ক্যাটাগরি

দলবদ্ধ হয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা, করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে

ইলিশ অভয়াশ্রম কর্মসূচির আওতায় পদ্মা, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দুই মাস সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় জমায়েত এড়াতে সরকার সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দরিদ্র জেলেরা এ সব নিয়ম ভেঙেই বের হচ্ছেন জীবিকার তাগিদে।

জেলেরা বলছেন, তারা করোনা ভাইরাসের কথা জানলেও এ পরিস্থিতি মোবাবেলায় তারা কোনো নিরদেশনা পাননি। দেওয়া হয়নি কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম কিংবা দলবেঁধে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে মেঘনা নদীতীরে গিয়ে দেখা যায়- নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক জেলেই দলবদ্ধ হয়ে নৌকা নিয়ে মাছ শিকারে নামছে। একই সঙ্গে নদীর পাড়ের আড়তগুলোতে মাছ বিক্রির পাশাপাশি জেলেরা মেতে উঠছে আড্ডায়। এতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পাশাপাশি রক্ষা করা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে এসব জেলে ও তার তাদের পরিবারের সদস্যদের।  

নিষেধাজ্ঞা অমান্য মাছ কেন ধরছেন জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে আব্দুল কাদের বলেন, “পেটের দায়ে অনেক জেলে মাছ ধরছে। ”

প্রতিটি নৌকায় ৫/৭ জন জেলে দলবদ্ধ হয়ে নদীতে নামে বলে জানালেন রহমান নামের আরেক জেলে।

করোনাভাইরাসের বিষয়ে অবগত কিনা জানতে চাইলে জেলে অহিদ বেপারী বলেন, তারা করোনাভাইরাসের কথা শুনেছেন। এ ভাইরাস প্রতিরোধে এলাকায় মাইকিং ওহয়েছে। কিন্তু অভাব-অনটনে থাকা হতদরিদ্র জেলেদের রোগ-বালাই দূরীকরণে সরকারি-বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ কিছু দিয়ে সাহায্য করেনি।

জেলেদের মাঝে মাস্ক কিংবা সাবান বিতরণ করা হয়নি। এছাড়া জেলেদের দলবন্ধ হয়ে চলাফেরা কিংবা নদীতে নামার ব্যাপারে কেউ নিষেধ করেনি বলে জানান তিনি।

বিষয়টি জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকীর নজরে আনলে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলেরা যাতে নদীতে নামতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি জনান, ইলিশ অভয়াশ্রম কর্মসূচির আওতায় জাটকা সংরক্ষণকল্পে মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের জন্য চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় সকল ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।

জেলেদের অবাধ বিচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেদের নদীতে নামা ঠিক নয়। মহামারী করোনাভাইরাসের ব্যাপারে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। অচিরেই জেলে পল্লীগুলোতেও সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে।

লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান বলেন, “আমার এলাকার কোনো জেলে নদীতে মাছ ধরে না। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জেলেদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যাতে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা না দেয়, সে ব্যাপারেও তাদেরকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”

এছাড়া জেলেদের জন্য সরকারিভাবে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। প্রশাসন থেকে নির্দেশনা পেলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে ব্যক্তিগতভাবে জেলেদের সহযোগিতার জন্য কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান তিনি।