রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলরদের বেছে নেবেন প্রায় ১৭ লাখ ভোটার।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যে।
মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মেনে এবং গোলযোগ-সংঘর্ষ ও অনিয়ম রোধের মধ্য দিয়ে ভোটের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।
ভোটের প্রাক্কালে শনিবার নির্বাচন ভবনে সচিব বলেন, “নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এজন্য যা যা করা দরকার আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আশা করছি, আমাদের যে ভোট অনুষ্ঠিত হবে সেটা ফ্রি, ফেয়ার এবং একেবারে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।”
ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদু্জামান জানান, রোববার ৩৪ জেলার ৫৫ পৌরসভায় চতুর্থ ধাপে নির্বাচন হবে।
এ ধাপে মেয়র পদে ২১৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২০৭০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন প্রার্থী আছেন।
এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ড ৫০১টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৬৭ ও ভোটকেন্দ্রে ৭৯৩ এবং মোট ভোটার রয়েছেন ১৬৬৭২২৪ জন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
প্রতিকেন্দ্রে ৩-৪ জন অস্ত্রধারী পুলিশ থাকবে। অঙ্গীভূত আনসারসহ সব মিলিয়ে প্রতি কেন্দ্রে ১১ থেকে ১৩ জন সদস্য থাকবেন।
প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে র্যাবের টিম থাকবে, পুলিশের টিম থাকবে; নির্বাহী ও বিচারকি হাকিম রয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার চাহিদার ভিত্তিতে ২৭টি স্থানে বিজিবি ও র্যার বাড়ানো হয়েছে।
দলীয় প্রতীকে ২৮ ডিসেম্বর, ১৬ জানুয়ারি ও ৩০ জানুয়ারি- তিন ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। এ সময় গোলযোগ-সহিংসতা ঘটেছে কিছু এলাকায়।
পরবর্তী ধাপগুলোয় তুলনামুলক শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রত্যাশা করেছে ইসি।
ইসির টার্গেট সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা
ইসি সচিব বলেন, “তৃতীয় ধাপে একটি দুটি জায়গায় অনিয়ম হয়েছে, সেটি খুবই সামান্য। যেগুলোর তদন্ত হয়েছে এবং রিপোর্ট এসেছে আমাদের কাছে। সেগুলোর বিষয়ে কমিশন খুবই ওয়াকিবহাল। এ বিষয়ে তদন্ত হয়েছে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কমিশনকে অবহিত করেছি।”
রোববারের ভোট সুষ্ঠুভাবে করতে মাঠ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।

“ইসির অবস্থান একটাই-সেটি হলো ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল ইলেকশন হওয়া। লোকাল গভর্মেন্ট ইলেকশন যখন হয় তখন ডোর টু ডোর একটা প্রিপারেশন থাকে।… জেলা প্রশাসক, এসপি এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনটা যেন ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়।”
তিনি বলেন, কোথাও কোথাও দু একটি ঘটনা ঘটে। ডিআইজি থেকে এসপি, ডিসি, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে- যেন এমন কোনো কিছু না ঘটে। রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, ভোটকেন্দ্রের যে রুলস আছে, সেভাবেই যেন পরিচালিত করে।
“কমিশনের টার্গেট হচ্ছে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল নির্বাচন করা। এজন্য যা যা করতে হবে, সে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি।”
যেসব পৌরসভায় ভোট
ইভিএম ২৯ পৌরসভায়: ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট সদর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ , রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, যশোরের চৌগাছা, বাগেরহাট সদর, সাতক্ষীরা সদর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, বরিশালের মুলাদী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, শেরপুর সদর, ময়মনসিংহের ফুলপুর, নেত্রকোনা সদর, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম, নরসিংদীর মাধবদী, রাজবাড়ী সদর, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, ব্রাহ্মণাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার হোমনা, দাউদকান্দি, চাঁদপুরের কচুয়া, নোয়াখালীর চাটখিল, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, চট্টগ্রামের পটিয়া, বান্দরবানের বান্দরবান সদর, রাঙ্গামাটি সদর।
ব্যালট ২৬ পৌরসভায়: ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, জয়পুরহাটের কালাই, রাজশাহীর নওহাটা, রাজশাহীর তানোর ও তাহেরপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, যশোরের বাঘারপাড়া, বরিশালের বানারীপাড়া, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, জামালপুরের মেলান্দহ, শেরপুরের শ্রীবরদী, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর ও করিমগঞ্জ, নরসিংদী সদর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, ফরিদপুরের নগরকান্দা, শরীয়তপুরের ডামুঢ্যা, সিলেটের কানাইঘাট, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার পাঁচ ধাপে পৌরসভায় নির্বাচন করছে কমিশন।
তিন ধাপের ফল: তিন ধাপে আ.লীগের ৬৯ জন, বিএনপির ৯ জন ও স্বতন্ত্র ২৫ জন প্রার্থী মেয়র পদে জয় পান।
দলীয় প্রতীকে এ ভোটে মেয়র পদে তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৬ জন, বিএনপির তিনজন ও স্বতন্ত্র ১৪ জন বিজয়ী হন।
দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন, বিএনপির চারজন, জাতীয় পার্টির একজন, জাসদের একজন ও আটজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।
প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন, বিএনপির ধানের শীষের দুই জন এবং তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।
১৮ ডিসেম্বরের প্রথম ধাপে ভোটে ৬৫%, দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারির ৬২% ও তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ৭০.৪২% ভোট পড়েছে।
শেষ দুই ধাপের পৌর ভোটে গোলযোগ রোধের বিষয় নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বৃহস্পতিবার বলেছেন, “ইসির ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে যা যা দরকার, আমরা সব ঠিকভাবে দেখেছি। আশা করি, সামনের নির্বাচন ভালো হবে, সংঘাত-সংঘর্ষ হবে না।”
তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সহনশীল থাকার উপরও জোর দেন তিনি।
১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপের পর ২৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপের ভোট রয়েছে।