ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে কয়েকটি স্থানে রাস্তায় বের হওয়া মানুষকে ঘরে ফেরত পাঠাতে পুলিশ সদস্যদের চড়াও হতে দেখা গেছে। কান ধরে ওঠবস করানো, মৃদু লাঠিপেটার খবরও এসেছে সংবাদমাধ্যম।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের বাসায় এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুখে পড়েন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় নামা মানুষকে পুলিশের হয়রানি রোধে সরকারের কোনো ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “প্রথমত দেশ তো লকডাউন করা হয়নি। সুতরাং রাস্তায় অহেতুক ঘোরাফেরা না করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় যে কেউ প্রয়োজনে যেতেই পারেন। গেলেই তার হয়রানির সম্মুখিন হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক, এটি করার জন্য পুলিশকে বলা হয়নি।
“গতকালও পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে মাঠ পর্যায়ের সকলকে বলা হয়েছে প্রয়োজনে যে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেন। কিন্তু অপ্রয়োজনে যদি কেউ বের হয় তবে তাদেরকে বুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং কেউ ঘর থেকে বের হলেই হয়রানির করা ঠিক নয়। এ ব্যপারে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের কোনো পদক্ষেপে আছে কিনা জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনকে বলা হয়েছে দশ টাকায় চাল বিতরণের জন্য। সেটি সহসা শুরু হচ্ছে। এটি শহর অঞ্চলেও করা হবে যাতে এই করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক দুর্যোগের মধ্যে নিম্নআয়ের মানুষের সুবিধা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনকে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষকে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।”
করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দিনে হাসপাতাল, রাস্তা এবং তার গুলশানের বাড়িতে লোকজন জড়ো করে বিএনপি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
“আমরা দেখতে পেয়েছি, সমস্ত দেশের মানুষ যখন ঘরের মধ্যে অবস্থান করছে, এই বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য যে যার অবস্থানে রয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। তখন আমরা দেখতে পেলোম গত পরশুদিন খালেদা জিয়ার মুক্তিলাভের সময় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সামনে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত করেছে, গুলশানে তার বাড়ির সামনে হাজার হাজার লোকের জমায়েত হয়েছে, পথে হাজার হাজার লোকের জমায়েত হয়েছে।
“যেখানে মহান স্বাধীনতা দিবসের সমস্ত অনুষ্ঠানমালা, এমনকি জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে হাজার হাজার লোকজন জমায়েত করা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় ছাড়া অন্য কিছু নয়।”
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২৫ মাস কারাভোগের পর ‘মানবিক বিবেচনা’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। কারাভোগের এই সময়ের একবছর তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। গত বুধবার (২৫ মার্চ) মুক্তিলাভের পর এই হাসপাতাল থেকেই গুলশানের বাসায় ফেরেন বিএনপি প্রধান।
কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে জমায়েত না করার বিষয়ে বারবার হুঁশিয়ারির পরও বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় করলে পরিস্থিতি কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ে। পুলিশ ও বিএনপি মহাসচিবকে হ্যান্ডমাইকে বারবার নেতাকর্মীদের হাসপাতাল চত্বর থেকে সরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে নামিয়ে আনা হলে শত শত নেতা-কর্মীর ভিড় ডিঙিয়ে তাকে গাড়িতে পৌঁছে দিতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের।
ফেরার পথে রাস্তায় এবং গুলশানে তার বাসার কাছে সগকের দুই পাশেও বিএনপির কয়েকশ নেত-কর্মী জড়ো হয়েছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা এই সময়ে কোনো রাজনৈতিক বাদানুবাদ চাই না। আমরা আশা করব বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পাশে থাকব।”
সামরিক খাতে ব্যায়ের তুলনায় চিকিৎসার গবেষণায় ব্যয় কম হওয়াকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পৃথিবীতে মেডিকেল রিসার্চের জন্য সরকারি ব্যয় হচ্ছে প্রতিবছর ২.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। অর্থাৎ এই ২.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার মাত্র কয়েকটি সামরিক বিমানের মূল্যের সমান। যা মেডিকেল রিসার্চের জন্য অত্যন্ত সামান্য।”
যুদ্ধ প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে মেডিকেল রিসার্চ বাড়ানোর আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।