রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “টাকার জন্য আটকে আছে। আমরা টাকার দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারিনি। অনেক টাকা!”
অর্থায়নের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক আলোচনায় প্রতি বছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ভাষাভাষীর দিক থেকে বাংলা পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। প্রায় ২৭ কোটি লোক এই ভাষায় কথা বলে। বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো আপত্তি নেই।
জাতিসংঘের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসা মোমেন বলেন, “তারা বলেছে, প্রথম পাঁচটি ভাষা হয়েছিল জাতিসংঘ যখন সৃষ্টি হয়, পরবর্তীতে একটি নতুন ভাষা হয়েছে যে আরবি। এরপর প্রায় ১৯ বছর আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো এর খরচ বহন করেছে। জাতিসংঘ সবসময় খরচ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকে।
“বলছে, তোমাদের বাংলা চালু করলে তো খরচ হবে, খরচটা কে দিবে? তোমরা যদি দাও তাহলে তোমরা সদস্য রাষ্ট্রকে বলো, তাহলে অসুবিধা নাই।”
তিনি বলেন, জাপানি, হিন্দি ও জার্মান ভাষার জন্যও প্রস্তাব করা হয়েছিল। একই কারণে সেগুলোও দাপ্তরিক ভাষা হয়নি।
দাপ্তরিক ভাষা চাওয়ার এই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য পাওয়ার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বলছে, তোমরা আসো টাকা নিয়ে। আমরা বলেছি, এখানে আমাদের ইমোশন জড়িত, আমাদের চেতনার বিষয়।
“আমাদের এসব বিষয় বলার পরে কিছুটা সুবিধা হয়েছে। আমরা এখন একটা বাংলা রেডিও পেয়েছি, প্রত্যেক সপ্তাহে অনুষ্ঠান করে। এশিয়ার উপর ইউএনডিপির যে রিপোর্টটা হয়, সেটা তারা ইংরেজির সঙ্গে বাংলাও করে, তাদের পয়সায়। আমরা অতিরিক্ত পয়সা দিই না।”
দাপ্তরিক ভাষা করার প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের আশা একদিন না একদিন, আমরা আরও ধনী হব, বাংলার প্রতি মানুষের নজর বাড়বে।
“উন্নত হলে অনেকে বাংলা শিখবে আর আমাদের প্রবাসীরা বিভিন্ন দেশে থেকে থেকে বাংলা শেখাবে। তখন সেক্ষেত্রে প্রবাসীদের প্রজন্ম যাতে বাংলা ধরে রাখতে পারে, সেটার দিকে খেয়াল রাখা উচিত। এগুলো করলে একদিন হয়ত জাতিসংঘের অন্যতম ভাষা বাংলাও হতে পারে।”
ঢাকা বিভিন্ন বিদেশি মিশনের জুনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কূটনীতিকরা।
আলোচনা পর্বে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, একাডেমির রেক্টর মাসুদ মাহমুদ খন্দকার বক্তব্য দেন।
আয়োজনের শেষাংশে জরুরি প্রয়োজনীয় কিছু বাংলা বাক্য শেখানো হয় বিভিন্ন ভাষাভাষি বিদেশি কূটনীতিকদের।