ক্যাটাগরি

পিতার প্রাপ্তিতে পুত্র আরিকের যত কথা

বাবা বা মায়ের যেকোনো অর্জনে সন্তানের মন যেমন ভরে যায় তেমনই চোখের কোণে জমে জল। মন হয় আর্দ্র।

আরিক আনাম খানের অনুভূতিটা তেমনই পিতা তারিক আনাম খানের অর্জনে। অর্জনটাও দেশসেরা।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন এই অভিনেতা। তার সন্তান, আরিক নিজেও অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালকও বটে। তার মুখেই শোনা হল বাবার প্রাপ্তিতে নিজের আনন্দ।

কন্ঠ আর্দ্র হলেও, শব্দে ছিল তার জ্বলজ্বলে সন্তুষ্টির আভাস। আরিক, নিজের কথা প্রকাশ করলেন গ্লিটজের পাঠকদের জন্য।

প্রথমেই বললেন, “বাবাকে খবরটা আমিই দেই।”

কীভাবে? বাতাসে সরব আভাস ছিল যে এবারের জাতীয় পুরস্কারের তালিকাতে তারিক আনাম খান আছেন নিশ্চিত। কিন্তু যথার্থতা না জেনে কি আর আনন্দ হয়।

প্রজ্ঞাপন জারী হতেই পুত্র আরিক জেনে গেলেন পিতার প্রাপ্তি। আর নিজেই ফোন করে জানালেন বাবাকে। সে এক অন্যরকম অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশের মতন নয় বলে জানান তিনি।

বলেন, “যেকোনো কাছের মানুষের প্রাপ্তিই আনন্দের। আর যদি হয় পরিবারের কেউ। তাহলে তো কথাই নেই। সন্তান বলেই হয়ত গর্বো বেশি।”

বিশেষ করে ২০২০ সালের ‘বিষময়’ পরিস্থিতির পর এই প্রাপ্তি আসলে একপ্রকার স্বস্তি হয়ে ওঠে তাদের পরিবারে।

ছোটবেলা থেকেই ঘরে অভিনয়ের পরিবেশ। বাবা আরিক আনাম খান- মা নিমা রহমান। ছেলেবেলা থেকেই বাবার অভিনয়ের দারুণ ভক্ত আরিক। আবার নিজে অভিনেতা এবং পরিচালক বলে এটাও জানেন কি পরিমাণ নিষ্ঠার সঙ্গে বাবা, অভিনেতা তারিক আনাম কাজ করেন।

একজন সন্তান হিসেবে- পরিচালক হিসেবে এই প্রাপ্তিকে ‘ডিজার্ভিং’ বলে আখ্যায়িত করেন আরিক আনাম খান।

কিন্তু বাবার এই বর্ণাধ্য জীবন- ক্যারিয়ার পুত্রের জীবনে প্রভাব কেমন ফেলে সে প্রশ্নেও আবেগি উত্তর দেন আরিক।

বলেন, “এই প্রশ্নটি আসলে অনেক মধুর প্রশ্ন। একই দিক থেকে একজন গুণী শিল্পীর সন্তান হওয়া চাপ আবার আশীর্বাদও। আশীর্বাদ কারণ, ছোটবেলা থেকেই পরিবারের কাছ থেকে শিল্পের চর্চা করার যে ‘চর্চা’ এটা আমাদের মজ্জাগত অভ্যাস।”

গুণী মানুষের কাছে থাকলেও অনেক কিছু শেখা যায়। অবশ্যই সন্তান হয়ে তার সঙ্গ পাওয়া একটি আশীর্বাদ ও ভাগ্যের ব্যাপার।

চাপের ব্যাপারে বললেন আরিক অন্যভাবে।

“চাপটাই মাঝে মাঝে বেশি। এই চাপ মা-বাবার দিক থেকে না। আশপাশের অনেকেই হয়ত বলবে, দুই দুইবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া বাবার ছেলে তুমি কি করেছো- কিন্তু এটাতে এখন আমি আর চাপ মনে করি না।”

উল্লেখ্য, তারিক আনাম খানের দ্বিতীয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন এটি। ‘আবার বসন্ত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে তারিক আনাম খান পুরস্কার পাওয়ার আগে ‘দেশা: দ্য লিডার’ (২০১৬) সিনেমার জন্য সেরা খল অভিনেতা হিসেবে প্রথমবার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন এ অভিনেতা।

কথা প্রসঙ্গে আরিক যোগ করেন, “যাদের বাবা-মা প্রতিষ্ঠিত তাদের জন্য এমন কথা শোনা কিন্তু স্বাভাবিক ব্যাপার। চাপটা মনে হত যখন বয়স একটু কম ছিল। এখন নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে আমি জেনেছি এটি কোনো চাপ নয়।”

তারকার সন্তান হলে প্রথম কাজ থেকেই আশার পরিমাণ বেশি থাকে বলেই হয়ত এমন হয় বলে মনে করেন আরিক।

বলেন, “একজন নতুন ছেলে বা মেয়ে যখন কাজ করে- তখন কিন্তু ‘ওয়াও ফ্যাক্টর’টা অনেক দ্রুত আসে। কিন্তু আমি যখন কাজ করবো- তখন আসবে ‘ও তারিক আনামের ছেলে – দেখি কী করে’- এমন ব্যাপার। তাই খুব একটা এখন ভাবি না। মানুষের আশা থাকবেই। নিজের কাজ করে যেতে হবে।”

আবার বাবার প্রসঙ্গে ফিরে এলেন বাবার প্রশংসা করেই। এখনও বাবার করিৎকর্মা বিষয়টি তিনি ভিষণ উপভোগ করেন। বাবার ব্যস্ততা রীতিমত প্রশংসা করার মতো বলে তিনি মনে করেন।

রবার্ট ডি নিরো- আলপাচিনোর কথা উল্লেখ করেও তিনি বলেন, “বয়স আসলে শিল্পীর জন্য কোনো বিষয় না।”

পরিণত বয়স মানেও হয়ত আরও পরিণত কাজ বলে তিনি মনে করেন। একারণেই বাবার ব্যস্ততা বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন।

শুধু বাবা তারিক আনাম খান নয়, আরিক আনাম খান উল্লেখ করেন আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূরের মতো শিল্পীদের কথাও।

এদের সবাই শুধু শিল্পী নন, তারা একেকজন এক একটি প্রতিষ্ঠানও বটে। আলী যাকেরের চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি বলে তিনি মনে করেন।

তাদের অবদান কোনো ভাবেই তুলনীয় নয়।

তাই যতটা সম্ভব এই কিংবদন্তীদের কাছ থেকে শেখা ও নেওয়ার অবকাশ এখনও শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করেন আরিক আনাম খান।

পিতা রূপে এমন মানুষকে সান্নিধ্যে পেয়ে পুত্রের চোখ প্রায়ই আর্দ্র হবে এমনটাই স্বাভাবিক। আর তার অর্জনের মনে ভালোবাসার সমুদ্রে গর্জনে উঠবে ঢেউ, আর ঠোঁটের কোণায় থাকবে তৃপ্তির হাসি- এটাও বলে দিতে হয়না।

গ্লিটজের সঙ্গে ছোট্ট আলাপে আরিক বলেন, “শিল্পী-অভিনেতা বাবা কাজ করতে থাকুক অবিরাম- পুত্র হিসেবে এটাই আমার চাওয়া ও পরম পাওয়া।”