প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। প্রথমে টিকা দেওয়া হবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সসহ ২৫ জনকে।
আর এ অনুষ্ঠানেই চালু হবে টিকাদান ব্যবস্থাপনার ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্মের মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম। যারা টিকা নিতে চান, তাদের সবাইকেই অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।
এরপর বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে, সে প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে টিকা দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় বুথ তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া টিকা প্রয়োগের পরবর্তী পর্যবেক্ষণ ও কারো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে হাসপাতালগুলো।
বাংলাদেশে দেওয়া হবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা, যা ‘নিরাপদ এবং অধিকাংশের ক্ষেত্রে কার্যকর সুরক্ষা দিতে পারে’ বলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে। আট সপ্তাহের ব্যবধানে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে সবাইকে।
সরকার সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, তার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ সোমবার দেশে পৌঁছেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রথম চালানের টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতিও দিয়েছে।
এছাড়া সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে যেহেতু এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির উপর এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে।
সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।
প্রথম টিকা নেবেন ২৫ জন, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
পরীক্ষা শেষে প্রথম চালানের টিকা প্রয়োগের অনুমতি
কুর্মিটোলায় শুরু
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বাংলাদেশের প্রথম যিনি করোনাভাইরাসের টিকা পাবেন, তিনি একজন সেবিকা।
টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হবেন।
প্রথম দফায় যারা টিকা পাবেন, তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ থাকবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই হাসপাতালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমেই দেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হয়ে প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেওয়া দেখবেন।”
২৭ জানুয়ারি প্রথম কোভিড-১৯ টিকা পাবেন একজন নার্স
মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার বুথ। এরকম চারটি বুথে চলবে টিকাদান। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
প্রথম দফার প্রস্তুতি
টিকাদান শুরুর সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, প্রথম দিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৫ জনকে দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার এ হাসপাতালের ১০০ জন কর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।
“টিকাদানের জন্য মোট চারটি বুথ থাকবে। আলাদা একটি ওয়ার্ড করা হয়েছে, কারও প্রয়োজন হলে ব্যবহার করবে।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ভ্যাকসিন আমরা ২৮ তারিখেই দিব। যেসব স্টাফদের ভ্যাকসিন দেব, তাদের সাথে কথা বলে একটি তালিকা করেছি।”
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিচতলার উন্মুক্ত স্থানে টিকাদানের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে শুরুতে নারীদের জন্য দুটি এবং পুরুষদের জন্য দুটি বুথ থাকবে। পরে বুথ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
পরিচালক বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা আছে যে, আমরা প্রথম দিন ১০০ জনকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেব। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আনসার সদস্য, ট্রেইনি চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য স্টাফ যারা আছেন- সব ক্যাটাগরির স্টাফদেরই আমরা ভ্যাকসিন দেব।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তাদের হাসপাতালে প্রথমে ২০০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি তারা শেষ করেছেন।
“২৮ তারিখ আমরা আমাদের নিজেদের লোকদের টিকা দেব। পরে নির্ধারিত তারিখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ নাগরিকদের টিকাদান শুরু হবে।”
হাসপাতালের মেডিকেল কনভেনশন সেন্টারে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার এই ব্যবস্থা হয়েছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, “পুরাতন শেরাটন হোটেলের উল্টোদিকে আমাদের একটা বিল্ডিং আছে। এটা আমরা এতদিন কোনো কাজে ব্যবহার করিনি, এখন ভ্যাকসিনেশনের জন্য আমরা নিচতলাটা প্রস্তুত করেছি।”
প্রথমে যাদের কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হবে, তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখবে হাসপাতাল। টিকা যারা নেবেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে এমন কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়?
সব ধরনের ওষুধেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, বাংলাদেশে কোভিশিল্ড নামের যে টিকা দেওয়া হবে, তারও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে কারও কারও মধ্যে।
সেরাম ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এ টিকা নেওয়ার পর হালকা গা ব্যথা, শরীর গরম, লালচে হয়ে যাওয়া, চুলকানি, টিকা দেওয়ার স্থান ফুলে যাওয়া, সেখানে ক্ষত হওয়া, অসুস্থ-ক্লান্ত বোধ করা, ঠাণ্ডা বা জ্বর জ্বর লাগা, মাথা ব্যথা, বমি ভাব, জ্বর, ফ্লুর উপসর্গ- ইত্যাদি দেখা দিতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে।
টিকা নিয়েছেন এমন ১০ জনের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এসব সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আবার মাথা ঘোরা, ক্ষুধামান্দ্য, পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠার মতো কিছু অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কখনও কখনও দেখা দিতে পারে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে প্রতি ১০০ জনে একজনের ক্ষেত্রে।
আর বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে অক্সফোর্ডের টিকার ‘মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অক্সফোর্ডের টিকা ১৮ বছরের কম বয়সীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়নি। এ কারণে অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে টিকা দেওয়া হবে না।
গর্ভবতী নারীদের ওপর কোনো পরীক্ষা না হওয়ায় এই টিকা সাধারণভাবে তারাও পাচ্ছেন না। স্তন্যদানকারী মায়েদেরও দেওয়া যাবে না। যাদের ড্রাগ অ্যালার্জি আছে, তাদের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করা হবে।
এছাড়া যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ হওয়ার চার সপ্তাহ আগে কাউকে টিকা দেওয়া হবে না বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নাজমুল হক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, টিকা দেওয়ার পর সবাইকে আধা ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, কারও কোনো সমস্যা হয় কি না দেখার জন্য। সেজন্য পোস্ট-ভ্যাকসিন এরিয়া নামে একটা জায়গা থাকবে টিকার বুথের কাছেই।
“সেখানে চেয়ার ও বেড থাকবে। যে যেভাবে চাইবেন, সেখানে অবস্থান করবেন। আধা ঘণ্টা অবস্থান করে তারা চলে যাবেন। যদি কারও সমস্যা হয়, প্রটোকল অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা দেব।”
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা কতটুকু?
মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার বুথ। এরকম চারটি বুথে চলবে টিকাদান। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
টিকা নিয়ে ‘ভয় নয়’
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক জামিল আহমেদ বলছেন, টিকা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়, এ নিয়ে অত উদ্বিগ্ন হওয়ারও কারণ নেই।
“আমরা জন্মের পর থেকেই ইপিআই এর সবগুলো ভ্যাকসিন নিয়েছি। অনেকগুলো ভ্যাকসিন নেওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কোভিডের ভ্যাকসিন নতুন, কিন্তু অন্যান্য ভ্যাকসিন যেহেতু আমরা নিয়েছি, তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
আর করোনাভাইরাসের মহামারী মোকাবেলায় টিকা ছাড়া আর কোনো বিকল্পও যেহেতু নেই, তাই এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে না ভোগার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
“এই একটা আশা নিয়ে আমরা একটা বছর ধরে অপেক্ষা করছি। সুতরাং ভ্যাকসিন পাওয়ার পরে এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। পৃথিবীতে এমন কোন ওষুধ বা টিকা আবিষ্কৃত হয়নি যেটার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই। কোনটার বেশি, কোনটার কম। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়েই আমরা এটা (টিকা) পেয়েছি। ভয় পাওয়ার মত কিছু সেখানে দেখা যায়নি।
এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের প্রধান ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, “ভারত, নরওয়েতে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে কিছু প্রতিবেদন হয়েছে, যেগুলো দেখে মানুষ ঘাবড়ে গেছে। পরে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এটা টিকার জন্য নয়, স্বাস্থ্যগত অন্য কারণ ছিল তাদের।”
এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘নির্ভয়ে’ সবাই টিকা দিতে পারবে। কিছু সমস্যা হলে সেটার সমাধান করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে টিম করা হয়েছে হাসপাতালগুলোর সাথে, তারা সেটা দেখবেন।
“টিকা নিয়ে বাসায় চলে গেলেও তার ফোন নম্বর থাকবে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে। তারা তিনদিন ফলোআপ করবেন। আমি আশা করছি, তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা হবে না।”
টিকা নিয়ে ‘ইমোশনাল’ না হওয়ার পরামর্শ অধ্যাপক নজরুলের
করতে হবে নিবন্ধন
করোনাভাইরাসের টিকা পেতে আগ্রহী সবাইকেই নিবন্ধন করতে হবে। সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধনের কাজটি সারতে হবে। এই প্ল্যাটফর্ম চালু হবে বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী টিকাদান কার্যাক্রমের উদ্বোধন করার পর।
ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপে নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ ও একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। সেই মোবাইলেই টিকাদানের তারিখ জানানো হবে তাকে।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, কিডনি রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদী কোনো রোগ আছে কিনা; কিংবা কখনও কোভিড-১৯ হয়েছিল কিনা তা জানাতে হবে নির্ধারিত ঘরে।
আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী টিকাদান কেন্দ্র নির্ধারণে পর নির্দিষ্ট বাটন চেপে তথ্যগুলো সংরক্ষণ করলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে। নিবন্ধিত আবেদনকারী যে কোনো সময় ওই পোর্টাল থেকে তার টিকা কার্ড ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
এসএমএস এ যে তারিখ দেওয়া হবে, সেই তারিখে টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে পারবেন নিবন্ধনকারীরা।
আট সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ডোজ শেষ হলে সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।
যারা অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম।
“আগ্রহী ব্যক্তি যদি টিকা দেওয়ার নির্ধারিত ক্যাটাগরিতে পড়েন তাহলে টিকা অবশ্যই পাবেন। যাদের অ্যাপ থাকবে না তারা যদি টিকা নিতে হাসপাতালে যান, সেখানে আমাদের লোকজন আছেন সাহায্য করার জন্য।”
টিকাদান উদ্বোধনের সময়ই নিবন্ধন শুরুর ভাবনা
কোভিড-১৯: টিকার জন্য নিবন্ধন কীভাবে
কোভিড-১৯ টিকা যাদের দেওয়া হবে, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে তারা এখানেই অপেক্ষা করবেন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
টিকায় অগ্রাধিকার কাদের
সরকার তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে; যেখানে প্রাধান্য পাবেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সম্মুখসারিতে লড়াই করা কর্মীরা।
প্রথম মাসে সবার আগে টিকা পাবেন ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী। এছাড়া কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় সরাসরি নিয়োজিত অনুমোদিত সব বেসরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ছয় লাখ স্বাস্থ্যকর্মী প্রথম ধাপেই টিকা পাবেন।
টিকা অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন ২ লাখ ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ জন, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ২৫ হাজার জন, সম্মুখসারির ২৫ হাজার জন গণমাধ্যমকর্মী, ৮৯ হাজার ১৪৯ জন জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার ৭৫ হাজার জন কর্মচারী, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৫০০ জন।
এছাড়া পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন, ফায়ার সার্ভিস এবং বিমানবন্দরের ২ লাখ কর্মী, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের ৭৫ হাজার জন, ৬০ হাজার প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, জেলা-উপজেলায় জরুরি জনসেবায় নিয়োজিত ২ লাখ সরকারি কর্মচারি এবং জাতীয় দলের ১০ হাজার ৯৩২ জন খেলোয়াড় প্রথম মাসেই টিকা পাবেন।
শুরুর ৫০ লাখ টিকার অর্ধেকই বয়ঃবৃদ্ধদের জন্য
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা বৃহস্পতিবার এই বাক্সে করে বাংলাদেশে আসে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
সংরক্ষণ-বিতরণ কীভাবে
গত ২০ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে আসা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ চার হাজার ডোজ টিকা রাখা হয়েছে তেজগাঁওয়ের ইপিআই স্টোরে। আর সোমবার বেক্সিমকোর মাধ্যমে আসা ৫০ লাখ ডোজ টিকা তাদের ওয়্যারহাউজে রাখা হয়েছে। এসব টিকা জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো।
জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে টিকা যাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি জানিয়েছে, ঢাকা থেকে ৬৪টি জেলার ইপিআই স্টোরে টিকা পাঠানো হবে।
সেখান থেকে টিকা যাবে ৪৮৩টি উপজেলা ইপিআই স্টোরে। ইপিআই স্টোরের আইএলআরে (হিমায়িত বাক্সে টিকা রাখার ব্যবস্থা) এসব টিকা রাখা হবে। সেখান থেকে কোল্ড বক্সে করে নেওয়া হবে টিকাদান কেন্দ্রে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিএএইচের লাইন ডিরেক্টর ডা. শামছুল হক বলেন, “জেলা থেকে উপজেলায় টিকা পাঠানোর জন্য কোনো বিশেষায়িত গাড়ির প্রয়োজন হবে না। সেখান থেকে কোল্ড বক্সে করে পাঠানো হবে। আমাদের এরকম কয়েক হাজার বক্স আছে।”
গণটিকাদানের শুরুতে শুধু বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার কাজটি করবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্য কর্মীরা।
পুরোদমে টিকাদান শুরু হলে সারাদেশের ছয় হাজার ৫০০টি কেন্দ্রে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা সাজিয়েছে সরকার।
সে পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০ হাজার ৮০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী টিকা প্রয়োগে সরাসরি যুক্ত থাকবেন। তাদের সঙ্গে দুজন করে ৪১ হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।
সারাদেশের জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকা বহনে পাঁচ হাজার ৪৬৯ জন পোর্টার এবং আট হাজার ৮৬৯ জন সুপারভাইজার থাকবেন।
কোভিড-১৯: সরকারের কেনা টিকার প্রথম চালানে এল ৫০ লাখ ডোজ
কোভিড-১৯ টিকা থাকছে কোথায়, কারা কীভাবে পাবে?
মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড টিকা গ্রহণকারীরা ঢুকবেন বহির্বিভাগের ১ নম্বর ফটক দিয়ে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
বেসরকারি হাসপাতালে কী অবস্থা
সরকারি হাসপাতালে টিকাদানের প্রস্তুতি শুরু হলেও বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহিবুর রহমান।
মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার আমরা উদ্বোধন করলে, তারপর কোথায় কোথায় টিকা দেওয়া হবে সেটার গণবিজ্ঞপ্তি দেব; তখনই সব জানা যাবে।”
আর স্কয়ার হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, টিকার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা এখনও তারা পাননি।
“আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। কিন্তু সরকারি কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি। আর বেসরকারিভাবে আমরা এটা আনতে পারিনি, সেটার জন্য সরকারের অনুমতি পাইনি। সরকারের ওপরই সব নির্ভর করছে।”
টিকা প্রয়োগে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রাড্ডা এমসিএইচ-এফপি সেন্টারও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি।
সেন্টারের অ্যাডমিন ও ফাইনান্স বিভাগের পরিচালক আহসান হাবীব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভ্যাকসিন কীভাবে বণ্টন করা হবে বা আমরা পাব কিনা- সে ব্যাপারে সরকারের কোনো বার্তা আসেনি। আমরা ইপিআই সার্ভিসগুলো দিয়ে থাকি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে। ভ্যাকসিন আমাদের কাছে এলে, সেটা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমেই আসবে।”
এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের প্রধান ডা. আরিফ মাহমুদ বলেছেন, তারাও সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।
“কবে থেকে আমরা দিতে পারব, সেটা বলতে পারছি না। সরকার আমাদের যেদিন থেকে নির্দেশনা দেবে, সেদিন থেকেই আমরা দেব।”
আগামী মাসে বেসরকারিভাবেও টিকা বিক্রি করবে বেক্সিমকো
বেসরকারি উদ্যোগে টিকা দিতে নীতিমালা হচ্ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী