এই সবকিছুই হয়েছে তার জন্য বিশেষ এক দিনে। মাহমুদউল্লাহ ও জান্নাতুল কাউসার মিষ্টির দশম বিয়ে বার্ষিকী! লাজুক হাসিতে মাহমুদউল্লাহ বললেন, ইনিংস শেষে মনটা ভালো লাগায় ভরে গিয়েছিল তার, “ইনিংসটা খেলে যখন ড্রেসিং রুমে ফিরলাম, খুব ভালো লাগছিল। দলকে ভালো স্কোর এনে দেওয়ার তৃপ্তি ছিল। পাশাপাশি মনে হচ্ছিল, নিজেদের এরকম একটা দিনে কিছু একটা করা হলো।”
এই ‘কিছু একটা’ মানে দারুণ কিছুই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে সম্ভাব্য মাঝারি স্কোর থেকে বাংলাদেশ তিনশর কাছে যেতে পারে মাহমুদউল্লাহর শেষের ঝড়ের সৌজন্যে। ৪৩ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি ছয় নম্বরে নেমে। শেষ ৪ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৫২ রান!
এমনিতে পারিবারিক ব্যাপারগুলোতে খুব একটা প্রকাশ্য নন মাহমুদউল্লাহ। একান্ত নিজেদের মতো থাকতে ও সেভাবে রাখতেই পছন্দ করেন। এবার একটু ব্যতিক্রম। বিয়ে বার্ষিকীতে নিজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় আবেগঘন লেখায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্ত্রীকে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় লাজুক কণ্ঠে এই ইনিংসটিকে বললেন স্ত্রীর জন্য উপহার।
“আপনারা বরাবরই জানেন, পারিবারিক ব্যাপারগুলি আমি প্রাইভেট রাখতেই পছন্দ করি। এবার একটু মনে হলো, ফেইসবুকে লিখলাম। পরে ওকে বললাম, ইনিংসটি ওর জন্য উপহার। ও তো খুব খুশি…এরকম উপহার পেলে ভালো লাগারই কথা!”
ব্যাট হাতে নামার সময় অবশ্য বার্ষিকী বা উপহার, এসব কিছু ভাবনায়ও ছিল না মাহমুদউল্লাহর। সিরিজের আগের দুই ম্যাচে তার করার ছিল সামান্যই। প্রথম ম্যাচে একদম শেষ সময়ে নেমে ৯ রানে অপরাজিত। পরের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামারই সুযোগ হয়নি। শেষ ওয়ানডেতে যখন উইকেটে গেলেন, বাকি তখন ১৩.২ ওভার। তার চাওয়া ছিল, এই সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার।
“এই সিরিজের আগে আমি খুব ভালো টাচে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে শেষটা ভালো করেছিলাম। এরপর নেটে খুব ভালো হচ্ছিল ব্যাটিং। প্র্যাকটিস ম্যাচেও রান পেয়েছি। সব মিলিয়ে বিল্ড আপ ভালো ছিল বলে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। প্রথম দুই ম্যাচে সুযোগ হয়নি সেভাবে। দল ভালোভাবে জিতেছে, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।”
“কালকে নামার সময় আমি খুব গভীর কিছু বা আগে-পরের অনেক কিছু ভাবিনি। শুধু ভেবেছি, শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে ভালো স্কোরে নিতে হবে। তামিম-সাকিব-মুশফিকরা ভালো খেলায় আমার কাজ সহজ হয়েছিল। আমি গিয়েও শুরুতে স্ট্রাইক রোটেট করতে পারায় সেট হতে পেরেছি। সব মিলিয়ে যা চেয়েছি, পেরেছি।”
শুরুতে এক-দুই করেই রান বাড়ান মাহমুদউল্লাহ। ৪৪ ওভারের পর থেকে উত্তাল হয় তার ব্যাট। ২১ বলে আসে তার পরের ৪৪ রান।
মাহমুদউল্লাহ জানালেন, শেষের দিকের ব্যাটিং নিয়ে আলাদা করে কাজ করেছিলেন তিনি সিরিজ শুরুর আগে।
“রেগুলার প্র্যাকটিস তো ছিলই। যেহেতু ৬ নম্বরে ব্যাট করতে হবে, পাশাপাশি তাই ডেথ হিটিং নিয়ে কয়েকটি সেশন করেছিলাম। কালকে তা কাজে লেগেছে।”
টেস্ট দলে মাহমুদউল্লাহ নেই গত বছরের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট থেকেই। এই সিরিজে টি-টোয়েন্টিও নেই। আপাতত তাই তার কিছুদিনের ছুটি। সব ঠিক থাকলে মার্চে নিউ জিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনিই। সেই দল নিয়ে ভাবনা, প্রস্তুতি, এই বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে ও দল গুছিয়ে নেওয়া, এসব চলবে সামনে।
ভাবনার অবকাশ আছে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ভবিষ্যতের জন্যও। এমনিতে পারফরম্যান্স নিয়ে আপাতত সংশয় নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় বয়স যে একটা বড় ব্যাপার, এটা তো সম্প্রতি মাশরাফি বিন মুর্তজার বাদ পড়াতেই ফুটে উঠেছে আরেকবার। সপ্তাহখানেক পরই মাহমুদউল্লাহর বয়স পূর্ণ হবে ৩৫। ২০২৩ বিশ্বকাপের সময় বয়স থাকবে ৩৮-এর কাছাকাছি। পরের বিশ্বকাপে তিনি থাকবেন তো?
মৃদু হাসিতে মাহমুদউল্লাহর উত্তর, “দেখা যাক…গাড়ি চলছে, চলুক!”