বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, দলে অলির বিরোধীপক্ষ সোমবার তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। অবশ্য প্রতিবেশী ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে রোববার ওই বহিষ্কারাদেশ আসে বলে জানানো হয়।
অলির বিরোধী পক্ষের জ্যেষ্ঠ নেতা পম্ফা ভূসাল রয়টার্সকে বলেন, ‘‘তিনি দলের নিয়ম-কানুন মানছেন না এবং দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাজ করছেন বিধায় আমরা অলিকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।”
এদিকে অলির সহযোগী সুরিয়া থাপা বলেন, ‘‘এভাবে দল থেকে বহিষ্কারের কোনো রাজনৈতিক মূল্য নেই। তিনি আইনি ও রাজনৈতিকভাবে জয় পাওয়ার বিষয়ে দরুণ আত্মবিশ্বাসী।”
তবে অলি দল থেকে বহিষ্কার হলেও এখনও তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন।
নিজ দলের মধ্যেই সমর্থন হারানো অলি গত ২০ ডিসেম্বর হঠাৎ করে রাষ্ট্রপতির কাছে নেপালের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় অনুরোধ জানান। অলির অনুরোধে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগামী ৩০ এপ্রিল ও ১০ মে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন। ২০২২ সালে নেপালের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
দলের সঙ্গে মতবিরোধ আগেই ছিল। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে সেই বিরোধ চরমে উঠে। এনসিপি কার্যত দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর এক পক্ষে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অলি। অন্যপক্ষে আছেন পুষ্প কমল দহল, ওরফে প্রচণ্ড। তার নেতৃত্বাধীন এনসিপি পক্ষই সদ্য অলিকে ক্ষমতাসীন পার্টি থেকে বহিষ্কার করল।
এর আগে গত ডিসেম্বরেই অলিকে এনসিপি-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়েছিল প্রচণ্ডর পক্ষ। এছাড়া, তার বিরোধী শিবির গত শুক্রবারই অলির সদস্যপদও খারিজ করার হুমকি দিয়েছিল বলে জানায় কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
খবরে বলা হয়, দলে অলির বিরোধী শিবিরের মুখপাত্র নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠ রোববার অলির সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানান।
ওদিকে, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই নেপালে প্রধানমন্ত্রী অলির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে।
সোমবারও একদল বিক্ষোভকারী অলির বাসভবনের কাছে বিক্ষোভ করেন বলে জানায় রয়টার্স। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে জলকামান ব্যবহার করে এবং বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এতে কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, তারা বিক্ষোভকারীদের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন প্রাঙ্গনে প্রবেশে বাধা দিতে ‘মৃদু শক্তি প্রয়োগ’ করেছে।
এখন কী হবে?
নিজ দল থেকে বহিষ্কার হওয়া অলি হয়ত এখন কমিউনিস্ট পার্টি নেপাল (সমন্বিত মার্কসবাদী ও লেনিনবাদী) পুনঃগঠনের মাধ্যমে একক দল নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নামবেন। ২০১৮ সালে অলির সিপিএন-ইউএমএল ও পুষ্প কমল দহলের সিপিএন-মাওবাদী একীভূত হয়ে গঠিত হয় এনসিপি।
এমন কথাও শোনা যাচ্ছে, অলি ক্ষমতায় থাকতে বিরোধী নেপালি কংগ্রেস এবং অন্যান্য দলের সমর্থন আদায়েরও চেষ্টা করবেন।
বিরোধী দলগুলোর ভাবনা
নেপালের প্রধান বিরোধীদল নেপালি কংগ্রেস আশা করছে আগাম নির্বাচনে তারা আরও অধিক আসনে জিতে পার্লামেন্টে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে। তবে তাদের আশঙ্কা, যেভাবে অলির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নেপালে সড়কে বিক্ষোভ হচ্ছে এবং এপ্রিল ও মে মাসের শুরুতে বৃষ্টির মৌসুমের কারণে নির্বাচনের তারিখ আরও পিছিয়ে যেতে পারে।
নেপালি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখর কৌরালা বলেন, ‘‘পূর্বঘোষিত সময়ে নির্বাচন হওয়া নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।”
নেপালের সেনাবাহিনীর অবস্থান
নেপালের বর্তমান রাজনৈতিক পেক্ষাপটে নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে ইঙ্গিত দিয়েছে, যদি প্রধানমন্ত্রী অলি দেশের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্য চায়, তবে কতদিন সেনাবাহিনী তাকে সাহায্য করবে সেটা নিশ্চিত নয়।
সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা
নেপালের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে বেশ কয়েকটি পিটিশন দায়ের হয়েছে এবং সেগুলোর শুনানি চলছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে শেষ পর্যন্ত কী রায় আসে তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।