বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত
রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত
অনুসারে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের চলমান পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছে।
“মহামারীর সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী
ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত
করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। আগামী রোববার থেকে স্থগিতাদেশ
কার্যকর হবে।”
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার
পর দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে পরীক্ষার দাবিতে শ্লোগান দিতে
থাকেন।
এ সময় অর্থনীতি বিভাগের
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী দেওয়ান তাহমিদ বলেন, “তেহাত্তরের অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী বলেছে তা দেখার
চেয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা করে অবিলম্বে
চলমান পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ বাতিল করতে হবে।”
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী
জান্নাতুন সাদিয়া পুষ্প বলেন, “আমাদের বয়স তো থেমে নেই, চাকরি কোথায় পাব? পরীক্ষা বন্ধের
ঘোষণার পর মায়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। শিক্ষার্থী হওয়া তো আমাদের অপরাধ না।”
দেশে করোনাভাইরাসের
প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হলেও আবাসন সঙ্কটে থাকা শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়ার
দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
গত রোববার জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা ভেঙে ভেতরে অবস্থান নিলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও
তার আঁচ লাগে। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও অমর
একুশে হলের প্রধান ফটকের শিকল খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
এরপর তারা ১ মার্চের
মধ্যে হল খোলার সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
এই পরিস্থিতিতে সোমবারই
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, ঈদুল ফিতরের পর ২৪ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। এর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে। ২৪
মে পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের পরীক্ষা নিতে পারবে না। ২৪ মের পরে পরীক্ষাগুলো
নেওয়া হবে। আর অনলাইনে যেভাবে ক্লাস চলছে, ওই সময় পর্যন্ত সেভাবেই চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
আবাসিক হলগুলো আগামী ১৭ মে থেকে খুলে দেওয়া হবে।
মন্ত্রীর এই ঘোষণার
দুই দিন পর বুধবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির বৈঠকে চলমান পরীক্ষাসহ
সব পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সব বিভাগে পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ
পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
“সে অনুযায়ী বেশ কয়েকটি
বিভাগের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সিদ্ধান্ত এসেছে। তাই
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষার্থীরা যদি কিছু দিন ধৈর্য্য
ধরে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আমরা পরীক্ষা নিয়ে নেব।”
শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার
পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা স্থগিতের
ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকার সাত সরকারি কলেজের পরীক্ষাও
স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে দুই দিন
শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে বুধবার সিদ্ধান্ত পাল্টে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া
হয়েছে।