গয়নাছড়া
খালের উপর নির্মিত তাদের ভবনের একাংশ ভাঙা শুরুর পরদিন বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম
প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ দাবি জানান।
সংবাদ
সম্মেলনে ইউএসটিসি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর
কাছে আকুল আবেদন, এই ধ্বংসযজ্ঞ যেন বন্ধ করা হয়। এর পেছনে হয়ত কোনো চক্র আছে। আপনি
নির্দেশ দিন, এটা বন্ধ করুন।
“প্রধানমন্ত্রী
আপনি দেখুন আমাদের কিভাবে নির্যাতন করছে। এটা ভেঙে কার লাভ হল? ডিজিটাল সার্ভে করে
আমাদের জমি দেওয়া হয়। আগে কখনও বলেনি এখানে গয়নাছড়া খাল আছে। সিডিএ’র অনুমোদিত
ভবনের নকশাতেও খালের কোনো চিহ্ন ছিল না।”
নগরীর
গয়নাছড়া খালের জমিতে নির্মিত ইউএসটিসি’র বহুতল ভবনের একাংশ ভাঙার কাজ বুধবার সকালে
শুরু করে সিডিএ। ১৮ তলা ওই ভবনটি ইউএসটিসির একাডেমিক এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও
প্রকৌশল অনুষদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশ
রেলওয়ের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে ১৮ বছর আগে ওই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু
করেছিল ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ।
১৩
হাজার বর্গফুটের ভবনটির নকশায় ১৬ তলার অনুমোদন থাকলেও ১৮ তলা পর্যন্ত করা হয় বলে
জানান সিডিএর কর্মকর্তারা।
নগরীর
কাট্টলী এলাকার মহেশখালী খালের সঙ্গে যুক্ত গয়নাছড়া খালটি পাহাড়তলী হয়ে ফয়’স লেকে
গিয়ে শেষ হয়েছে। এটি প্রায় পৌনে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ।
খালের জমি উদ্ধারে ইউএসটিসি ভবনের একাংশ ভাঙা শুরু
সংবাদ
সম্মেলনে ইউএসটিসি উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর বলেন, ১৯৯২ সালে রেলওয়ে ৯৯ বছরের
লিজ দেয় এবং যথাযথভাবে এক একর ভূমি হস্তান্তর করে। ২০০২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিডিএ
চিঠি দিয়ে ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষকে ১৬ তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়।
“আমাদের
জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল আরএস অনুসারে। ভবন নির্মাণের পর গত ১৫ বছর ধরে সেখানে
একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
২০১৯
সালের সেপ্টেম্বরে একবার সিডিএর উচ্ছেদ অভিযানের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের
মধ্যস্থতায় বিষয়টির ‘সমাধান’ হয়েছিল বলেও দাবি করেন উপাচার্য জাহাঙ্গীর।
তিনি
বলেন, ইউএসটিসি ভবনের সীমানা দেয়াল থেকে আরএস মৌজা মোতাবেক খাল ও রাস্তা নির্মাণের
জন্য ৪০ ফুট প্রশস্ত জায়গা আছে। ওইটা ২০ ফুটের খাল। অনায়াসে রাস্তার নিচ দিয়ে বক্স
কালভার্ট করে কম খরচে প্রকল্প সম্পন্ন করা সম্ভব।
“গৃহায়ন
ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলেছে, এভাবে করে দেবেন। সেখান থেকে এসে দুই মাসের মাথায়
এভাবে ভবন ভেঙে দেওয়া হল! আমি নিজে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা,
কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান, সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি। ৪০ ফুট দূর দিয়ে খাল
যাওয়ার কথা। তাহলে কেন এমন হল?”
অধ্যাপক
জাহাঙ্গীর বলেন, “একজন উপাচার্য হিসেবে গতকালের এ ঘটনায় আমি কেঁদেছি। এটা আমার
সম্পত্তি নয়। ইউএসটিসির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম সাহেবের
বা উনার ছেলেমেয়েদেরও নয়। আমরা ক’দিন বাঁচব। এটা তো কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না।
“এটা
একটা জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে নানা রকম বায়ো টেকনোলজি, ন্যানো টেকনোলজি এবং
ফার্মেসি বিষয়ক গবেষণা হচ্ছে। সেখানে আঘাত করা হয়েছে।”
১৬
তলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ১৮ তলা ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মের
ব্যত্যয় হলে সিডিএ’র আইন মতে জরিমানা করতে পারত।
সংবাদ
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউএসটিসির উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আবছার, অধ্যাপক
ডা. এএমএম এহতেশামুল হক, ডা. কামরুল ইসলাম, ডা. নজরুল কাদের শিকদার, প্রক্টর নূরে
আলম সিদ্দিকী, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মো. আবদুর রশিদ এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের
প্রতিনিধি ডা. তাহিয়া তসলিম চৌধুরী।
সিডিএর
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় গয়না ছড়া খাল পুনঃখনন, খাল পাড়ে রাস্তা নির্মাণ ও
সিল্ট ট্র্যাপ (বালির ফাঁদ) নির্মাণের কাজ চলছে।
ইউএসটিসি
ভবনের পেছনে এসে প্রকল্পের কাজ থমকে যায়।
খালের
জমিতে নির্মিত ভবনটির অংশ ভেঙে তারপর বাকি কাজ করা হবে বলে জানান সিডিএর সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তারা।
ভবনটি
মোট ১৩ হাজার বর্গফুটের। এর মধ্যে চার হাজার বর্গফুটের মতো ভাঙা হবে। যে জমিতে ভবন
নির্মাণের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল সেখানে খালি রেখে খালের জমিতে ভবনের একাংশ নির্মাণ
করা হয়েছে বলে দাবি সিডিএ’র।
ভবনের
ওই অংশ ভাঙতে ১০-১৪ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।