এ সংক্রান্ত মামলা
আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আয়কর আদায় করা যাবে না।
সেই সঙ্গে বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়কর আদায় বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে
এনবিআরকে আপিল করার অনুমতি দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
তবে দুটি প্রজ্ঞাপনের
মাধ্যমে এ পর্যন্ত যত টাকা (আয়কর) আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দিতে হাই কোর্টের আদেশে
স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ
মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
হাই কোর্টের রায়ের
বিরুদ্ধে এনবিআরের করা লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি) আবেদনে শুনানির পর এ আদেশ দেয়
আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে
(এনবিআর) শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ,
ফিদা এম কামাল। এছাড়াও ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন ও ওমর সা’দাত।
অ্যাটর্নি জেনারেল
এ এম আমিন উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টের আদেশের পর এনবিআর
১৫ শতাংশ আয়কর আদায় করেনি। এখন মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আয়কর আদায় থেকে বিরত
থাকতে বলেছেন। তবে আদায় করা টাকা ফেরত দিতে হাই কোর্টের যে নির্দেশনাটি ছিল সেটি স্থগিত
করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।”
২০০৭ সালের ২৮ জুন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়,
তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনঃনির্ধারণ করার কথা জানানো হয়।
তবে, ‘মেডিকেল, ডেন্টাল,
ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্য শিক্ষাদানে নিয়োজিত প্রাইভেট কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আয় করমুক্ত
হইবে। কিন্তু ওই সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিবছর যথারীতি নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ
আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে’, বলা হয় প্রজ্ঞাপনে।
২০১০ সালের ১ জুলাই
এনবিআরের আরেক প্রজ্ঞাপনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি
মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কেবলমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি
বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ কমিয়ে ১৫
শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
এই প্রজ্ঞাপন দুটি
চ্যালেঞ্জ করে ৪৬টি রিট আবেদন করা হয়। এসব রিট আবেদনে প্রথমে রুল জারি করা হয়। এ রুলের
ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়কর আদায় অবৈধ ঘোষণা করে রায়
দেয় হাই কোর্ট।
আদালত তার পর্যবেক্ষণে
বলে, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে জীবনের অধিকারের কথা বলেছে, যার মধ্যে শিক্ষার অধিকারও
পড়ে।
‘গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র
হিসেবে বাংলাদেশ তার উঠতি নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ অনুসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন
দিয়েছে। এখন সরকার যদি এই সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্যাক্স আরোপ করে, তাহলে
তা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়ে দেবে।
‘এটা সরকারি ও বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রের এই বৈষম্যমূলক
পদক্ষেপের চূড়ান্ত ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এটা অসাংবিধানিক
এবং অবৈধ।’
সরকার এর আগে বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলেও
২০১৫ সালে টানা কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তা প্রত্যাহার করে
নেয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের
আবেদনে হাই কোর্টের দেওয়া রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করে দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার
আদালত।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ এ
রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে। সেই লিভ টু আপিল গ্রহণ করে মঙ্গলবার আদেশ দিল সর্বোচ্চ
আদালত।