ক্যাটাগরি

মিয়ানমারে বিক্ষোভে তরুণদের সৃজনশীলতার  নিদর্শন

তরুণ আন্দোলনকারীরা যেসব মজার মজার, প্রতীকি প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায়ই থাকছে না। তাদেরকে দেখা যাচ্ছে ঝলমলে পোশাক পরতে, সঙ্গে আনুষঙ্গিক সাজগোজও থাকছে।

মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গনে বল গাউন পরে তরুণীরা বিক্ষোভ করেছে; একে তারা ‘প্রিন্সেসদের বিক্ষোভ’ নাম দিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

এ ‘প্রিন্সেস’দের একজন ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারকে বলেছেন, ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনীর ঘটানো অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যে তরুণীরাও অংশ নিচ্ছে, তা তুলে ধরতে চাইছেন তারা।

নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে দেশটির সামরিক বাহিনী গত সপ্তাহে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সরকারকে উৎখাত করে। নির্বাচনে সু চির দল নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছিল।

সামরিক বাহিনীর ওই অভ্যুত্থানের পর তাৎক্ষণিকভাবে তেমন প্রতিবাদ দেখা না গেলেও গত কয়েকদিন ধরে ইয়াঙ্গন, নেপিডো, মান্দালয়সহ দেশটির বিভিন্ন শহরে টানা বিক্ষোভ চলছে।

এসব কর্মসূচিতে যে কেবল ‘প্রিন্সেসদেরই’ দেখা যাচ্ছে, তা নয়। আছেন সহজে বহনযোগ্য বাথটাবে বসা একদলও প্রতিবাদকারীও। যারা তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ব্যাখ্যা করেছেন গত ১০ দিনের ঘটনাপ্রবাহে কেন তাদের মন ‘সামান্য খারাপ’।

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে লাখো মানুষকে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে; পুলিশের বলপ্রয়োগও তাদের নিবৃত্ত করতে পারেনি।

 

মঙ্গলবার নেপিডোতে বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ জলকামানের পাশাপাশি রাবার বুলেটও ছুড়েছে। ওই বিক্ষোভে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীর অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

ওই নারীর মাথায় গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। বুধবারের বিক্ষোভে থাকা কিছু প্ল্যাকার্ডে ঘটনাটির উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বুধবার রাস্তায় অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদকারীদের মধ্যে মার্ভেলের সুপারহিরো, ভূত-প্রেত এমনকী হ্যারি পটারের বেশকিছু চরিত্রেরও দেখা মিলেছে। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কয়েকজন তরুণী তাদের সান্ধ্যকালীন গাউন ও টায়রা পরে মিছিলে হেঁটেছেন।

বিক্ষোভ করেছে ‘শার্টলেস গ্রুপও’। ঊর্ধ্বাঙ্গে জামাবিহীন তরুণদের এ প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুটা আলোড়নও তুলেছে।

বলা হচ্ছে, ইন্টারনেটে সহজে প্রবেশাধিকারসহ তুলনামূলক অবাধ ও উন্মুক্ত সমাজে বড় হওয়ার কারণেই এই প্রজন্মের তরুণদের সঙ্গে আগে যারা সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন তাদের চিন্তা এবং বিক্ষোভের ভাষায় পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ সঞ্চার করেছে। আন্দোলনরত তরুণদের পোশাক এবং প্ল্যাকার্ডের কারণেও এটি বিশ্বের অনেকের দৃষ্টি কাড়ছে, যা মিয়ানমারের এখনকার শাসকগোষ্ঠীর জন্য স্বস্তিদায়ক হওয়ার কথা নয়।