ক্যাটাগরি

দুই মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড হাই কোর্টে বহাল

মামলার
ডেথ রেফারেন্স (মৃতুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য আবেদন) গ্রহণ ও বিচারিক আদালতের
রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো.
আখতারুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।

এর মধ্যে
কেরানীগঞ্জের রায় রোববার হলেও ফরিদপুরের মামলার আপিলের রায় হয় গত বৃহস্পতিবার। এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ রোববার দুই রায়ের খবর রোববার
সাংবাদিকদের জানান।

বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি
বলেন, “একই পরিবারের চারজনকে হত্যার মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী না থাকলেও আসামিরা
সেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিয়ে অপরাধ দায় স্বীকার করেছে। ফলে তাদের আপিল খারিজ করে দিয়ে আদালত ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করেছে।” 

এ মামলার
চার আসামি হলেন- সুমন ঢালী ওরফে ডাকু সুমন, জাকারিয়া হোসেন জনি, সুমন ওরফে সিএনজি সুমন ও মো. নাসিরউদ্দিন।

তাদের পক্ষে
আইনজীবী ছিলেন হেলাল
উদ্দিন মোল্লা ও এ কে
এম ফজলুল হক খান ফরিদ।

ফরিদপুরে
কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা চার
আসামি হলেন- শামীম মণ্ডল, বাবুল হোসেন, জাহিদুল হাছান ও আকাশ মণ্ডল। 

শামীমের
পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এস এম শাহজাহান;
আকাশ মণ্ডলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস এবং আসামি জাহিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফজলুর রহমান।  

ডেপুটি
অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, “নিহতের চাচাতো বোন সাক্ষ্য দিয়েছে। এছাড়া কিশোরীর মোবাইল ফোনটি আসামি শামীমের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। আর এ মামলার
একজন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে
অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় চার আসামির ফাঁসি বহাল রাখা হয়েছে।”

চার
আসমির মধ্যে বাবুল হোসেন পলাতক। তিনি হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।   

হত্যা মামলার
বিচার
প্রক্রিয়া

২০১৪
সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ
কেরানীগঞ্জের কদমপুর এলাকার ছয়তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে অটোরিকশা চালক সাজু আহমেদ (৩৫), তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২৬), ছেলে ইমরান (৫) ও মেয়ে
সানজিদার (৩) হাত-পা
চোখ বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই
ঘটনায় সাজুর ভাই বশিরউদ্দিন দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

তদন্তে নেমে
পুলিশ জানতে পারে, সাজুসহ আসামিরা একই ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। আসামিদের মধ্যে সুমন ঢালী ও জনি তাদের
স্ত্রীর সঙ্গে সাজুর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল বলে সন্দেহ করতেন। এছাড়া সুমনের মোটর সাইকেল এবং তার স্ত্রীর হাতের রুলি চুরি যাওয়ার ঘটনাতেও তারা সাজুকে সন্দেহ শুরু করেন।

মামলার নথিতে
বলা হয়, এসব ক্ষোভ
থেকে আসামিরা অতিথি সেজে সেদিন সাজুর বাসায় যায় এবং সেখানেই রাত্রিযাপন করেন। রাতের কোনো এক সময় আসামিরা
ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে সাজু ও তার পরিবারের
সদস্যদের হত্যা করে।

পরে
পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে। ২০১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি তাদের
বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই বছরের ৬ জুন অভিযোগ
গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।

বিচার
শেষে ২৬ নভেম্বর রায়
দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ
। তাতে চার আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

পরে
নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

শুনানি
শেষে আসামিদের আপিল খারিজ ও ডেথ রেফারেন্স
গ্রহণ করে রোববার রায় দিল হাই কোর্ট।   

ধর্ষণ ও
হত্যা
মামলার
বিচার
প্রক্রিয়া

মামলার বিবরণে
বলা হয়, আসামি শামীম ফরিদপুরের
নবম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোরীকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন।

২০১২
সালের ১৩ ডিসেম্বর কিশোরীর
চাচাতো বোনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের সময় আসামিরা শামীমের ভাগ্নের মাধ্যমে মেয়েটিকে বাড়ির
পাশের একটি মেহগনি বাগানে ডেকে নেয়।

রাত
৯টার পরেও মেয়েটি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ফিরে না এলে খোঁজাখুঁজি
শুরু হয়। পরে ওই বাগানে পাওয়া
যায় তার ঝুলন্ত লাশ। সে সময় মোটর
সাইকেল নিয়ে শামীমসহ অন্যদের সেখানে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।

ওই
ঘটনার পরে ১৫ ডিসেম্বর কিশোরীর
ভাই বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

২০১৩
সালের ২০ মে পাঁচজনের
বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহ আলম। আলোচিত এ মামলা ২০১৪
সালের ২৬ নভেম্বর ফরিদপুর
থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়।

পরে
ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত
বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রহমান সরদার ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে
২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর চার
আসামির ফাঁসির রায় দেন।

হত্যার
দায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা
করে জরিমানাও করা হয়।

এছাড়া
নারী ও শিশু নির্যাতন
আইনে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ
টাকা করে জরিমানা; অনাদায়ে আরও তিন বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।

অভিযোগ
প্রমাণিত না হওয়ায় এ
মামলার এক আসামিকে
খালাস দেয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

সেই রায়ের
বিরুদ্ধে চার আসামির আপিল খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।