রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তরের
এক সভায় এই নকশা উপস্থাপন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম সিকদারসহ স্থাপত্যবিষয়ক কর্মকর্তারা
সভায় অংশ নেন। অন্যদিকে গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রকৌশলীসহ একটি দল তাদের নকশা তুলে ধরেন।
নতুন এই নকশায় টিএসসির আগের অবকাঠামো বজায় রেখে বর্তমান
সুইমিংপুলের জায়গায় ১০ তলা নতুন ভবনটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম সিকদার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত মিটিংয়ের
পরামর্শ অনুযায়ী এবার টিএসসি না ভেঙে নকশা উপস্থাপন করেছে তারা। আজকে যে নকশাটা দেখানো
হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মোটামুটি সম্মতি দিয়েছে। তবে এখনও তা চূড়ান্ত করা হয়নি।
“চার সপ্তাহ পর আরেকটি সভা হবে। সেখানে বিষয়টি চূড়ান্ত হলে প্রধানমন্ত্রী
বরাবর পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন দিলে পিডব্লিউডি তা বাস্তবায়ন করবে।”
আবুল কালাম সিকদার বলেন, নতুন নকশায় দেখানো হয়েছে টিএসির
সামনের ভবন ও অডিটোরিয়াম আগের মতই থাকবে।
“আমরা যে চাহিদা দিয়েছি, সেগুলো পূরণের জন্য শুধু সুইমিংপুলের জায়গায়
১০ তলা ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে নতুন করে।”
১৯৬০ সালের শুরুর দিকে গ্রিক স্থপতি কনস্ট্যান্টিন
ডক্সিয়াডেস টিএসসির নকশা করেন। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব
খানের আমলে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি
পাওয়ায় সরকার সম্প্রতি যুগের চাহিদা অনুযাযী টিএসসির আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর (পিডব্লিউডি) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন
করবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত বছর অক্টোবরে পিডব্লিউডি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে টিএসসির আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন
চাহিদার কথা জেনে নেয়।
চাহিদার তালিকায় টিএসসিতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মহড়াকক্ষ,
জিমনেশিয়াম, টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক দলগুলোর জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত
কক্ষ, আন্তঃক্রীড়া কক্ষ, আলাদা ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষক মিলনায়তন, গাড়ি রাখার জায়গা, অতিথি
কক্ষসহ বিভিন্ন রকম আধুনিক সুবিধার কথা বলা হয়।
বর্তমানে টিএসসিতে একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে, চাহিদা তালিকায়
তিনটি অডিটোরিয়ামের কথা বলা হয়, যার একটিতে দেড় হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা এবং অন্য
দুটিতে তিনশ লোকের ধারণক্ষমতা রাখতে বলা হয়।
পুরনো সুইমিংপুল সংস্কার করে দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় নতুন একটি সুইমিংপুল
কমপ্লেক্স নির্মাণেরও প্রস্তাব করা হয়।
টিএসসির স্থাপনা ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে- এমন
খবরে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া
দেখা দেয়।
টিএসসিকে ‘আধুনিক স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শন’ হিসেবে বর্ণনা করে
তা ভেঙে ফেলার বিরোধিতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের
নেতারা।
আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত ২৬ ডিসেম্বর টিএসসির উন্নয়ন
ও সম্প্রসারণে শিক্ষক-শিক্ষর্থীদের প্রত্যাশা ও সুপারিশ জানতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরে চলতি বছর ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের
সাথে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা বৈঠক করে টিএসসিকে ভেঙে নতুনভাবে গড়ার খসড়া নকশা
উপস্থাপন করেন।
প্রস্তাবিত খসড়া নকশায় দেখানো হয়, টিএসসির পুরনো সব
ভবন ভেঙে নতুন তিনটি ভবন নির্মাণ করা হবে। টিএসসির সামনে যে ভবনটি রয়েছে, তা ভেঙে ছয়
তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে যে অডিটোরিয়াম রয়েছে, তা ভেঙে ছয় তলা করা হবে। অন্যদিকে
ক্যাফেটেরিয়া ও অতিথি কক্ষের জায়গায় নয় তলা ভবনের নির্মাণ করা হবে।
তবে প্রাথমিকভাবে তৈরি ওই খসড়া নকশা পছন্দ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষের। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বড় পরিসর ও সবুজায়নকে প্রাধান্য
দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নতুন নকশা করার পরামর্শ দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে।
সেই পরামর্শ অনুযায়ী রোববার দ্বিতীয় খসড়া নকশা উপস্থাপন করল গণপূর্ত অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিডব্লিউডি আমাদের কিছু নকশা দেখিয়েছে।
এগুলো চূড়ান্ত করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। নকশা
আমাদের পছন্দ হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অপশন দেওয়া হবে। একাধিক অপশন থেকে তিনি যেটি অনুমোদন করবেন, পিডব্লিউডি তা বাস্তবায়ন করবে।”
সুইমিংপুলের জায়গায় নতুন ভবন তৈরি সম্ভব কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “টিএসসির ওপাশে পরমাণু কমিশন আছে। সেখানে সম্প্রসারণ করা যায় কি না সেটাও দেখা হচ্ছে।”