২০১৯ সালে চীনে প্রথম প্রাদুর্ভব ঘটা করোনাভাইরাস যখন পরের বছর মার্চ মাসে সন্তপর্ণে যুক্তরাজ্যে ছড়িয়েছিল, জনসন তখন বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলেছিলেন, এ ভাইরাসকে বিদায় করা সম্ভব কয়েক সপ্তাহেই।
কিন্তু পরে করোনাভাইরাসে ৯৭,৯৩৯ জনের মৃত্যু নিয়ে যুক্তরাজ্য বিশ্বে পঞ্চম অবস্থানে উঠে এসেছে।
দেশটিতে মৃতের এই সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেসামরিক নাগরিক নিহতের সংখ্যার চেয়ে বেশি, এমনকী যুক্তরাজ্যে ১৯৪০-৪১ সালে জার্মানির বোমায় নিহতের সংখ্যারও দ্বিগুণ; যদিও সে সময় মোট জনসংখ্যা এখনকার চেয়ে কম ছিল।
কোভিডে মৃত্যুর এই মিছিলে মানুষজন কেবল শোকেই মুষড়ে পড়েনি, ক্ষোভেও জ্বলে উঠেছে।
গতবছর মার্চের শেষদিকে সরকার যখন কেবল লকডাউনের পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে, তখনই কোভিড সংক্রমণে বাবা হারানোর দুঃখ ঝরে পড়েছে ছেলে জেমি ব্রাউনের কথায়।
দুঃখ কিভাবে ক্ষোভে রূপ নিল তার ব্যাখ্যায় ব্রাউন বলেন, কোভিড মোকাবেলার ব্যবস্থা নিতে নিতেই যখন বাড়ছে মৃত্যু, আর ঠিক তখনই মন্ত্রীদেরকে নিজেদের পিঠ চাপড়ে জনগণের সামনে তাদের ভাল কাজের খতিয়ান দিতে দেখে দ্রুতই ব্যক্তিগত ক্ষোভ পরিণত হয়েছে জনরোষে।
যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদও বলছেন, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী জনসন খুবই ধীরগতিতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সরকারের কৌশল নেওয়া এবং তা বাস্তবায়নেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
সংকট সামাল দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আহ্বান জনসন প্রতিহত করেছেন। আর মন্ত্রীরা বলেছেন, তারা সবকিছু ঠিকঠাকমত না পাওয়ার পরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং বিশ্বের সবচেয়ে ভাল টিকা কর্মসূচির মধ্যেই আছেন।
যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ ফল আসার ২৮ দিনের মধ্যে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ২৪ জানুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৯৭,৩৯৩ জনে। গত সাত দিনে দৈনিক গড়ে মারা গেছে ১ হাজারের বেশি মানুষ।
বেশ কয়েকটি তদন্তের পর রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ব্রিটিশ সরকারের কয়েকটি ভুল। আর তা হচ্ছে, সংক্রমণ শনাক্ত করতে ধরিগতি, লকডাউন দিতে দেরি এবং হাসপাতালে থাকা রোগীদেরকে সেখান থেকে আগেভাগেই ছাড় দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া।
মার্চে ব্রিটিশ সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্রথমে অনুমিত মৃত্যু ২০ হাজারে রাখার কথা বললেও পরে উপদেষ্টারা সম্ভাব্য মৃত্যুর সংখ্যাটা কেবলই বাড়িয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের কারও কারও মতে, সরকার খুব হেলাফেলা করে সংকট সামাল দিচ্ছে। এটা ‘ক্ষমার অযোগ্য’।
দেশটিতে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর প্রায় ১১ মাস পর জুনের মাঝামাঝি সময়ের দিকে ইংল্যান্ডে মাস্ক পরা বা মুখ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার।
এই সময়ের মধ্যে দেশটির অনেক হাসপাতালেই তৈরি হয়েছে রণক্ষেত্রের মতো অবস্থা। রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে চিকিৎসক, নার্সদেরকে। সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করে যাওয়া চিকিৎসা কর্মীরা পড়েছে জীবনসংকটে।
মিলটন কিনেস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার এন্ড একিউট মেডিসিনের এক কনসালটেন্ট বলেন, একের পর এক মানুষ মরতে দেখা হাসপাতাল স্টাফদের কাছে ‘সত্যিই হৃদয়বিদারক’।
“(রোগীদের) অবস্থার খুব দ্রুতই অবনতি হয়। এই দেখা যায়, তারা কথা বলছে, তাদেরকে বেশ ভালও দেখাচ্ছে, আবার ২০ মিনিট পরই দেখা যায় তারা আর কথা বলছে না, আরও ২০ মিনিট পর তারা আর বেঁচেই থাকে না। এটা সহ্য করা প্রত্যেকের জন্যই খুব কঠিন একটি ব্যাপার।”