ক্যাটাগরি

সংসদ ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ জানলে তখন পাপুলের ভাগ্যনির্ধারণ

তবে পাপুলের রায়ের বিষয়ে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ জানানো হলে তবেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে সংসদ সচিবালয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।

অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য পাপুল। বৃহস্পতিবার তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। বাংলাদেশের কোনো আইনপ্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা।

সরকারের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলছেন, পাপুলের বিষয়ে ‘দ্রুতই’ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আদালতে দণ্ডিত হলে এমপির কী হবে সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে। সেটা দেশে হোক বা দেশের বাইরে হোক।”

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদও একই অভিমত জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সংবিধানে যা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে সংসদকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছালে ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা করবে। তবে সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছাতে হবে।”


কুয়েতে পাপুলের চার বছরের কারাদণ্ড
 


কুয়েতে পাপুলের সাজা দেশের জন্য লজ্জার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
 

এ বিষয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার (পাপুল) বিষয়ে গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। আনু্ষ্ঠানিকভাবে তথ্য পাওয়ার পর সংবিধান ও কার্যপ্রাণালী বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার ছয় মাস পরেও বিষয়টি সম্পর্কে কেন সংসদ সচিবালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কেন কুয়েতে আমাদের দূতাবাস কিছু জানাতে পারছে না। তারাও বলছে, তারা শুনেছে। এটা হয় না। এতদিন ধরে বিষয়টা চলছে, সরকার জানে না?”

মেনন বলেন, “স্পিকার ঠিকই বলেছেন, আইন অনুযায়ী তাকে জানাতে হবে। কিন্তু যারা জানাবে তারা কিছুই জানে না এটা কেমন করে হয়? স্পিকার নিজেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞেস করতে পারেন।”

এ বিষয়ে শনিবারই একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

তার ভাষ্য মতে, আগেই পাপুলের বিষয়ে জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশ দূতাবাস। তবে কুয়েতি কর্তৃপক্ষ ‘সাড়া দেয়নি’। এখন বিষয়টি সম্পর্কে কুয়েতের ‘আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নিতে’ দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ মনে করেন, ‘আরও আগেই’ পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা ‘উচিত ছিল’।

“নৈতিক স্খলনের দায়ে দোষী হয়ে ন্যূনতম দুই বছরের সাজা হলেই একজন আর এমপি থাকতে পারেন না। সে হিসেবে পাপুল সাহেব এমপি হিসেবে আর একদিনও থাকতে পারেন না। সংবিধানে আরও বলা হয়েছে, কেউ অন্য দেশের নাগরিক হলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার এবং থাকার যোগ্য নন।

“এ বিষয়টা আমি সংসদে বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী উত্তরও দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা তখন নেওয়া হয়নি। এখনতো রায় হয়ে গেল। পাপুল কুয়েতে অনমুতি নিয়ে বসবাস করছিল। তার মানে সে ওই দেশের প্রতি অনুগত। তাই যদি হয়, তাহলে তো আরও আগেই এমপি পদ খারিজ হয়ে যায়।”

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য পড়ে তুলেছিলেন পাপুল। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেওয়ার কাজ করলেও কুয়েতে অন্যান্য ব্যবসার কাজও বাগিয়েছিলেন তিনি। কুয়েতে তার বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাপুল। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন।

পাপুলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাজাটা যেহেতু বিদেশে হয়েছে, সেজন্য রায় দেখার পর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রায় দেখেই তবে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। আমি যতটুকু জানি রায় পাওয়ার চেষ্টা চলছে।”