ক্যাটাগরি

আন্দোলন জোরদার হচ্ছে মিয়ানমারে

দেশটির সেনাবাহিনী গত সোমবার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নেত্রী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পরপরই প্রথম প্রতিবাদ এসেছিল চিকিৎসাকর্মীদের কাছ থেকে। এরপর থেকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ক্রমেই বেড়েছে।

একে একে আন্দোলনে যোগ দিয়েছে শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন যুবদল, সরকারি ও বেসরকারি খাতের বহু কর্মী। শুক্রবার সর্বশেষ আন্দোলনে সামিল হয়েছে শিক্ষকরাও। কয়েকজন প্রভাষক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করা কিংবা সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

লাল রিবন পরে, প্রতিবাদের প্রতীক হাতে নিয়ে শিক্ষক, প্রভাষকরা ইয়াঙ্গন ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশন ক্যাম্পাস ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। প্রতীকীভাবে তারা প্রদর্শন করেন তিন আঙুলের স্যালুট।

প্রতিবাদী কণ্ঠে তাদের একজন বলেন, “আমদের নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে নেওয়া এই সামরিক অভ্যুত্থান আমরা চাই না। আমরা আর তাদের সঙ্গে কাজ করব না। আমরা চাই এই সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হোক।”

শুক্রবার বিকালে ইয়াঙ্গনের ড্যাগন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে শত শত শিক্ষক-শিক্ষার্থী। লাল রিবন পরে তিন আঙুল স্যালুট প্রদর্শন ছাড়াও কারান্তরীন নেত্রী সু চির সমর্থনে ‘সু চি মা জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয় তারা। “আমরা আমাদের প্রজন্মকে এই ধরনের সামরিক স্বৈরাচারের যাঁতাকলে ভুগতে দেব না”, বলেন এক বিক্ষোভকারী।

মিয়ানমারজুড়ে বহু জায়গাতেই বিক্ষোভ হয়েছে। ইয়াঙ্গনসহ কয়েকটি নগরীর অধিবাসীরা তাদের বাড়িতে থেকে রাতেও বিক্ষোভ করেছে। মঙ্গলবার রাতে ইয়াঙ্গনে প্রথম বড় ধরনের প্রতিবাদ হয়।বিক্ষোভকারীরা ‘অমঙ্গল দূর হবে’ শ্লোগান দিয়ে রীতি অনুযায়ী হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে বিক্ষোভ করেন।

স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, শিক্ষক এবং সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকে হয় ছোটখাট বিক্ষোভ আয়োজন করছেন, নয়ত ধর্মঘটে নামছেন।আবার অনেকে প্রতিবাদের প্রতীকী লাল রিবন পরে কাজ করে যাচ্ছেন।শুক্রবার কয়েক ডজন অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারী দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দাওয়েই শহরে পদযাত্রা করেছে।মোটরবাইকে করে তাদের সঙ্গে সামিল হয়েছে আরও বহু মানুষ।

“আমরা আজ এখানে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই শুরুর ঘোষণা দিচ্ছি। আমরা জনগণকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া এবং আমাদের পাশে থাকার ডাক দিচ্ছি,” বলেন এক বিক্ষোভকারী।

মিয়ানমারে ১৯৬২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী প্রায় ৫০ বছর ধরে সরাসরি দেশ শাসন করেছে এবং বছরের পর বছর ধরে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন কঠোরহাতে দমন করেছে।

এবারও তার অন্যথা হচ্ছে না। আন্দোলন দমনে তৎপর হয়েছে সেনাবাহিনী। ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিতে (এনএলডি) সু চির ডান হাত হিসাবে পরিচিত নেতা উইন টাইনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী কঠোর দমঅভিযানের বার্তা দিয়েছে।

অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামা অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমারের মান্দালয় নগরীতে গত তিন রাত হাড়ি-পাতিল বাজিয়ে যারা বিক্ষোভ করেছে, তাদের অন্তত ৩০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।

প্রকাশ্য রাস্তায় শোরগোল সৃষ্টি করে আইন ভঙ্গের অভিযোগে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আঞ্চলিক পুলিশ বাহিনীর উপপ্রধান কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে গণমাধ্যম। তবে এসব ধরপাকড়েও বিক্ষোভ দমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

বিক্ষোভ ঠেকাতে আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক। দুইদিন ফেইসবুক বন্ধ রাখার পর এবার কর্তৃপক্ষ টুইটার, ইন্সটাগ্রামও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। ফেইসবুক বন্ধ থাকার কারণে মিয়ানমারের নাগরিকরা টুইটারে সক্রিয় হয়েছিল। সু চিসহ নেতাদের মুক্তি এবং সেনাশাসন অবসানের দাবিতে চালু হয় বেশ কিছু হ্যাশট্যাগ; বিক্ষোভের আহ্বানও জানানো হয়েছে টুইটারে।

এবার সেখানেও খড়গহস্ত হল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই বজ্রমুষ্ঠির মধ্যেও সু চি’র দল এনএলডি’র পতাকার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে লাল রঙে চলছে প্রতিবাদ। বাড়িতে বাড়িতে, এমনকী দোকানে দোকানেও সু চি সমর্থনে টাঙানো হচ্ছে লাল কাপড়, লাল ফিতা, বেলুন।

ইয়াঙ্গনে বাড়ির বাইরে লাল কাপড়, ফিতা, বেলুন টাঙিয়ে সু চি কে সমর্থন জানাচ্ছেন তার সমর্থকরা। গতকাল থেকে এক দোকান মালিক তার দোকানের বাইরে টাঙিয়ে রেখেছেন লাল পোশাক; “এটাই আমাদের গণতন্ত্রের শেষ লড়াই। আমাদের সন্তানদের জন্য লড়াই”, বলেছেন তিনি।


মিয়ানমারে অভ্যুত্থান: এনএলডি নেতা উইন টাইনও গ্রেপ্তার


সু চির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের, দু’সপ্তাহের রিমান্ড


মিয়ানমারের রাজপথে হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ


মিয়ানমারের মান্দালয়েও সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী প্রতিবাদ