হ্যাঁ।
বই হাতে নিয়ে এবার রান্নাঘরে গেল তিনু। কোমরে হাত দিয়ে বলল, কাল না বাঘ মামার গল্প বললে? আমার কয়টা মামা তাহলে?
মা হেসে তিনুর গাল টিপে দিয়ে বললেন, আমার ভাইয়ের কি আর শেষ আছে? চাঁদ মামা, বাঘ মামা, সূয্যি মামা… আরও কত্ত মামা তোর! আর ওই যে, টিভিতে খেলা দেখে কিসব বলছে, সে হচ্ছে তোর পাগলা মামা। হলো?
তিনু এক দৌড়ে মামার সামনে এসে দাঁড়াল।
মামা, তুমি জানো আমি কার ভাগ্নে?
মামা টিভি থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন, কার আবার, আমার ভাগ্নে।
উহু, হয় নাই। আমি সূয্যি মামা, চাঁদ মামা আর বাঘ মামার ভাগ্নে।
মামা একগাল হাসি দিয়ে বললেন, তো বীর বাহাদুর, আমি তোর মামা নই?
তিনু যেন মামার কথা শুনতেই পেল না। নাক উঁচু করে ‘আয় আয় চাঁদ মামা..’ বলতে বলতে চলে গেল।
এরপর কয়েকদিন তিনুর কোন দেখাই নেই। সারাদিন কাটায় তার সূয্যি মামার সঙ্গে হা হা হি হি করে। রাতেও বিরাম নেই। চাঁদ মামার সঙ্গে ফিসফিস করে কিসব যেন ফন্দি আঁটতে থাকে। আর টিভিতে বাঘ দেখতে পেলেই হলো। ‘আমার মামা, আমার মামা’ বলে টিভির স্ক্রিনে আদর করে দিয়ে আসে।
এদিকে মানুষ মামার হলো খুব মন খারাপ। তিনু তার একমাত্র ভাগ্নে। সে এখন কাছে আসে না, কথা কয় না, একি সহ্য করা যায়!
আপা, তোর ছেলে এমন করছে কেন আমার সঙ্গে?
কী করছে?
পাত্তাই তো দিচ্ছে না। সারাদিন কিসের বাঘ মিয়া, চাঁন মিয়া নিয়ে পড়ে আছে।
আপা হাসতে হাসতে বললেন, তিনু আমার ছেলে, ভাগ্নে তো তোর। মামা কাহিনির আমি কী বুঝব?
মামা বুঝলেন, তার আপাকে বলে কোন লাভ নেই। যা করার নিজেরই করতে হবে।
পরদিন মামা গেলেন তিনুর কাছে। খুব রাজকীয় ঢঙে বললেন, ভাগ্নে, তোর সঙ্গে খুব সিরিয়াস কথা বলার আছে আমার।
তিনু ঠোঁট উল্টে বলল, তুমি কি বাঘ মামার মতো এত জোরে হালুম ডাকতে পার?
না!
তুমি কি সূয্যি মামার মতো আলো দিতে পার?
আমি! কীভাবে…
তুমি কি চাঁদ মামার মতো টিপ দিতে পার?
শোন আগে।
তাহলে কী পারো? সারাদিন টিভিতে খেলা দেখা ছাড়া তুমি আর কিছুই পারো না। তাই তোমার কোন সিরিয়াস কথা থাকতে পারে না।
বেশ, শোন, এমনি এমনি কথা বলব একটা। চল, তোকে আজ চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাই।
তিনু খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
সত্যি নিয়ে যাবে! চল চল। তাহলে আজ বাঘ মামার সঙ্গে দেখা হবে। কি মজা!
চিড়িয়াখানায় এল মামা-মাগ্নে। আজ যা গরম পড়েছে! মামা ভাগ্নে দুজনেই ঘেমে একাকার।
কিরে তিনু, তোর মামাকে বল, গরম যেন না দেয়।
তিনু চিৎকার করে বলল, সূয্যি মামা, খুব গরম লাগছে। কমিয়ে দাও…
তিনুর চিৎকারের জন্যই কিনা কে জানে, ধুপ করে আরও রোদ বেড়ে গেল।
তিনু, তোর সূয্যি মামা এভাবেই তার ভাগ্নেকে কষ্ট দেয় নাকি!
তিনু মুখ ভার করে বলল, ছাড় তো, চল বাঘ মামার কাছে যাই।
বাঘ মশাই তখন আরাম করে এক ঘুম দেয়ার চিন্তা করছিলেন। তিনু গলা বাড়িয়ে ‘বাঘ মামা’ বলে ডাকাডাকি শুরু করল। বাঘের তো আর এত ভাগ্নে প্রীতি নেই। দুনিয়ায় কি তার ভাগ্নের অভাব আছে! বাঘ নিজের ঘুম নিয়েই ব্যস্ত।
এদিকে তিনুর উৎসাহের কমতি নেই। মামা, মামা বলে ডেকেই যাচ্ছে। এর পাশেই বিখ্যাত বানরের খাঁচা। তাদের হয়েছে দারুণ মজা। তিনুর সঙ্গে সঙ্গে তারস্বরে সমানে ডেকে যাচ্ছে। বানরের চিৎকারে সারা চিড়িয়াখানা উল্টে যাওয়ার জোগাড়! শেষে এত চেঁচামেচির যন্ত্রণায় বাঘ বিরক্ত হয়ে হেলতে দুলতে আরও ভেতরের দিকে চলে গেল। তিনুকে একবার হ্যালো পর্যন্ত বলল না!
মামা খুব করুণ মুখ করে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কীরে, কথা হলো?
তিনুর সে কি মন খারাপ! বাঘ মামা তো একবার আমার দিকে ফিরেও চাইল না!
মামা তিনুর ঘামে ভেজা মুখে আদর করে দিয়ে বললেন, বাঘ আর মানুষ কি এক হল? আয়, বাসায় যাই।
রাতে যখন আবার তিনু চাঁদের সঙ্গে গুজুর গুজুর গল্প শুরু করল, মামা ওর ঘরে এলেন। তিনুকে বললেন, চাঁদ ভাইয়ের সঙ্গে খুব খাতির দেখছি। তাহলে তোর চাঁদ মামাকে বল, তোকে যেন এসে টিপ দিয়ে যায়। তিনু জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে সুর করে ডাকতে লাগল, ‘আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা…’
কিন্তু চাঁদ মামা তো আসে না। সে তার গোলগাল মুখে রং ফর্সা করার ক্রিম দিতেই ব্যস্ত!
মামা তড়াক করে এক লাফ দিয়ে তিনুর কাছে এলেন। কাজল দিয়ে তিনুর কপালে বড় করে একটা টিপ এঁকে দিলেন। তিনু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। মামা গুণগুণ করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেলেন। পরদিন মামা ঘুম থেকে উঠেই দেখেন তিনু সবগুলো দাঁত বের করে হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এখানে কী তোর?
তিনু এক লাফে মামার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল, ওরকম দূরের মামা আমার চাই না। তুমিই আমার একমাত্র সোনামনি, জাদুমনি, ময়না পাখি, টিয়া পাখি মামা।
মামা হেসে বললেন, তাহলে বল, মামা-ভাগ্নে যেখানে, খুশির হাঁড়ি সেখানে…।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |