উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পোনাসারী পুকুরপাড় জামে মসজিদে সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের ছাত্র স্থানীয় বাবুল শেখের ছেলে মো. সাইফের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কোরবানী ঈদের আগ পর্যন্ত পোনাসারি গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে মোমিনুল হক মোমিন ওই মসজিদ কেন্দ্রে পড়াতেন। কোরবানী ঈদের পর থেকে তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যান। এরপর থেকে তিনি আর পড়ান না।
মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহমান বাবুল প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই মসজিদের কামিটিতে আছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই কেন্দ্রটি চলছে। মোমিন এই মসজিদের ইমাম না হলেও শুরুতে নিজেকে এই কেন্দ্রের শিক্ষক দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে-মধ্যে পড়াতে যেতেন।
গত কোরবানী ঈদের আগে মোমিন উপজেলার নয়ানগর হাফিজিয়া মাদ্রাসায় চলে গেছেন এবং বর্তমানে তিনি ওই মাদ্রাসার শিক্ষক বলে জানান বাবুল।
“তিনি পোনাসারী পুকুরপাড় জামে মসজিদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের আর শিক্ষক নন। তারপরও তিনি এই মসজিদ কেন্দ্রের শিক্ষক হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বেতন তুলেছেন।”
কেন্দ্রটি শুরুর প্রথম এক বছর তিনি মসজিদ কমিটির ফান্ডে ১১ হাজার এবং দ্বিতীয় বছর ১৪ হাজার টাকা জমা করলেও বাকি টাকা তিনি নিয়ে যান বলে বাবুলের ভাষ্য।
মোমিনের বাবা মোশাররফ হোসেন তমিজ ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি।
তিনি বলেন, “করোনা চলাকালে শিক্ষার্থীদের পড়ানো তা সম্ভব হয়নি। তবে মোমিন আমাকে জানিয়েছে সে ওই গণশিক্ষা কেন্দ্রে আর পড়াবে না। মোমিন ওই কেন্দ্রের শিক্ষকতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবে।”
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে মোমিন বলেন, পোনাসারী পুকুর পাড় জামে মসজিদ কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই বছর হয় স্থানীয় নয়াপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় চলে যান তিনি। এখনও সেখানেই আছেন। করোনার কারণে কেন্দ্রটি সরকারি নির্দেশে বন্ধ থাকায় তিনি পড়াতে যাননি।
“সর্বশেষ গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত আমি ওই কেন্দ্রের শিক্ষক হিসেবে বেতন তুলেছি। আমি আমার নামে কেন্দ্রটি খুলে এনেছি তাই আমিই বেতন ভাতা তুলেছি। করোনার জন্য বন্ধ থাকায় আমি আর ওই কেন্দ্রে পড়াতে যাইনি।”
তবে মসজিদ কমিটিকে বেতনের টাকা দেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোন কেটে দেন; পরে ফের ফোন করলেও আর ধরেননি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাপাসিয়া উপজেলার ফিল্ড অফিসার মো. বেনজীর আহমাদ বলেন, গত নভেম্বর পর্যন্ত টাকা তুললেও পরবর্তীতে ঘটনাটি অবগত হওয়ার পর তার বেতন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জেলা কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, মসজিদ গণশিক্ষা কেন্দ্রে কেউ না পড়িয়ে বেতন তোলার কারো এখতিয়ার নেই। পেনাসারী পুকুর পাড় জামে মসজিদ কেন্দ্রে এই ধরনের হয়ে থাকলেও ঘটনাটি তার জানা নেই।
এই ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
ই ব্যাপারে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কাপাসিয়ার ইউএনও মোসা. ইসমত আরা বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে জেলা প্রশাসক তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে জানা যায়, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৃহৎ প্রকল্প। আর্থ সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে মসজিদের ইমামদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৩ সালে মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক এবং ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরী ও অক্ষরজ্ঞানহীন বয়স্কদের জন্য এই কার্যক্রম শুরু করে।
এই প্রকল্পে মসজিদের ইমামগণ মসজিদ কেন্দ্রে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার্থীদের বাংলা, অংক, ইংরেজি, আরবি, নৈতিকতা ও মূল্যবোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দান করছেন।