে সেখান থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু মামলা তদন্তের জন্য তার পরিবার যে দুটো মোবাইল নম্বর দিয়েছে সেগুলো ৬টার আগেই একটি শাহবাগ ও অন্যটি পরীবাগ এলাকা থেকে বন্ধ হয়ে যায়।
“যদিও ভিডিওফুটেজে দেখা যায়, কাজল ওই সময় তার হাতিরপুলের অফিসেই ছিলেন। এই বিষয়টা আমার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে।”
এক সময়ের জাসদ ছাত্রলীগ নেতা কাজলের সন্ধান দাবিতে তার পুরনো রাজনৈতিক সহকর্মী, স্বজন ও সাংবাদিকদের আন্দোলনের মধ্যে গেল সপ্তাহে কাজলের একটি ভিডিওফুটেজ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ফাইল ছবি
ওই ফুটেজে কাজলকে একটি জায়গায় রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল রেখে পাশের কোথাও যেতে দেখা যায়। বেশ কিছুক্ষণ ফিরে এসে মোটরসাইকেল চালিয়ে যান তিনি। এরমধ্যে তার ওই মোটরসাইকেল ঘিরে কয়েকজনকে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়।
ভিডিও ফুটেজটি কাজল নিখোঁজ হওয়ার দিনের দাবি করে অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ফুটেজে ওই দিন বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিটে একজন, ৬টা ৪ মিনিটে একজন এবং ৬টা ৫ মিনিটে একজনকে দেখা গেছে। তিনজনই পৃথক ব্যক্তি। তারা মোটরসাইকেলটির আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিল এবং মোটরসাইকেল নিয়ে কিছু করছিল। তাদের প্রত্যেকের আচরণ সন্দেহজনক।
এই তিনজনকে শনাক্ত করা গেলে কাজল নিখোঁজ হওয়ার রহস্য বের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওই ফুটেজে কাজলের মোটরসাইকেলের পাশে যাদের দেখা গেছে তাদের বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান চালানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল লোকমান বলেন, “ওই ভিডিওতে আমরা তেমন কিছু পাইনি। সেখানে কাজলকে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি।”
কাজলের সন্ধানে ‘আন্তরিকভাবে’ কাজ করা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, তার সন্ধান পাওয়া যাবে।”
নিখোঁজ কাজলের মোটরসাইকেল ঘিরে কয়েকজনের আনাগোনা
তবে তদন্ত কর্মকর্তার এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না মামলার বাদী ও কাজলের ছেলে মনোরম পলক।
তিনি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমে পুলিশ বাবার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় কোনো মামলাই নিতে চায়নি। এখন তারা বলছে, তারা বাবার সন্ধানে কাজ করছে। কিন্তু আমাদের সেটা মনে হচ্ছে না।”
মনোরম পলক বলেন, “১৬ দিনেও বাবার সন্ধান না পেয়ে আমার মা দিশেহারা। আমরা ভীষণ অসহায় বোধ করছি। আমরা চাই, তিনি সুস্থভাবে আমাদের মাঝে ফিরে আসুন। আমরা প্রচণ্ড অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।”
দৈনিক সমকাল ও বণিক বার্তায় ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা কাজল ‘পক্ষকাল’ নামের একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনা করছিলেন।
তার নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন, তাতে ফেইসবুক ব্যবহারকারী আসামিদের তালিকায় প্রথমেই কাজলের নাম রয়েছে।
শিখরের দায়ের করা মামলায় মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী এবং সাংবাদিক আল আমিনের বিরুদ্ধে একই আইনে অভিযোগ আনা হয়।
যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা শাখার বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িতদের’ নিয়ে মানবজমিনে সংবাদ প্রকাশ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য হওয়ায় শিখর এ মামলা দায়ের করেন।
কাজল নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তার স্ত্রী চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। অনেক ঘোরাঘুরির পর আট দিনের মাথায় চকবাজার থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করে।
মামলায় ছেলে মনোরম পলক অভিযোগ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখালেখির কারণেই তার বাবাকে অপহরণ করা হয়েছে।