ক্যাটাগরি

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: জামিন হয়নি ইকবাল ভূঁইয়ার

তার ২০টি আবেদনে জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে নির্দেশনাসহ বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।   

নির্দেশনায় আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন–দুদককে বলেছে, আদেশ পাওয়ার আড়াই মাসের মধ্যে ইকবাল হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ২১টি মামলার তদন্ত শেষ করে বিচারিক আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে। 

দুদক যদি তা না পারে, তখন নিম্ন আদালতে ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া জামিন চেয়ে আবেদন করলে সে আবেদন বিবেচনা করতে বলেছে হাই কোর্ট। 

আদালতে ইকবাল হোসেন ভূঁইয়ার জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মমতাজ পারভীন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, এ কে এম ফজলুল হক ও শাহীন আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। 

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ১৯৬ কোটি টাকা আত্মসাতে ইকবাল হোসেন ভূঁইয়ার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তার নামে এ সংক্রান্ত ২১টি মামলা রয়েছে। তিনি সার্ভে ফার্মের পরিচালক। তিনি একদিনের মধ্যে সম্পদের অতিমূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন, যে প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করে বেসিক ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করা হয়।”

আইনজীবী মমতাজ পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারার ৫ উপধারা অনুযায়ী যে কোনো মামলা ১২০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিতে হয়। পরবর্তীতে দায়রা জজ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সে মেয়াদ আরও ৩০ দিন বাড়ানো যায়। এই মামলাগুলোর তদন্ত সাড়ে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। দুই হাজার দিনের বেশি হয়ে গেছে। তার পরও তদন্ত শেষ হচ্ছে না। 

“দুদকের মামলার তদন্ত হয় সাধারণত টাকার উৎস ও গন্তব্যকে কেন্দ্র করে। এখন টাকার গন্তব্য নির্ণয় করতে গিয়ে যদি অনন্তকাল ধরে সেটি তদন্ত করতে থাকে, তাহলে তো আইন লঙ্ঘন করা হবে। যা এসব মামলার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে করা হয়েছে। ১৫০ দিনের জায়গায় দুই হাজার দিনের বেশি সময় পার করে ফেলা হয়েছে। দুদকে যে মামলাগুলো হয়, সেগুলোর তো নথিভিত্তিক প্রমাণ থাকে। এখন নথি থাকার পরও যদি সাড়ে ৫ বছর লাগানো হয়, তার দায় তো আসামির না।” 

এসব যুক্তি তুলে ধরেই জামিন চাওয়া হয়েছিল জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, “আদালত জামিন প্রশ্নে যে রুল জারি করেছিল, তা নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছে। বলেছে, আদেশ পাওয়ার আড়াই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে।”  

২০১২ সালে জুন-জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন থানায় মোট ২১টি মামলা করে দুদক।

এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মোট ১৯৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। 

২০১৯ সালের ৪ মার্চ এসব মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইকবাল হোসেন ভূঁইয়াকে চিঠি দেয় দুদক। সে নোটিসে হাজির না হয়ে ওই বছরের ৬ মে হাই কোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নেন তিনি। 

আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ১৮ জুন নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পর্যন্ত তার আগাম জামিন বহাল রাখে আদালত। 

পরে ১৪ জুলাই আদালতে গিয়ে ফের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া। কিন্তু আদালত জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। 

এরপর থেকে কারাগারেই আছেন ইকবাল। পরে বাকি ২০ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। 

কারাগারে যাওয়ার পর গত বছর মার্চে হাই কোর্টে একটি মামলায় জামিন আবেদন করেন তিনি। তখন ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে। 

পরে বাকি ২০ মামলায় বিভিন্ন সময় নিম্ন আদালতে জামিন চাইলে সেখানে তার জামিন আবেদন খারিজ হয়। সেসব খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি হাই কোর্টে আবেদন করলে আদালত তাকে একটি মামলায় জামিন দেয়। বাকি ২০ মামলায় জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে। 

সে রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর বৃহস্পতিবার নির্দেশনা দিয়ে রায় দিল হাই কোর্ট। 

রুল শুনানিতে দুদককে উদ্দেশ্য করে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দুর্নীতির আসামিরা সম্পদ-সম্পত্তির দামের অতি মূল্যায়ন করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করে থাকে, যা বন্ধ করা দরকার। মামলার তদন্ত শেষ করতে দেরি করলে মামলার বিষয়বস্তু নষ্ট হয়ে যায়, সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়। সে সুবিধা পায় আসামিরা। 

বিচারক বলেন, “চা গরম গরম খেলে যে স্বাদ পাওয়া যায়, সেই চা ঠাণ্ডা করে খেলে স্বাদ পাওয়া যাবে না। অনেক সময় খাওয়ারও উপযোগী থাকে না, ফেলে দিতে হয়। মামলাগুলোর তদন্ত ধীরগতিতে হলে বা দীর্ঘ সময় ধরে চললে ঠাণ্ডা চায়ের মত হয়ে যায়।”