ক্যাটাগরি

কৃষক বিক্ষোভ সামলাতে হিমশিম পুলিশ, দিল্লিতে বন্ধ ইন্টারনেট-মেট্রো

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দিল্লির বহু জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা এবং মেট্রো স্টেশন বন্ধ করা হয়েছে। 

দিল্লি-এনসিআর এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা মধ্যরাত পর্যন্ত ছিন্ন থাকবে। যার প্রভাব পড়বে সিংঘু, গাজিপুর, টিকরি সীমান্ত, মুবারকা চক, নাংলোইয়ে।

ট্রাক্টর মিছিল মঙ্গলবার সকাল থেকেই ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। সেখান থেকে তা পুরোপুরি অশান্ত চেহারা নেয়। রাজধানীর একাধিক জায়গায় প্রতিবাদী কৃষক এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

এর মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে‌ অন্তত ২০টি ট্রাক্টর ঢুকে পড়ে লাল কেল্লা চত্বরে। সেখানে জাতীয় পতাকার পাশেই আন্দোলনকারীরা একটি খুঁটিতে পুঁতে দেয় আন্দোলনের নিশান— কৃষক সংগঠনের একটি পতাকা। তখনই পুলিশের লাঠিচার্জে দুপক্ষে শুরু হয় সংঘর্ষ।

এক কৃষকের মৃত্যু:

কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে এক কৃষক মারা গেছেন। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলাকালে ট্র্যাক্টরটি উল্টে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। ট্রাক্টরে সেই গুলি লাগে। আর তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক্টর উল্টে তার নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ওই কৃষকের।

ওদিকে, রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, লাল কেল্লায় সংঘর্ষে অন্তত পাঁচ পুলিশ এবং তিন বিক্ষোভকারী আহতও হয়েছেন।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। লালকেল্লা থেকে কৃষকদের সরানোর পর, নতুন করে ট্রাক্টরে আরও প্রতিবাদী কৃষকরা এসে ভিড় করেন। বক্ষোভ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে।

‘মোদী সরকারকে বার্তা দিয়েছি’

এক আন্দোলনকারী লালকেল্লার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “মোদী সরকারকে বার্তা দিতে এসেছিলাম। কাজ শেষ। এখন চলে যাচ্ছি।”

আরেকজন বলেন, “‌তারা আটকানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। আমরা লালকেল্লায় পৌঁছেছিই। এভাবেই লক্ষ্যে পৌঁছব, কৃষি আইন বাতিল করিয়ে ছাড়ব।”‌ ‌ অন্য আরেকজন বলেন, “মোদী এখন আমাদের কথা ‍শুনবেন, তাকে এখন আমাদের কথা শুনতে হবে।”

কেবল লালকেল্লাই নয়, সকালে আইটিও মোড়ে পুলিশ-জনতার যে সংঘর্ষ হয়েছিল দুপুরের দিকে সেই একই পরিস্থিতি দেখা দেয় নাঙ্গলোই এলাকায়। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে কৃষকদের সংঘর্ষ হয়। একাধিক টাক্টর দাঁড় করিয়ে রেখে পুলিশ লাঠিচার্জ করে খালি করে এলাকা।

কিন্তু সবখানেই নিরাপত্তকর্মীদের তুলনায় বিক্ষোভকারীর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা দূরূহ হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে, কৃষক আন্দোলনের সমর্থক মুখ্যমন্ত্রীদেরকে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ করার কথা বলতে হয়েছে।

দুপুরের পর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিশেষ বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়, নিরাপত্তা রক্ষা করা এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ করার পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয় দিল্লি মেট্রোর বেশ কয়েকটি স্টেশনও।

‘সহিংসতা দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না’‌

কৃষকদের শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী টুইটারে লিখেছেন, “সহিংসতা কখনও সমস্যার সমাধান করতে পারে না, চোট যেই পান, ক্ষতি গোটা দেশের।”

দেশের মঙ্গলের কথা ভেবে কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে কেন্দ্রকেও আহ্বান জানান তিনি।

গত ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লি সীমান্তে প্রতিবাদ করছেন কৃষকরা। তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি তাদের। প্রথম থেকেই তাদের পাশে রয়েছে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলো। কিন্তু মঙ্গলবার ভারতের প্রজতন্ত্র দিবসের সহিংসতাকে সমর্থন জানালেন না রাহুল গান্ধী।

এদিন কৃষকদেরকে ট্রাক্টর মিছিলের জন্য দিল্লি পুলিশ শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিলেও তা মানেননি কৃষকরা।

তারা ব্যারিকেড ভেঙে দিল্লিতে ঢুকে পড়েছেন, কোথাও পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছেন; কোথাও পুলিশের বাস ভাঙচুর করেছেন। আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চাও এসবের নিন্দা করেই বিবৃতি দিয়েছে।

‘‌সমাজবিরোধীরা বিক্ষোভস্থলে ঢুকেছে’

ট্রাক্টর মিছিলে বিশৃঙ্খলা নিয়ে কৃষক সংগঠনের দাবি, “বিক্ষোভস্থলে সমাজবিরোধীরা ঢুকে পড়েছে।”

এক বিবৃতিতে সংযুক্ত কিসান মোর্চা ‌কৃষকদেরকে প্রজাতন্ত্র দিবসের মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনাকে ধিক্কারও জানিয়ে বলেছে, “সহিংসতা যারা উস্কে দিয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আমাদের অনেক চেষ্টার পরও কিছু সংগঠন এবং ব্যক্তি নির্ধারিত পথের বাইরে মিছিল করে নিন্দনীয় কাজ করেছে। আমরা বরাবরই বলে এসেছি, শান্তিই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। সহিংসতা আন্দোলনেরই ক্ষতি করবে।”