শুধু কোনত্রেরাস নন, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর হাজার হাজার মানুষকে কোভিড চিকিৎসার খবর যোগাতে দিয়ে সহায়-সম্বল বিক্রি করে এখন ভিক্ষা করতে হচ্ছে বা ধারের অর্থে কোনো রকমে দিন পার করছেন।
কান্না ভেজা চোখে ৩৪ বছরের কোনত্রেরাস বলেন, ‘‘আমি আমার সব কিছু বন্ধক রেখেছি। আমি আমার ভাইবোনদের বলেছি, মাকে বাঁচাতে যদি আমাদের বাড়ি বিক্রি করতে হয় তবে আমি কোথায় থাকবো? আমরা বাড়িটি বিক্রি করতে চলেছি…।”
হাসপাতালের সামনে একটি হ্যামক টানিয়ে সেখানেই মায়ের খবর পাওয়ার অপেক্ষা করছেন কোনত্রেরাস।
করোনাভাইরাস মহামারীতে সবথেকে বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোর একটি লাতিন আমেরিকা। মহামারী ওই অঞ্চলের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষকে দারিদ্রসীমার নীচে ঠেলে দিয়েছে। দেশগুলোতে দুর্বল সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ বছরে ওই অঞ্চলে এত প্রকট দারিদ্র দেখা যায়নি। এজন্য সম্পদ বন্টনে ভারসাম্যহীনতা, শ্রম বাজারে অনিশ্চিয়তা এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষার অভাবকে দায়ী করা হয়েছে।
পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষার অভাবে জনগণকে নিজেদের পকেট থেকে চিকিৎসার বিল মেটাতে হচ্ছে।
৩৪ বছরের মিরতা গঞ্জালেস প্যারাগুয়ের দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহরে বিউটি সেলুনে কাজ করেন। তার স্বামী জেসুস কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। স্বামীর চিকিৎসার পেছনে তার প্রায় ৬৫ লাখ গুয়ারানি (৯৮৫ মার্কিন ডলার) খবর হয়। পরিবার এবং বন্ধুরা লোকজনের কাছ থেকে অর্থ তুলে এবং পিজা বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ যোগাড় করেছেন।
গঞ্জালেস বলেন, ‘‘এখানে যোগযোগ এবং অর্থ ছাড়া আপনাকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে।”
৭০ লাখ মানুষের দেশ প্যারাগুয়েতে প্রতি পাঁচজনে মাত্র একজন তাদের কাজের জায়গা থেকে সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা বীমা পান। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও সে সুযোগ সীমিত।
গত জানুয়ারি থেকে ব্রাজিলের মানাউস নগরীতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ভয়াবহ মাত্রা বেড়ে গেছে। সেখানে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।
যে কারণে সিনথিয়া মেলো নিজের সব কাজ ছেড়ে বাড়িতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮৭ বছরের মায়ের সেবা করছেন। বাড়িতে নার্স ও ভেন্টিলেটর ভাড়া করে এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে চিকিৎসা চলছে। এজন্য তাদের অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
‘‘সেখানে হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই। আমরা মা এখন অনেকটা সুস্থ। তারপরও প্রতিমাসে সাড়ে তিন হাজার মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হচ্ছে। আরো অন্তত কয়েক সপ্তাহ তার চিকিৎসা চালাতে হবে, কয়েক মাসও হতে পারে।
‘‘খরচ এখনো শেষ হয়নি।”
লাতিন আমেরিকায় এখন পর্যন্ত ছয় লাখ ৮৭ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ইউরোপের পর যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মেক্সিকোর ২৪ বছর বয়সের রেনাতা গ্রানোদোসের পরিবার তাদের মেয়ে পালোমার চিকিৎসার খবর যোগাতে তাদের পিক-আপ ট্রাকটি বিক্রি করে দিয়েছে। হাসপাতালে ২১ দিন চিকিৎসার পর পালোমা মারা যায়। হাসপাতালে তাদের বিল এসেছিল ৭০ লাখ মেক্সিকান পেসো (তিন লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার)।
গ্রানোদোসে জানান, তার বোন নিজেও মেডিকেলের শিক্ষার্থী ছিলেন।
‘‘তাকে হাসপাতালে ভর্তির পর হু হু করে বিল বাড়ছিল। অর্থ যোগাড় করতে আমাদের একটি উপায় বের করতেই হত।
‘‘আমার মনে হয়েছে এটা একটি ঝড়ের মত যেটার জন্য কেউ প্রস্তুত থাকে না।”