রপ্তানি
উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে পণ্য রপ্তানি
করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৪৩ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম।
২০১৯-২০২০
অর্থবছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে রপ্তানি
আয় প্রায় ৫ শতাংশ পিছিয়ে আছে।
কোভিড-১৯
মহামারীর কারণে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে অচলাবস্থা বিরাজ করায় পণ্যের ক্রয় আদেশ
কমে গেছে বলে রপ্তানিকারকরা বলে আসছিলেন।
গত
ডিসেম্বর মাসেও রপ্তানি আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ওই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৩১
কোটি ডলার আয় হয়েছিল, যা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ কম এবং লক্ষ্যমাত্রার
চেয়ে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ কম।
রপ্তানি
আয়ে ধারাবাহিক ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে অর্থবছরের সার্বিক রপ্তানির উপরেও।
২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২
হাজার ৩৪৭ কোটি ডলার, অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ২৬৭ কোটি ডলার।
অর্থাৎ
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ পিছিয়ে আয়ে রপ্তানি আয়। আগের বছর একই সময়ের
তুলনায় পিছিয়ে আছে এক দশমিক ০৯ শতাংশ; ওই সময়ে আয় হয়েছিল ২ হাজার ২৯১ কোটি ডলার।
ইপিবির
গত ডিসেম্বর পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে
(জুলাই-ডিসেম্বর) গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সার্বিক রপ্তানি কমেছে
শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
অর্থাৎ
ডিসেম্বর মাসে যে খারাপ পরিস্থিতি ছিল; জানুয়ারি মাসে এসে সেই পরিস্থিতি আরও
খারাপের দিকেই গেছে।
রপ্তানির
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রধান
রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়া। পোশাকখাতে নিট পণ্য ভালো অবস্থান (৪.৪
শতাংশ প্রবৃদ্ধি) ধরে রাখলেও উভেন খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক ও গত
অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি
অর্থবছরের জানুয়ারি মাস শেষে এক হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি করেছে
বাংলাদেশ, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ৯০৬ কোটি ডলার।
এরমধ্যে
নিটপণ্য রয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার আর উভেন পণ্য ৮৪০ কোটি ডলার। আগের বছর
একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ পিছিয়ে আছে উভেন পণ্য।
টাকার
অঙ্কে কম হলেও এই সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে হোম
টেক্সটাইল খাত। আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে হোম
টেক্সটাইল খাতে। ৫৪৯ মিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রপ্তানি হয়েছে ৬৩৮ মিলিয়ন
ডলার, যা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মোট রপ্তানির কাছাকাছি। ওই বছর রপ্তানি হয়েছিল ৭৫৮
মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
একইভাবে
পাট ও পাটজাত পণ্যেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৭৬
কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ২৭
শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।
তবে
মহামারীর ধাক্কায় বরাবরের মতোই সুখবর নেই রপ্তানির অন্যতম অংশীদার চামড়া ও
চামড়াজাত পণ্যে। জানুয়ারি মাস শেষে প্রায় ছয় শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। জানুয়ারি শেষে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য।
জানুয়ারি মাসে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ডলার সমমূল্যের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।
রপ্তানি
কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, জানুয়ারি মাসের পরিসংখ্যানসহ
চলতি অর্থবছরে টানা চতুর্থ মাস পোশাক খাত ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকলো। জুলাই
থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে তিন দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মধ্যে পড়েছে
পোশাক খাত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটছে বাংলাদেশে
রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে পোশাক খাতে।
রপ্তানি
কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজারগুলোতে
মহামারী প্রকটভাবে বেড়েছে। জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য
দেশগুলোতে কড়া লকডাউন দেওয়া হয়েছে।”
তবে
টিকা এসে যাওয়ায় শীত কাটিয়ে ওঠার পর বছরের মাঝামাঝিতে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে
বলে আশাবাদী বিজিএমইএ সভাপতি।