সহকর্মীদের নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যার
পর অনশনস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার বারান্দায় যান তিনি।
শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের
আশ্বাস দিয়ে উপাচার্য ফায়েক উজ্জামান বলেন, “আমরা শিক্ষকতা করি, ছাত্ররাই আমাদের জীবনের
অংশ।… আমরা কিন্তু মা-বাবাও বটে। আমি বার বার যে কথাটি সেদিন বলেছিলাম, যে সন্তানরা অনেক ভুল করে অনেক সময়, শুধু
একটা কথা বলে স্যরি; বা মা-বাবাকে শুধু বলে, বাবা ভুল হয়ে গেছে। তাদের তো আমরা ফেলে
দিই না।
“আজকে তারা একটা চিঠি দিয়েছে।সেই
চিঠিটা আমি যথাসময়ে পেয়েছি। আমি শুধু তাদেরকে বলছি যে, এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে খুব
স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমি শৃঙ্খলা কমিটির সভা ডাকব। এই বিষয়টা যাতে সুবিবেচনার সঙ্গে
দেখা হয় সেজন্য উপাচার্য হিসেবে এটা আমার আন্তরিক প্রয়াস থাকবে এবং তাদের শিক্ষাজীবনে
যাতে পরবর্তীকালে কোনো বড় ধরনের ক্ষতি না হয় আমি সেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
“এবং তাদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা
যেন তাদের অনশন ভঙ্গ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় যে একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে তাদের
জন্যে তারা সেই জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করবে।”
এরপর শরবত খাইয়ে দুই শিক্ষার্থীর
অনশন ভাঙান উপাচার্য।
গত বছর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি
কমানো, আবাসিক সংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় দুই
শিক্ষকের সঙ্গে ‘অসদাচরণ’ এবং একাডেমিক কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইমামুল ইসলাম সোহান এবং বাংলা ডিসিপ্লিনের
শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমানকে দুই ও এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে
গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে এখানে আমরণ অনশন শুরু করেন দুই শিক্ষার্থী।
অনশন চলাকালে শনিবার সোহান অসুস্থ
হয়ে পড়লে তার জায়গায় জোবায়ের হোসেন অনশন শুরু করেন। অন্যদিকে রোববার নোমানও অসুস্থ
হয়ে পড়লে তার জায়গায় মুজাহিদুল ইসলাম অনশন শুরু করেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়া
শিক্ষার্থী নোমান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফিরে আবার অনশন শুরু করেন।
এরমধ্যে মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গত বছরের
ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে উপাচার্য বরাবর একটি চিঠি লেখেন বলে জানান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশনের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজমুস সাদাত। তারপরই
উপাচার্য এই শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে আসেন।
অনশন ভাঙার পর ইমামুল ইসলাম সোহান সাংবাদিকদের বলেন,
“আমরা শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে অনশন কর্মসূচি পালন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ
দেশের সকল বিবেকবান মানুষ যারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।”
অপর শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা অনশন থেকে সরে এসেছি। আশা করি, দ্রুতই আমাদের বহিষ্কারাদেশ
প্রত্যাহার করা হবে।”