ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা শনিবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, নতুন করে কারও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েনি। আক্রান্তের মোট সংখ্যা আগের মতই ৪৮ জন আছে।
“বরং আমরা একটা সুখবর দিতে চাই, যাদের মধ্যে আগে সংক্রমণ হয়েছিল, তাদের মধ্যে আরও চারজনের মধ্যে এখন আর কোভিড-১৯ এর সংক্রমাণ নেই। এ পর্যন্ত মোট ১৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে।”
গত ৭২ ঘণ্টায় নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য না আসায় মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতই পাঁচজনে রয়েছে।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যে চার জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, জ্বর-সর্দি নিয়ে তারা হাসপাতালে আসেন। বেশিরভাগই মৃদু অসুস্থতায় ভুগেছেন। তারা ৮ থেকে ১৬ দিন পর্যন্ত অসুস্থ ছিলেন।
“তাদের এক জনের কিডনির সমস্যা ছিল, তাকে ডায়ালাইসি দেওয়া হয়। একজনের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। তাকে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাকি দুজনের কোনো কোমরবিডিটি (অন কোনো রোগ বা খারাপ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি) ছিল না।”
মীরজাদী বলেন, ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠা ১৫ জনের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৬ জন মহিলা। তাদের বয়সসীমা সর্বনিম্ন ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫৪ বছর। তারা গড়ে ১২ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
“কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২৮৪ জন আইসোলেশনে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ মুহূর্তে হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন ৪৭ জন।”
দেশে করোনাভাইরাসের গণসংক্রমণের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে আইডিসিআর পরিচালক বলেন, সামাজিকভাবে কিছুটা সংক্রমণ হয়েছে। তা খুবই লোকালাইজড.. একটা-দুটো জায়গায়। এক জায়গায় যখন উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি, তখন সে জায়গাটাকে ‘কনটেইন’ করে সবার আগে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। সেখানে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে, সেটা এখনও চলছে।
“সেজন্য এটাকে আমরা সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে তা বলব না। তবে সীমিত আকারে তা আমাদের পর্যবেক্ষণে এসেছে। আমরা সেটাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দেশের আরেকটি জায়গায় ‘ক্লাস্টার’ আকারে’ রোগী পেয়েছি। তবে সেখানে ক্লাস্টারের বাইরে কোনো রোগী নেই।”
কভিড-১৯ আক্রান্তদের সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে নাম-পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, কার মধ্যে কভিড-১৯ এর সংক্রমণ রয়েছে, কে তার কন্টাক্টে এসে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন, তাদের যেন চেনা না যায়, এমনভাবে তথ্য প্রচার করতে অনুরোধ করছি।
“আমরা সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণের কথা বলছি। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যেন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন না হন, সে দিকটা অনুরোধ করছি। যারা আক্রান্ত হয়ে আইসোশেলনে আছেন, কোয়ারেন্টিনে আছেন, তাদের প্রতি যেন আমরা সহানুভূতিশীল ও সংবেদনশী আচরণ করি।”
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম শাখার কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের লাইন ডিরেক্টর হাবিবুর রহমান জানান, ৬৪ জেলা ও ১০০টি উপজেলায় সব ধরনের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, ইপিআই টেকনিশিয়ান, রেডিওগ্রাফারদের পিসিআর টেস্ট করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
আইইডিসিআর ছাড়াও আইপিএইচ, আইসিডিডিআরবি, শিশু হাসপাতালকে পিসিআর টেস্টের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগে পিসিআর টেস্ট সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ এ পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াও সর্বমোট ৮ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে।
হাবিবুর রহমান বলেন, রংপুর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পিসিআর মেশিন বসানোর কাজ যথারীতি চলছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দক্ষ কর্মী পাঠানো হয়েছে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে। তারা সেখানে পিসিআর মেশিন বসানোর কার্যক্রম তদারকি করছেন।
“আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অন্য বিভাগগুলোতেও পিসিআর টেস্ট অর্থাৎ কভিড-১৯ টেস্ট হবে বলে আমরা আশা করছি।”
তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে অতিরিক্ত ১৬টি ভেন্টিলেটর মেশিন বসানো হয়েছে। শেখ রাসেল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিজেসে ৮টি ভেন্টিলেটর বসানোর কাজ চলছে, যা শনিবারের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যায়।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে। সেখানেও আইসিইউ বেড বসানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
হাবিবুর বলেন, “যেসমস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দেবেন, তাদের সুরক্ষা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। এক্ষেত্রে আমরা একটুও পেছনে নেই। আপনারা জানেন, পিপিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রত্যেক চিকিৎসক, নার্স ও সেবাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করছি।
“আমরা আশ্বস্ত করছি, কোনো প্রতিষ্ঠানে পিপিইর অভাব হবে না। এ বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ সতর্ক আছি “
পিপিই দুই ধরনের হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এক ধরণের পিপিই কেবল একবার ব্যবহার করা যাবে, আরেক ধরণের পিপিই রয়েছে রিইউজ্যাবল। রিইউজ্যাবল পিপিই ব্যবহার শেষে সাবান, পানি, ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে।
বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে না বা সংকট রয়েছে বলে যে অভিযোগ এসেছে, তা নাকচ করে দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “যেখানে দরকার হয়ত, ভাবছেন যে যেখানে হয়ত ১০টা পিপিই দরকার, সেখানে হয়ত ৫টা পিপিই সরবরাহ করেছি। এটা হতে পারে। এটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস, আমরা সংগ্রহ করছি, প্রতিদিন বিতরণ করছি। ”
“পুলিশ বা প্রশাসনের হাতে কিছু ব্যবস্থা তো থাকে। কিন্তু এভাবে পিটিয়ে তাদের কোয়ারেন্টিনে নিচ্ছে, এভাবে বলাটা যুক্তিসংগত হবে বলে আমি মনে করি না।”