আগামী এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতনবাবদ প্রণোদনার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
গত বছরের শুরুতে সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর এর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রধান কর্মসংস্থান ও রপ্তানিখাত পোশাক শিল্প কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল।
সেই সময় সরকারের বিশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কারখানাগুলোকে শ্রমিকদের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য চার শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ড ভোগের পর ওই ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও শিল্প মালিকদের অনুরোধে তা এক বছর করা হয়েছে। ফলে আগামী জুলাইয়ের আগে প্রণোদনার ওই কিস্তি পরিশোধের প্রয়োজন হচ্ছে না।
পোশাক মালিকরা বলছেন, ওই ঋণের কারণেই মহামারীর ধাক্কা মোকাবেলা করে কয়েক হাজার রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প ও এর কয়েক লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান টিকে আছে।
মহামারী শুরুর পর গত অর্থবছরের মার্চে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ, এপ্রিলে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, মে মাসে ৬১ শতাংশ, জুনে ২৫ শতাংশ কমে যায়। এপ্রিলে রপ্তানি কমে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল।
এমন পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানাসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের কর্মীদের এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসের বেতনভাতা দিতে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয় সরকার। প্রণোদনা পেয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। জুলাই-অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন (এক হাজার কোটি) ডলার আয় করেছে।
তবে ডিসেম্বর থেকে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতিমাসেই রপ্তানি আয় আবার একটু একটু করে কমছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে ছয়, জানুয়ারিতে পাঁচ এবং ফেব্রুয়ারিতে চার শতাংশ হারে কমেছে রপ্তানি আয়।
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারের প্রথম ধাপের প্রণোদনার কারণে শিল্প মালিকরা এখনও টিকে থাকতে পারছে। মাঝে রপ্তানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও এখন পরিস্থিতি আবার খারাপ হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুতার অস্বাভাবিক মূল্য ও জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি। পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে ক্রেতারা ন্যায্যমূল্যও দিতে চাচ্ছে না। অবকাঠামোর খরচ পোষাতে লাভ থাকবে না জেনেও কারখানাগুলোকে কার্যাদেশ নিতে হচ্ছে।
“আগামী সেপ্টেম্বরের আগে পোশাক শিল্পখাতের চলমান অচলাবস্থার উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ সময়ের মধ্যেই রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদ রয়েছে। শ্রমিকদেরকে বেতনের পাশাপাশি বোনাস ও অন্যান্য ভাতা দেওয়ারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই এই সময়ে আরেকটি প্রণোদনা ও অন্যান্য নীতি সহায়তা না দিলে এই শিল্পকে টেকানো যাবে না বলে রপ্তানিকারকরা মনে করেন। এপ্রিল, মে, জুন অন্তত এই তিন মাসের বেতনবোনাসের জন্য প্রণোদনা আমরা আশা করি।”
চলতি মাসের শুরুতে ঢাকার একটি হোটেলে জরুরি সাধারণ সভা করে বিকেএমইএ। সেখানে চলমান সমস্যাগুলো আলোচনার পাশাপাশি সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা আদায় করতে নেতাদের প্রতি জোর দাবি জানান পোশাক শিল্প মালিকরা।
বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিজিএমইএর সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি, বিকেএমইর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
খাত সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পোশাক খাতের ভালোমন্দ দেখভাল করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের নেতৃত্ব টাস্কফোর্স ফর আরএমজি নামের একটি সেল গঠন করা হয়েছে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, বিকেএমইএর সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএরে সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এই সেলের সদস্য।
এই সেলের নেতারাই নতুন আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছেন বলে জানান হাতেম।