টিকা
নেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটউটের
সাবেক এই অধ্যাপক বললেন,
“বেশিদিন বেঁচে থাকার জন্য নয়, অন্যকে নিরাপদ রাখতেই টিকা নিয়েছি।”
বৃহস্পতিবার
সকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ধানমন্ডি থেকে টিকাকেন্দ্রে আসেন আজিজা রহমান
। এ সময় তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই এবং তাদের একজন গৃহ-কর্মীও টিকা নেন।
আজিজা বলেন,
“একদমই ভয় পাইনি। ভয়কে তো
জয় করেছি সেই একাত্তরেই। হাতে পায়ে এখনো গুলির দাগ আছে। এখন আমরা একটা অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। এই যুদ্ধে জয়ী
হতে ভ্যাকসিন হল আমাদের হাতিয়ার।
নিজে নিরাপদ থাকতে এবং অন্যকে নিরাপদ রাখতে সবাইকেই এই টিকা নিতে
হবে।”


তার
মেয়ে নাসিমা আর্জুমান বলেন, “আমার মা একজন গ্যাজেটেড
মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে পাবনায় গুলিবিদ্ধ হন। হাঁটতে পারেন না, তবে তার সাহস অদম্য। হুইলচেয়ারে করেই আমাদের সাথে টিকা নিতে এসেছেন।’
টিকা
নেওয়ার পর কিছুক্ষণ অবজারভেশনে
রাখা হয়েছিল জানিয়ে নাসিমা বলেন, আমরা পরিবারের
বয়স্ক সবাই টিকা নিলাম আজ। আমাদের কারো কোনো অসুবিধা হয়নি।”
কেন্দ্রে
কর্তব্যরত চিকিৎসক ডিএমসির ব্লাড ট্রান্সমিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল হক বলেন, “আমাদের
কেন্দ্রে এই প্রথম ৯০
বছর বয়সী কেউ ভ্যাকসিন নিলেন। ৯০ বছর বয়সী
একজন বৃদ্ধ হুইলচেয়ারে করে টিকা নিতে এলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো আমাদের মনে নাড়া দেয় এবং অনুপ্রাণিত করে।”
সারা
দেশে গণ টিকাদান কর্মসূচির
পঞ্চম দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অন্যান্য দিনের তুলনায় লোক সমাগম বেড়েছে।


ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বুধবার ৯৬০ জন টিকা নেন।
বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা পেরিয়ে যাবে বলে মনে করছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম।
বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মানুষের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। ৮টি বুথে গতকাল ৯৬০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। আজকে হাজার ক্রস করবে।”
টিকা
নেওয়ার পর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
নিয়ে কারো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ওভাবে কেউ অভিযোগ করেননি। টিকা নেওয়ার পর বিশেষ করে
বয়স্ক লোকদের আমরা আধা ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখি। এক কারো সমস্যা
ফেইস করতে দেখা যায়নি।”
লাঠিতে ভর
দিয়ে ধানমণ্ডি
থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিতে এসেছিলেন ৮৫ বছর বয়সী আব্দুল খালেক।
টিকা
নেওয়ার পর তিনি বলেন,
“কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আসলে আমরা ছোটবেলায় যখন টিকা নিতাম, তখন অনেক ব্যথা পেতাম, দাগ পড়ে যেত। সেই তুলনায় এই টিকা কিছুই
না। সবারই টিকা নেওয়া উচিত।”


এদিকে
টিকার জন্য নিবন্ধন করার পর মোবাইলে এসএমএস
পেতে এক সপ্তাহের বেশি
সময় লাগছে বলে অভিযোগ করেন কেউ কেউ।
হাতিরপুল
থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে এসে বৃহস্পতিবার টিকা নেন আব্দুর রশিদ ও তার স্ত্রী।
আব্দুর
রশিদ বলেন, “অনেক দিন থেকেই টিকার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ২ তারিখে নিবন্ধন
করার পর গতকাল এসএমএস
পেলাম। আজকে আমি ও আমার স্ত্রী
এখান থেকে টিকা নিলাম। অনেকে স্পট রেজিস্ট্রেশন করে অপেক্ষা ছাড়াই টিকা নিতে পারছে। অথচ আমাদেরকে এক সপ্তাহের বেশি
সময় এসএমএসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।”
লাইলী
বেগম নামে একজন নারী বললেন, “আমি এখানে এসে এনআইডি কার্ড দেখিয়ে স্পট রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিয়েছি। যদিও একটু অপেক্ষা করতে হয়েছে, তবে কোনো সমস্যা হয়নি।”
এ বিষয়ে
জানতে চাইলে ডা. আশরাফুল আলম বলেন, “আমাদের এখানে স্পট রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা আছে। যারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না, তারা এনআইডি কার্ড নিয়ে এসে এখানে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে আমরা বয়স্ক ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে
যাদের টিকা নেওয়া প্রয়োজন, তাদেরকে এভাবে আগে টিকা দিচ্ছি।”