সকালে লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান যা পারেননি, আগের দিন পারেননি প্রতিষ্ঠিত অন্য ব্যাটসম্যানরা, সেটিই করে দেখালেন মিরাজে। আট নম্বরে নেমে অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে এগিয়ে নিলেন দলের ইনিংস। তার সৌজন্যেই বাংলাদেশ পেল বড় স্কোর।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে চা বিরতির ঠিক আগে প্রথম ইনিংসে ৪৩০ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।
শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে মিরাজ করেছেন ১০৩ রান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটিই তার প্রথম সেঞ্চুরি। আগে কখনও সেঞ্চুরির দেখা পাননি ঘরোয়া ক্রিকেটের কোনো সংস্করণেও।

মিরাজ ও নাঈম হাসান নবম উইকেটে গড়েন ৫৭ রানের জুটি।
আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। ২০০৪ সালে এই পজিশনে শতরান করেছিলেন খালেদ মাসুদ, ২০১০ সালে মাহমুদউল্লাহ ও ২০১৩ সালে সোহাগ গাজী।
দিনের শুরুতে লিটন ও লাঞ্চের আগে সাকিবকে হারানোর পরও বাংলাদেশ মোটামুটি বড় স্কোর পেয়েছে মিরাজের দারুণ ব্যাটিংয়েই। শেষ তিন জুটিতে বাংলাদেশ তুলেছে ১১৫ রান, সেখানে মিরাজের অবদান ৬৫।
বাংলাদেশ দিন শুরু করে ৫ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে। সকালের সেশনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার টেস্টে সাকিবের ফিফটি। তবে ইনিংসটি শেষ হয় বাজে শটে। তার আগে লিটনও বিলিয়ে আসেন উইকেট।
বিস্ময়করভাবে দিনের শুরুতে সাকিব ও লিটনকে চেপে ধরেননি ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। মাঠ সাজানো ছিল ছড়ানো। এক-দুই করে রান নিয়ে শুরু করতে সমস্যা হয়নি দুই ব্যাটসম্যানের।
তার পরও অযথা জোর করে বানিয়ে শট খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন লিটন। জোমেল ওয়ারিক্যানের পিচ করে সোজা আসে, পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলেও কাট করার চেষ্টা করতে গিয়ে লিটন বোল্ড। সমাপ্তি ৫৫ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটির।
সেই ধাক্কা ভুলিয়ে দিতে একদমই সময় নেননি মিরাজ। উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই খেলতে থাকেন দুর্দান্ত সব শট।
শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে চোখধাঁধানো একট স্কয়ার ড্রাইভে চার মেরে মিরাজের শুরু। এরপর ওয়ারিক্যানের বলে সুইপ, কেমার রোচের এক ওভারে ফ্রিক আর গ্ল্যান্স, রাকিম কর্নওয়ালের বলে গ্লাইড, একের পর এক বাউন্ডারিতে নিজের শটের পরিধি মেলে ধরেন তিনি।
সাকিব ফিফটি পেয়ে যান এর মধ্যেই, ১১০ বলে। দুজনের জুটি হয়ে যায় ইনিংসের সর্বোচ্চ। সবকিছুই ছিল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। হঠাৎই তখন প্রতিপক্ষের জন্য সাকিবের উপহার।
কর্নওয়ালের বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। কাট শটে যেখানে ওপর থেকে নিচে আসার কথা ব্যাট, সাকিব নিচ থেকে ওপরের দিকে ব্যাট চালিয়ে যেন ক্যাচিং অনুশীলন করাতে চাইলেন। সহজ ক্যাচ পয়েন্টে।
শটটি খেলে সাকিব নিজেও প্রকাশ করলেন খানিকটা হতাশা। থামতে হলো তাকে ১৫০ বলে ৬৮ রান করে। জুটি শেষ ৬৭ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ বার ফিফটি ছুঁয়েও সেঞ্চুরিতে যাওয়া হলো না তার একবারও।

মিরাজ এরপরও খেলতে থাকেন আস্থায়। ৯৯ বলে স্পর্শ করেন তিনি ফিফটি।
প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কিছুটা সহায়তাও অবশ্য পান তিনি। ২৪, ৭১ আর ৮৫ রানে, তাকে ফেরাতে পারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খুব সহজ অবশ্য ছিল না সুযোগগুলো।
লোয়ার অর্ডারের অন্যরা তাকে সঙ্গ দেন দারুণ। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়ে ওঠে ৪৪ রানের জুটি, নবম উইকেটে নাঈম হাসানের সঙ্গে ৫৭।
শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমান যখন উইকেটে গেলেন, মিরাজের রান তখন ৯২। মুস্তাফিজ ঠিকই ভরসা জোগান তাকে, মিরাজ পৌঁছে যান কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। ১৩ চারে ১৬০ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক।
শেষ পর্যন্ত কর্নওয়ালকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়ে শেষ হয় তার মধুর অভিযান। দল ততক্ষণে পেয়ে গেছে প্রত্যাশিত স্কোর। কিংবা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি!
সংক্ষিপ্ত স্কোর (চা বিরতি পর্যন্ত):
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৪২/৫) ১৫০.২ ওভারে ৪৩০ (সাকিব ৬৮, লিটন ৩৮, মিরাজ ১০৩, তাইজুল ১৮, নাঈম ২৪, মুস্তাফিজ ৩; রোচ ২০-৫-৬০-১, গ্যাব্রিয়েল ২৬-৪-৬৯-১, কর্নওয়াল ৪২.২-৫-১১৪-২, মেয়ার্স ৭-২-১৬-০, ওয়ারিক্যান ৪৮-৮-১৩৩-৪, ব্র্যাথওয়েট ৪-০-১৩-০, বনার ৩-০-১৬-১)।