রূপচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত
প্রতিবেদন অবলম্বনে চোখের নিচে কালোভাব ও বলিরেখা দেখা দেওয়ার কারণ ও এর প্রাকৃতিক
সমাধান সম্পর্কে
চোখের চারপাশের কালচেভাব
নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই চোখের চারপাশের
কালচেভাব একটা সাধারণ সমস্যা। এটা হওয়ার পেছনে নানান কারণও রয়েছে। প্রাকৃতিক উপাদানের
সাহায্যে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
চোখের চারপাশের কালচে দাগ হওয়ার কারণ
বয়স: ‘ডার্ক
সার্কেল’ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল বয়স। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চামড়া পাতলা হতে
থাকে। আর একারণেই ত্বকের নিচের রক্তনালী স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে চোখের চারপাশ কালচে দেখায়।
চোখের ওপর চাপ বৃদ্ধি: ‘স্ক্রিন টাইম’ অর্থাৎ মোবাইল ও কম্পিউটারের স্ক্রিনে বেশি সময় কাটানো চোখের
ওপর চাপ বাড়ায়। ফলে চোখের চারপাশের রক্তনালী বড় হয়ে ওঠে। আর কালোভাব দেখা দেয়।
পানি শূন্যতা:
চোখের চারপাশের কালচেভাব সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হল পানি শূন্যতা। শরীরে পর্যাপ্ত
পানির অভাবে ত্বক মলিন ও কালচে হয়ে পড়ে ।
‘ডার্ক সারকেল’ দূর করার ঘরোয়া উপায়
ঠাণ্ডা চাপ:
রক্তনালী বিস্তৃত হওয়ার কারণে চোখের চারপাশ কালচে দেখায়। তাই, চোখে ঠাণ্ডা চাপ প্রয়োগ
করা কালচেভাব দূর করতে সহায়তা করে।
শসা: শসা পাতলা
করে কেটে নিন কিংবা মিহি কুচি করে রেফ্রিজারেইটরে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা করে
নিন। ঠান্ডা শসা আক্রান্ত স্থানে রেখে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। দিনে দুবার ব্যবহারে
ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
ভিটামিন ই ও কাঠ বাদামের তেল: সমপরিমাণ কাঠ বাদামের তেল ও ভিটামিন ই মিশিয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার
আগে চোখের চারপাশে ‘ডার্ক সার্কেলে’ মালিশ করুন। সকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত নিয়মিত ব্যবহার করুন।
টি ব্যাগ: দুটি
টি ব্যাগ গরম পানিতে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন। এরপর
তা চোখের ওপরে রেখে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন ও ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত
ব্যবহারে কালচেভাব দূর হবে।
টমেটো: টমেটো
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা চোখের চারপাশের রংয়ের ভারসাম্যহীনতা কমায়। এক চা-চামচ
টমেটোর রসের সঙ্গে এক চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চোখের চারপাশে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট
অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত টমেটোর
রস পান করা যেতে পারে।
কাঠ বাদামের তেল ও লেবুর রস: এক চা-চামচ কাঠ বাদামের তেলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে চোখের
নিচের অংশে ব্যবহার করুন। চার পাঁচ মিনিট এই মিশ্রণ মালিশ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন।
বলিরেখা দেখা দেওয়ার কারণ
বয়স ত্রিশের মাঝামাঝি বা এরপর থেকে চোখের
নিচের বলিরেখা দৃশ্যমান হওয়া শুরু করে। বাইরে খুব বেশি সময় কাটানো হলে ত্রিশের আগেই
তা ত্বকে ফুটে ওঠে। এই সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা নিরাপদ।
অতিবেগুনি রশ্মি: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচানোর জন্য কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা
নেওয়া না হলে এই অংশের কোলাজেন হ্রাস পেতে থাকে। এরফলে বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দৃশ্যমান
হয়। পরিবেশগত দূষণ বলিরেখা দেখা দেওয়ার অন্যতম কারণ।
ধূমপান: ত্বকে
অতিরিক্ত জারণের ফলে কোলাজেন ভেঙে যায় ও স্থিতিস্থাপকতা হারায়। তাই বলিরেখা দেখা দেয়।
ধূমপান রক্তনালীকে সংকুচিত করে ফেলে ও রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয়। ফলে বলিরেখা স্পষ্ট
হয়ে ওঠে।
উচ্চ শর্করা গ্রহণ: উচ্চ শর্করা ধরনের নিম্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ত্বকে দ্রুত
বলিরেখা ও বয়সের ছাপ ফেলে। তাই খাবার গ্রহণে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বলিরেখা কমাতে
অ্যালো ভেরা:
অ্যালো ভেরা প্রাকৃতিক আরামদায়ক উপাদান সমৃদ্ধ। ত্বকে পাঁচ মিনিট অ্যালো ভেরা মালিশ
করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গবেষণা থেকে দেখা যায় এটা বলিরেখা কমায়, কোলাজেন
বাড়ায় ও ত্বককে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে।
কলার মাস্ক:
একটা কলার চারভাগের এক অংশ মিহি পেস্ট করে নিন। এটা ত্বকে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা
করুন ও পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কলাতে আছে প্রাকৃতিক তেল ও ভিটামিন যা
ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়াত করে।
ডিমের সাদা অংশ: একটা পাত্রে ডিমের সাদা অংশ নিয়ে তা ফেটে নিন। এটা ত্বকের বলিরেখা কমাতে সহায়তা
করে। ত্বকে ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি
দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। এটা কোলাজেন বাড়ায় ও বলিরেখা
কমাতে সাহায্য করে। তবে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
ভিটামিন সি:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, এটা ত্বকে কোলাজেন সৃষ্টিতেও সহায়তা করে। ত্বকে ভিটামিন
সি সিরাম ব্যবহার বলিরেখা কমায়। এটা ত্বককে আর্দ্র রাখতে ও প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
হলুদ ও নারিকেল তেল: এক চিমটি হলুদ ও এক চামচ নারিকেল তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি চোখের
চারপাশে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে ত্বকে কয়েক ফোঁটা কাঠ
বাদামের তেল যোগ করতে পারেন।
টক দই: আধা
টেবিল-চামচ দইয়ের সঙ্গে গোলাপ জল ও মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখ ও চোখের চারপাশে
মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন।