ক্যাটাগরি

মিয়ানমারে রক্তাক্ত দিন পেরিয়ে ফের অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ

বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ তাজা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়লেও তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

আগের দিন বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ এবং সৈন্যদের গুলি ও সংঘাতে ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল জাতিসংঘ। সে হিসাবে, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর বুধবারই ছিল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির সবচেয়ে ‘রক্তাক্ত দিন’।

এমন দমন-পীড়নের পরও মিয়ানমারের অভ্যুত্থানবিরোধীরা সামরিক শাসন মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তি এবং নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির দলের জয়ের স্বীকৃতি আদায়ে চাপ বাড়ানোর ব্যাপারেও তারা দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ।

মং সংখ নামের এক আন্দোলনকারী বলেছেন, “আমরা জানি, যে কোনো সময় গুলিতে নিহত হতে পারি। কিন্তু জান্তার অধীনে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। মুক্তির জন্য বিপজ্জনক এই পথই বেছে নিয়েছি আমরা।

“আমরা যেভাবে পারি জান্তার সঙ্গে লড়াই করে যাব। সামরিক জান্তার শেকড় গোড়া থেকে উপড়ে ফেলাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।”

বৃহস্পতিবার ইয়াংগন ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর মোনিয়ায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গুলি-কাঁদুনে গ্যাসের পরও ইয়াঙ্গনে বিক্ষোভকারীরা ফের জড়ো হয়ে স্লোগান দেয় এবং প্রতিবাদী গান গায়। বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ইয়াঙ্গনের পশ্চিমের শহর পাথেইনেও গুলি চালিয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

এদিন মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় এবং মন্দিরের শহর বাগানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে; কয়েকশ আন্দোলনকারীকে সু চির ছবি ও ‘আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দাও’ ব্যানার নিয়ে মিছিল করতে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মান্দালয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পাঁচটি যুদ্ধবিমান নিচু দিয়ে আলাদা আলাদা বিন্যাসে বেশ কয়েকবার উড়ে যায় বলে শহরটির বাসিন্দারা জানিয়েছেন। একে সামরিক জান্তার শক্তির প্রদর্শনী হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

বুধবার বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশ ও সৈন্যরা গুলি চালানোর আগে বিক্ষোভকারীদের সেভাবে সতর্কও করেনি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শানার পরে নিউ ইয়র্কে জানান, বুধবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সংঘাতে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

এ নিয়ে দেশটিতে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গেছে।

“মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে দেখে মনে হচ্ছে তাদের এখনকার উদ্দেশ্য হচ্ছে সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া,” বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক রিচার্ড উইয়ার। 

এক ঘটনায়, নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তির শরীরের পেছনের অংশে গুলি করা হয়েছে বলেও মনে হচ্ছে, জানিয়েছে এ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি।

এসব প্রসঙ্গে দেশটিতে ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের এক মুখপাত্রের মন্তব্যের জন্য তাকে টেলিফোন করা হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।