তার পর্যবেক্ষণে সিসিসিতে দক্ষ জনবল নেই, অধীনস্ত বিভাগগুলোতে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে।
সার্বিক অবস্থা নিয়ে তার মূল্যায়ন, সিটি করপোরেশন হলেও এর কর্মীদের মানসিকতা এখনও পৌরসভার মতোই রয়ে গেছে।
মহামারীকালে নির্বাচনে দেরি হওয়ায় সিসিসির প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুজনকে নিয়োগ দেয় সরকার।
নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর সেই দায়িত্ব থেকে বিদায় নিয়ে বৃহস্পতিবার নগরীর জামালখানে একটি ক্লাবে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় ডাকেন সুজন।
সিসিসি পরিচালনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “পৌরসভা থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হয়েছে, কিন্তু মানসিকতাটা এখনও পৌরসভা লেভেলে রয়ে গেছে।
“প্ল্যানিং বিভাগের কাজ দেখি শুধু নগরী জুড়ে গাছের চারা লাগানো! সেখানে পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ দিয়ে নতুনভাবে সাজাতে হবে।”
দক্ষ জনবলের অভাব তুলে ধরে সুজন বলেন, “সিটি করপোরেশনে দক্ষ জনবল নেই। এটা বড় সঙ্কট। প্রায় ১০ হাজার লোক কাজ করে, এক হাজারও কাজের লোক নেই।
“দক্ষ জনবল তৈরি করতে যদি না পারেন, তাহলে সঙ্কট থেকে যাবে। যে যে কাজের লোক, তাকে সেই জায়গায় বসাতে হবে।”
তিনি বলেন, “পরিচ্ছন্নতা বিভাগে কিছু অতিরিক্ত লোক আছে। ডোর টু ডোর প্রকল্পটি মন্ত্রণালয় থেকে দিয়েছিল আউটসোর্সিং হিসেবে। কিন্তু এখানে দেখি উল্টো, কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যারা করপোরেশন থেকে টাকা নেয়। এই প্রকল্পটা ৪০-৪৫% সক্রিয়।
“অতিরিক্ত জনবল ছাঁটাই করা উচিত। মেকানিক্যাল ও বিদ্যুৎ বিভাগ বিরাট, কিন্তু একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার নেই।”
করপোরেশনের আয়-ব্যয়ের মধ্যে ‘বিশাল ফারাক’ দেখার কথা জানিয়ে সুজন বলেন, “এখন খরচ মাসে ১৮ কোটি টাকা। মার্চ থেকে সেটা ১৯ কোটি টাকা হবে।
“ওভার ট্যাক্সেশন করে আয় বাড়ানো যাবে না। নিয়মের মধ্যে যা দিতে চায়, তা নিয়ে নেওয়াই ভালো। অটোমেশনে গেলে আয় বাড়তে। চট্টগ্রামের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে বিল দিতে চায় না। ঘরে বসে দিতে পারলে আয় বাড়বে। ট্যাক্স আদায় পদ্ধতি সহজ করতে হবে। সবাই টাকা দিতে চায়।”
“অটোমেশনের কাজ যাকে দেওয়া হয়েছে, তার কাজ দেখে সন্তুষ্ট নই। করপোরেশনে কিছু লোক আছে, যারা বাধার পাঁচিল সৃষ্টি করে রাখে,” বলেন তিনি।
খোরশেদ আলম সুজন
সিসিসির প্রতিটি বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে নতুন মেয়রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সুজন বলেন, “দুর্নীতি সারা বাংলাদেশে যেটা আছে, সেটা এখানেও আছে। যদি সজাগ থাকেন, চোখ-কান খোলা রাখেন এবং দুর্নীতিবাজ হিসেবে যারা পরিচিতি তাদের যদি আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেন, তাহলে দুর্নীতি নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। দুদক যাদের তদন্ত করছে তাদের সরিয়ে দেওয়া উচিৎ।”
সুজন বলেন, “আমার পরামর্শ হচ্ছে- উনাকে (নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী) নগরপিতা হতে হবে। উনি দল থেকে নির্বাচন করে নির্বাচিত হলেও উনাকে মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ভাবতে হবে- আমি এই শহরের ৬০ লক্ষ মানুষের অভিভাবক।
“মানুষের কথা শোনার প্র্যাকটিস চালু করতে হবে। উনি পরিশীলিত যোগ্য লোক। আশা করি, উনি পারবেন। নগরবাসী যেন ধৈর্য ধরে উনাকে সহযোগিতা করে”
সিসিসি’র আয় বাড়াতে নগরীর সুবিধাভোগী বন্দর, কাস্টমস, দুই ইপিজেড, কন্টেইনার ডিপো, রড ও সিমেন্ট কারখানাগুলো থেকে সার্ভিস চার্জ ধার্য করার পরামর্শ দেন সুজন।
তিনি বলেন, “দুই ইপিজেড মিলে ১৪০০ প্রতিষ্ঠান। ১২টার ট্রেড লাইসেন্স আছে। ১০-১৫ লাখ লোক এই দুই ইপিজেডের এ শহরকে ব্যবহার করছে। সার্ভিস চার্জ কেন দেবেন না?
“কন্টেইনার ইয়ার্ড নগরীর গলার কাঁটা। প্রতি প্রবেশ পথে ইয়ার্ড। হাজার হাজার ট্রেলার চলছে। কাঠগড় থেকে পতেঙ্গা সব কন্টেইনার ইয়ার্ড। তারা ডলারে চার্জ নেয়। আমাদের চার্জ দিতে হবে।”
খরচ কমানোর পথ দেখিয়ে সুজন বলেন, “অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছু এখানে ঢুকেছে। ষষ্ঠ গ্রেডের শিক্ষকের চেয়ে এখানকার শিক্ষকদের বেতন ২৫ হাজার টাকা বেশি। হিসেব করে দেখলাম, মাসে তিন কোটি আর বছরে ৩৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ। এম প্রতিষ্ঠানও আছে ৭০ জন ছাত্র ৩৫ জন শিক্ষক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দিতে হবে।”