স্বাধীনতার
সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় গণফোরামের
সভাপতি কামাল হোসেন ছিলেন না।
তিনি
অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানান মন্টু।
সভায়
গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মন্টুর সঙ্গে ছিলেন সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদ, জগলুল
হায়দার আফ্রিক প্রমুখ।
গণফোরামের
এই অংশের মুখপাত্র হিসেবে সভায় লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সুব্রত চৌধুরী।
লিখিত
বক্তব্যে বলা হয়, “বর্তমানে রাষ্ট্র একটি ভয়ংকর সার্বিক নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এই অবস্থায় যারা দেশপ্রেমিক এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ ও লালন করেন, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ
হতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
“জাতীয়
ঐক্যের মাধ্যমে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনকে হটাতে হবে এবং বর্তমান বিরাজমান অবস্থা
থেকে জাতিকে নিষ্কৃতি দিতে জাতীয় সরকার গঠন অপরিহার্য।”
সভায়
সভাপতির বক্তব্যে গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অবস্থান মধ্য বামপন্থার দিকে। আর এখন আওয়ামী
মধ্য ডানপন্থার দিকে ঝুঁকেছে।
গণফোরাম
মধ্য বামপন্থার রাজনীতি কাজ করতে চায়, বলেন এক সময়ের এই আওয়ামী লীগ নেতা।
মন্টু
বলেন, “আমরা সম্মেলন নিয়ে এখন ব্যস্ত। সম্মেলনটা শেষ করে নিয়ে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক
দলগুলোর সাথে আলোচনা করব। যে পরিধিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আছে, তাকে আরও বড় ও আরও সুন্দর
করা যায় কি না?
“মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষের শক্তি নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গণতন্ত্রমনা শক্তিকে নিয়ে আমরা জাতীয়
ঐক্য করতে চাই, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করতে চাই।”
বিএনপি
নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে এখনও রয়েছে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান তিনি।
মন্টু
বলেন, “একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়েছিল। আমরা এই ফ্রন্টে নেই,
এটা আমরা কখনও বলিনি।
“এখন
এই ফ্রন্টের কার্যক্রম কার্যকর নেই, স্থগিত আছে। এটা যদি ভবিষ্যতে চালু হয় … আগামী
২৮ ও ২৯ মে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত আমরা নেব, আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকব না নতুনভাবে
আরও বৃহত্তর পরিসরে ঐক্যফ্রন্ট করব।”
কামাল প্রসঙ্গ
গত
এক বছর ধরে টানাপড়েন, বহিষ্কার আর পাল্টা বহিষ্কারের মধ্যে এগিয়েছে গণফোরাম। দলটিতে
মন্টুদের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া সম্প্রতি পদত্যাগও
করেছেন।
গণফোরাম
গঠনকারী কামাল হোসেন এই মতবিনিময় সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণ জানিয়ে মন্টু বলেন, গণফোরামের
সভাপতি ‘অসুস্থ বিধায়’ এই অনুষ্ঠানে তাকে আসতে বলা হয়নি।
তবে
কয়েকদিন আগেই জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্টুদের দলত্যাগী হিসেবেই চিহ্নিত
করেন।
তিনি
বলেছিলেন, “গণফোরাম থেকে কিছু লোক বেরিয়েছে। তারা বেরুতেই পারেন। বাধ্য করে কাউকে তো
রাখা যায় না। ওদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন আপনারা কেন বেরিয়ে গেছেন?”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ভয় দেখানোর অস্ত্র: কামাল
মতবিনিময়
সভায় মন্টুদের বক্তব্যে তাদের আসন্ন সম্মেলনে কামাল হোসেনকে বাদ দেওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া
যায়।
মোস্তফা মোহসিন মন্টু
মন্টু
বলেন, “ড. কামাল হোসেন, আমি বা অমুক ব্যক্তি বড় বস্তু না। আমাদের এটা একটা সংগঠন, এর
একটা গঠনতন্ত্র আছে, এটার নিয়মাবলী আছে। এই গঠনতন্ত্র মোতাবেক সংগঠন চলবে। দলের কোনো
নেতা মারা গেলে সংগঠন বন্ধ হয়ে যাবে না, চলে গেলেও সংগঠন বন্ধ হবে না।
“আমাদের
কাউন্সিলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, আমাদের দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন। কাউন্সিলররা ডিসাইড
করবেন, কে নেতৃত্বে থাকবেন, কে থাকবেন না।”
কামাল
হোসেন বলে আসছেন, মন্টুরা গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন, যার সঙ্গে গণফোরামের
সম্পর্ক নেই।
মন্টু
বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে গণফোরামের নিবন্ধন কোনো ব্যক্তির নামে নয়, গণফোরামের নামে।
‘সাংবাদিকদের বারুদ কোথায়?’
সভায়
বর্তমান সরকারের ‘অপশাসন, দুর্নীতি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাক স্বাধীনতা হরণের’
বিষয়গুলো তুলে ধরেন সুব্রত চৌধুরী।
ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ
করেন ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী সাইয়িদ।
তিনি
বলেন, “আপনাদের সাংবাদিকদের কোনো দাবি তারা (সরকার) মেনেছে? মানে নাই, প্রতারণা করেছে।
কিন্তু আপনাদের মধ্যে সেই বারুদ কোথায়? আপনারা জ্বলে উঠতে পারেন না কেন?
“আমরা
পারি না-এটা আমাদের ব্যর্থতা। আপনারা পারেন না কেন? পাকিস্তান আমলে দেখেছি, সাংবাদিকরা
আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন। স্বৈরশাসক সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের যে ভূমিকা ছিল,
সেই ভূমিকা আজকে সাংবাদিকদের কি আছে? তাদের আত্মসমালোচনা করা দরকার।”
বাংলাদেশ
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এক পর্যায়ে বলেন, “গণফোরাম
সাংবাদিকদের পক্ষে কী করেছে? এটা তো মতবিনিময় অনুষ্ঠান। যদি সাংবাদিকদের নিয়ে সমালোচনা-আলোচনা
করতে চান, আমি ইনভাইট করছি, আমি আছি, আজিজ ভাই (আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া) আছেন, প্লিজ কাম
টু দি প্রেস ক্লাব। আমাদের ইউনিয়নের নেতারাও আছেন, প্রেস ক্লাবের নেতারাও আছেন।”
বুলবুল
আরও বলেন, “আপনারা বলেছেন, কেন সাংবাদিকরা মাঠে নামে না? সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের
দাবি নিয়ে গণফোরামের কি প্রোগ্রাম আছে? বলেন। সাংবাদিকদের দাবি নিয়ে কয়টা প্রোগ্রাম
করেছেন আপনারা? আমরা তো এখনও মাঠে আছি।”
মতবিনিময়
সভায় বুলবুল ছাড়াও বাংলাদেশের সংবাদ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, জনকণ্ঠের উপ সম্পাদক
এনাম আবেদীনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
গণফোরামের
নেতাদের মধ্যে ছিলেন মহসিন রশিদ, জামাল উদ্দিন আহমেদ, আসাদুজ্জামান, হেলাল উদ্দিন,
আইয়ুব খান ফারুক, খান সিদ্দিকুর রহমান, লতিফুল বারী হামীম, আবদুল হাসিব চৌধুরী, মো.
জাহাঙ্গীর, নাসির হোসেন, তাজুল ইসলাম, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, সানজীব রহমান শুভ, ইসমাইল
সম্রাট।