সিটি নির্বাচন নিয়ে
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন,
“নির্বাচন আসলে একটা উত্তাপ থাকে। উত্তাপ হল নির্বাচনের প্রাণ। তবে এই উত্তাপটা যেন
আত্মঘাতী না হয়। উত্তাপ যেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত না করে।
সকলের কাছে করজোড়ে এ আহ্বান জানাব।
“এখন মিছিল মিটিং ছাড়াও
ফেইসবুক পেজের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারেন। কারও মুখ কারও দেখারও দরকার নেই। নির্বাচনের
পর চট্টগ্রামবাসী যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে। টুকটাক যা হওয়ার হয়ে গেছে, আর যেন
না হয়। সবাই প্রশাসনকে সহায়তা করুন।”
চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক
উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সুজন বলেন, “চট্টগ্রাম
এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের অপেক্ষায় আছে। এই অবস্থায় আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শেখ
হাসিনা যাকে প্রার্থী দিয়েছেন তাকেই জিতিয়ে আনতে হবে চট্টগ্রামের স্বার্থে। এই নির্বাচনে
বিএনপির প্রার্থী জিতলে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তবে বিএনপির যেটা সুবিধা
হচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পেরেছে।
“আমার মনে হচ্ছে, বিএনপিরও
যারা সচেতন আছে- চট্টগ্রামের স্বার্থে, চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে আগামী নির্বাচনে শেখ
হাসিনার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। দলের নেতাকর্মীদের অনুরোধ করব
কোথাও যেন আর সংঘাত সংঘর্ষে না জড়ান। ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে জয় করুন, শক্তি দিয়ে নয়।
ভালোবাসার জয় চিরস্থায়ী হয়।”
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি
সুজন বলেন, “বিবেকের তাড়নায় এই বার্তা দিতে এসেছি। যদি দোষ হয়, ক্ষমা চাই। শান্তিপূর্ণ
সুষ্ঠুভাবে যেন ভোট হয়।”
মেয়র পদে দলের মনোনয়ন
চেয়েও না পাওয়া সুজন করোনভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)
নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর প্রশাসকের দায়িত্ব পান। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি প্রশাসক হিসেবে
তার ছয় মাসের মেয়াদ শেষ হবে।
ভবিষ্যতের মেয়রের প্রতি
তিনি বলেন, “যেই নির্বাচিত হন, একটাই অনুরোধ, দল থেকে নির্বাচিত হলেও সব নগরবাসীর দায়িত্ব
যেন নেন। আর পাবলিক প্রপার্টিকে যেন নিজের সম্পত্তি মনে না করেন। সকল মতের মানুষকে
নিয়ে এই শহরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।”
প্রশাসক পদে থাকায়
এবার নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারা তার জীবনের ‘কঠিন সময়’ বলে
উল্লেখ করেন সুজন।
“ছাত্রজীবনে সেই ১৯৭০
থেকে সব নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ছিলাম। পরে স্থানীয় হোক, জাতীয় হোক মনোনয়ন চেয়েছি। না
পেলেও ঘরে বসে থাকিনি। দলের সিদ্ধান্তই মুখ্য। যারা রাজনীতিতে বিশ্বাস করি তাদের দলের
সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে।
“এবার প্রথম আমার জীবনে
কঠিন সময়। কারণ দায়িত্বে থাকায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছি না। আমি একটা খাঁচার
পাখির মত, যেন বন্দিশালা। দেখছি সবাই মিছিল করছে মিটিং করছে …। ভিতরের যে ছটফটানিটা কাউকে বলতে
পারছি না। করোনা আক্রান্ত এবং দলের নির্বাচনে ইচ্ছা থাকলেও সে প্রক্রিয়াতে সরাসরি কাজ
করতে পারছি না। একজন রাজনৈতিক কর্মীর এ কষ্ট যারা রাজনীতি করেনি তারা ছাড়া কেউ বুঝতে
পারবে না।”
চট্টগ্রাম ইতিহাসের
এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সম্মুখে এসে আজ দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে সুজন বলেন, “আগামী পাঁচ-দশ
বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ যোগাযোগ কেন্দ্র। এটাকে উপলব্ধি
করতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করছেন। মাতারবাড়ীতে গভীর
সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে আলাদা জগৎ করে উঠছে। মিরসরাই ইকোনমিক জোনে সারা পৃথিবীর
বিনিয়োগকারীরা ছুটে আসছে।
“মহিউদ্দিন চৌধুরীর
প্রথম নির্বাচনে ২৮ দফায় ছিল পতেঙ্গা থেকে ফেনী হাইওয়ে পর্যন্ত বাইপাস রোড করতে হবে।
আজ আউটার রিং রোড হয়েছে। নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সড়ক মিরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত
যাবে। এরপরই ফেনী হাইওয়ে। কর্ণফুলীর টানেলের কথা মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন। রাজনৈতিক
স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন তিনি।”
প্রশাসক হিসেবে নিজের
কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সুজন বলেন, “ছয় মাসের মধ্যে দেড় মাসের মতই ছুটি ছিল। এর মধ্যে যতটুকু
পেরেছি আন্তরিকতার সাথে দায়িত্বটাকে পালনের চেষ্টা করেছি। সাধ্যে যা কুলায়, অভিজ্ঞতা,
যোগ্যতা, মেধা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। যে স্বপ্নের চট্টগ্রাম হৃদয়ে লালন করেছি তা
গড়ে তোলার জন্য।
“চট্টগ্রামবাসী ও মিডিয়ার
ভাইয়েরা অফুরন্ত সমর্থন আমাকে দিয়েছেন। মানুষ একমাস পরেই বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু
কেউ তা করেনি। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। যারা ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন তা সমাধানের চেষ্টা
করেছি। সব সাফল্য চট্টগ্রামবাসীর।”
তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ
থেকে সেরে উঠলেও শারীরিক দুর্বলতার কথা জানিয়ে সভায় কোনো প্রশ্ন নেননি তিনি।
বৃহ্স্পতিবার তার কোভিড-১৯
নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে।