আগামী
চার মাসের মধ্যে মামলাটির তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ
আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট’কে (বিএফআইইউ) এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই
সঙ্গে আদালতের নির্দেশ থাকার পরও গত চার বছর মামলাটির অধিকতর তদন্ত কেন হয়নি এবং
তদন্ত না হওয়ার কারণ কী এবং তদন্ত না হওয়ার পেছনে কারও দায় থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে
কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছে হাই কোর্ট।
অর্থ
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে আদেশ পাওয়ার ৪০ দিনের মধ্যে
এ প্রতিবেদন দিতে হবে।
মামলাটি
বাতিল চেয়ে আসামিদের করা আবেদনের শুনানির মধ্যে রোববার এ আদেশ দিয়েছে বিচারপতি এম
ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট
বেঞ্চ।
আবেদনকারীদের
পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান কিশোর। বিএফআইউর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী
তানভীর পারভেজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন
বাপ্পি।
৫৬
কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় নাসির
গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন বিশ্বাসসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি
দমন কমিশন –দুদক।
মামলার
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে দেশের
প্রচলিত আইন ও বিধি লংঘন করে নাসির গ্রুপের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও
পণ্য আমদানির নামে আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে ৫৬ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ৮২ টাকা বিদেশে
পাচার করেছেন।
২০০৯
সাল থেকে ২০১৪ সাল অবধি সময়ে এ টাকা পাচার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে।
তদন্ত
শেষে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে প্রতিবেদন দেয় দুদক।
কিন্তু অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ায় সে প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর
তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
বিশেষ
জজ আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করেন নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ
চার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
আদালত
এ আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।
২০১৭
সালে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্ত্তীর হাই কোর্ট
বেঞ্চ সে রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেয়। রায়ে অর্থ পাচারের মামলাটি তদন্তের জন্য
বিএফআইইউকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দেশ
অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক মামলাটি তদন্তে কমিটি গঠন করলেও পেরিয়ে গেছে চার বছর। কিন্তু
তদন্তের একচুল অগ্রগতি হয়নি।
এই
অবস্থায় গত বছর নভেম্বরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(ক) ধারায় হাই কোর্টে আবেদন করেন
করেন নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসিরুদ্দিন বিশ্বাস, মহাব্যবস্থাপক (আমদানি) মো.
আলফাজ উদ্দিন, মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) মো. শামীম আহম্মেদ, সহকারী ব্যবস্থাপক
(ক্রয়) ওবায়দুল ইসলাম। আবেদনে মামলাটি বাতিল চাওয়া হয়।
এরপরই
আবেদনটি শুনানির জন্য উঠলে হাই কোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের অগ্রগতি জানতে চায়
বিএফআইউউর কাছে।
কিন্ত
বিএফআইইউর পক্ষ থেকে মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে কোন তথ্য হাই কোর্টকে জানাতে
পারেনি। তখন আদালত বিএফআইউর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে।
নাসিরউদ্দিনের
আইনজীবী মাহবুবর রহমান কিশোর বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উচ্চ আদালতের
আদেশের পর চার বছর কেটে গেছে। কিন্তু তদন্ত শেষ করতে পারেনি। অথচ প্রতি ধার্য
তারিখে নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে হয় আমাদের। এটা এক ধরনের হয়রানি।”
ডেপুটি
অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী চার মাসের মধ্যে
মামলাটির তদন্ত শেষ করে বিএফআইইউকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট।
“এছাড়া
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ৪০ দিনের মধ্যে
একটা প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। গত চার বছরেও কেন মামলাটির তদন্ত হলো না, এর জন্য
কারা দায়ী এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে বলা হয়েছে
প্রতিবেদনে।”
আর
চারজন আসামিকে নিম্ন আদালতের হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আগামী ১৪ মার্চ পরবর্তী
আদেশের জন্য রাখা হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।