ক্যাটাগরি

আমার নাম আগে এলে আমিও টিকা নেব: জাফরুল্লাহ

তবে মানুষের ‘আস্থা অর্জনের জন্য’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই টিকা
নেওয়ার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মলনে ডা. জাফরুল্লাহ
বলেন, “ভ্যাকসিনের বিষয়টি সোজা-সরলভাবে জাতির কাছে তুলে ধরতে চাই। ভ্যাকনিস নিয়ে ভয়
পাওয়ার কোনো কারণ নাই।”

সব ওষুধেরই যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, সে কথা তুলে ধরে তিনি
বলেন, “আমাকে যদি বলে… যদি আমার নাম আগে আসে, আমি (টিকা) নিয়ে নেব। তবে আমি চাই যে
আমার প্রধানমন্ত্রী আগে নেবেন।”

এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, ভারত থেকে উপহারের ২০ লাখ ডোজ
টিকা এসেছে, এটি একটি ‘সুখবর’। কিন্তু ভারতে বহু মানুষ টিকা নিতে ‘অস্বীকার করছে’,
যা, তার ভাষায় একটি ‘দুঃসংবাদ’।

“আমরা আশা করি, সবাই ভ্যাকসিন পাবেন। তবে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য আমাদের
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথমে টেলিভিশনে সরাসরি ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
সবার আগে ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করবেন।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
ভ্যাকসিন নিয়ে সবাইকে আহ্বান করতে হবে যে, ‘আপনারা নেন’। উনার প্রতি আমার আস্থা আছে,
উনি আগে নেবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও
ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, “এখন যে ভ্যাকসিন জনগণকে দেওয়া হচ্ছে সেগুলোকে
বলা হয় ফার্স্ট জেনারেশন ভ্যাকসিন। বৈজ্ঞানিকদের ভাষায় একে ভ্যাকসিনের ফোর্থ
ট্রায়ালও বলা হয়। হাজার হাজার মানুষকে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আবার বিশ্লেষণ করা
হবে। তারপর সেকেন্ড জেনারেশন ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।”

বাংলাদেশে ইপিআইয়ের আওতায় শিশুদের যেসব টিকা দেওয়া হয়, সেগুলো ১০
থেকে ২০ বছরের পুরনো হওয়ায় ‘সেরা ভ্যাকসিন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বলে জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে সবাইকে ‘ইমোশনাল’ না হওয়ার আহ্বান
জানিয়ে অধ্যাপক নজরুল বলেন, “ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার চুরি করার জন্য উঠে-পরে লেগেছে,
সেটা ঠিক না। সরকার চেষ্টা করছে ভালোভাবে এর প্রয়োগ যেন হয়।”

ডা. জাফরুল্লাহ তার বক্তব্যে করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিসৎসায় সরাসরি জড়িত
স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য মহামারীর মধ্যে সম্মুখভাগে
কাজ করছেন, তাদের সবার আগে টিকা দেওয়ার আহ্বান জানান।

কৃষক-শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষও যেন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পায়, তাও তিনি
নিশ্চিত করতে বলেন।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন কর্মসূচি শেষ না করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়
টিকা বিক্রির বিপক্ষে মত দিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “এর ফলে সরকারি ভ্যাকসিন চুরি হয়ে বাজারে
বিক্রি হবে। ভ্যাকসিন নকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। দেশে দীর্ঘদিন দরে মুরগির
ভ্যাকসিন তৈরি হয়, তখন হয়তো কিছু অসাধু চক্র মুরগির ভ্যাকসিন করোনা ভ্যাকসিন হিসেবে
চালিয়ে দিতে পারে।”

যেসব ভ্যাকসিন দেশে আসছে, নিয়ম মাফিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সেগুলো
নিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতেও সরকারকে পরামর্শ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই ট্রাস্টি।

তিনি বলেন, “এসব কাজে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, গবেষকদের যুক্ত করতে হবে।
কোনো আমলাকে দিয়ে এসব কাজ করানো যাবে না।”

আর দরপত্র ছাড়া ‘নির্দিষ্ট কোনো বেসরকারি কোম্পানিকে’ দিয়ে ভ্যাকসিন আনা
হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন জাফরুল্লাহ।

অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা.
জাকির হোসেন, বিএসএমএমইউর ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাজেদুর
রহমান, গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার সংবাদ
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।