গ্রেফতাররা হলেন- মো.
তারিকুল ইসলাম (৪০), মো. আব্দুল্লাহ বিশ্বাস (৩৩), মো. আল মাসুম (২৮) ও মো. সাইদুল
ইসলাম রাজু (৩০)।
আব্দুল খালেক নামে এক ভুক্তভোগীর
অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের এর একটি দল মঙ্গলবার যশোর, মাগুরা
ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
সিআইডির অতিরিক্ত
উপমহাপরিদর্শক শেখ ওমর ফারুক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আব্দুল খালেকের স্ত্রী
ও সন্তান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। এরমধ্যে পরিচয় হয় ‘জ্বিনের বাদশা’ তারিকুল
ইসলামের সঙ্গে। যোগাযোগের এক পর্যায়ে ‘জ্বিনের বাদশা’ খালেককে বলে, সে চিকিৎসা
করতে পারবে, কিছু ওষুধও দেয়।
“ওষুধ খাওয়ার পর স্ত্রী-সন্তান
কিছুটা সুস্থ হয়েছে বলে খালেকের মনে হয়। তখন জ্বিনের বাদশার প্রতি খালেকের বিশ্বাস
জন্মে। এরপর প্রতারক জ্বিনের বাদশা খালেককে বলে, যত টাকা দরকার তত টাকা
তৈরি করে দিতে পারবে। প্রমাণ হিসেবে খালেকের সামনেই একটি বালতির মধ্যে রাখা সাদা
কাগজকে এক হাজার টাকার একটি চকচকে নোট বানিয়ে দেখায় তারিকুল।
“খালেক তখন জ্বিনের
বাদশাকে বলেন, ‘এটা তো নতুন নোট, আপনি কিছু পুরনো টাকা তৈরি করে দেখান’। এরপর তারিকুল
ওই বালতির মধ্যে কিছু পুরনো নোটও তৈরি করে তাকে দেখায়। ম্যাজিকের মতো এমন ঘটনা
দেখে খালেকের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়।”
ওমর ফারুক বলেন,
খালেকের চাহিদা অনুযায়ী ৬ কোটি টাকা তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ‘জ্বিনের
বাদশা’রূপী তারিকুল। তবে শর্ত দেয়, পৃথিবীতে যত মসজিদ আছে, সবগুলোতে কোরআন শরীফ
কিনে দিতে হবে। সেজন্য এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা লাগবে। তাহলে কার্টনে সাদা কাগজ রেখে
ওই ছয় কোটি টাকা তৈরি করে দেবে ‘জ্বিনের বাদশা’।
“তার কথায় বিশ্বাস করে
বাজার থেকে ছয় কার্টন এ ফোর সাইজের সাদা কাগজ কিনে আনেন খালেক। কাগজ কিনে আনার পর
জিনের বাদশা বলেন, খালেক যতদিন কোরআর শরীফ কেনার জন্য এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা দিতে না
পারছেন, ততদিন কার্টন খোলা যাবে না। খালেক কখন কার্টন নিয়ে ঘরের এক কোনায় রেখে দেন।
“জ্বিনের বাদশার
প্রলোভনে খালেক দফায় দফায় এক কোটি ১৩ লাখ টাকা দেন। খালেকের পরিচিত একজন দেন আরও
৫৩ লাখ টাকা। এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা হতে আরও দুই লাখ টাকা বাকি, তখন ওই
টাকা দেওয়ার জন্য জ্বিনের বাদশা চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে খালেকের সন্দেহ হতে
থাকে, আসলেই ওই কার্টনে এত টাকা আছে কিনা। সন্দেহের বশে তিনি কার্টন খুলে দেখেন
সাদা কাগজ ছাড়া আর কিছু নেই।”
প্রতারক চক্রটি তখন
ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে বাকি দুই লাখ টাকা একটি কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাতে বলে। খালেক
তখন বিষয়টি সিআইডিকে জানান। এর ভিত্তিতেই সিআইডি অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের সদস্যদের
গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে
গ্রেপ্তাররা অপরাধ স্বীকার করেছে জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, তাদের কাছ থেকে একটি
প্রাইভেট কার, নগদ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, সাদা কাগজসহ বাক্স, মাজারের মাটি, লাল
কালিতে আরবি লেখা কাগজ উদ্ধার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে
হাজারীবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানানো হয় সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে।