ক্যাটাগরি

পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে তফাতটা কোথায়: ফখরুল

তিনি অতীত স্মরণ করে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে
নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি দলের প্রতি।

শুক্রবার জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জাতীয়
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ফখরুল।

গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে কৃষক দলের চতুর্থ
জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে ২২ বছর পর। শেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ১৬ মে।

সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চের প্রাঙ্গনে জাতীয়
পতাকা ও দলীয় উত্তোলন, রঙিন বেলুন ও সাদা কবুতর উন্মুক্ত করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক
উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব ও আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু।

বিকাল তিনটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে
হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন।

সম্মেলনে সারাদেশ থেকে সংগঠনটির ৫৪৮ জন
কাউন্সিলর অর্থাৎ ৭৯টি সাংগঠনিক জেলার ৩৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ১৫৩ জন
প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।

উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানের বক্তব্যের পর সংগঠনের বিধান
অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে কৃষক দলের ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত
ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। বিকালে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে।

গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর
নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিএনপি।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন,
“আপনারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় বসে আছেন, দখল করে বসে আছেন। কি তফাত আপনাদের
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাকে বুঝাবেন একটু? আমি পাকিস্তান হানাদার
বাহিনীর সাথে আপনাদের কোনো তফাত দেখি না। তারাও জোর করে বন্দুক দিয়ে মানুষকে মেরে
ক্ষমতা দখল করে বসেছিল। আপনারা আজকে সেই একই কায়দায় মানুষকে হত্যা করে, নির্যাতন
করে, জোর করে আপনারা ক্ষমতায় বসে আছেন।

“দয়া করে অতীতের কথা, যখন আপনারা গণতন্ত্রের
জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, সেই কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগকে যদি বাঁচাতে চান তাহলে
অবিলম্বে যা আপনারা করেছেন তার জন্য মাফ চেয়ে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতা
হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। পদত্যাগ করেন, নির্বাচন দিন, নতুন নির্বাচন কমিশনের
পরিচালনায় নির্বাচনে নতুন সরকার আসুক, নতুন পার্লামেন্ট আসুক।”

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা
তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় মামলায়
সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি অসুস্থ। তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ৬ মাস
বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কোথায় সাজা স্থগিত করছে?”

“আপনারা তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। চিকিৎসার
জন্য বাইরে যেতে চেয়েছেন সেটাও আপনারা দেন নাই। আপনারা তাকে বাংলাদেশে রেখেই
চিকিৎসা করতে বলছেন। যেখানে তার চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিনে দিনে।”

তিনি খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত
চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
বাতিলেরও দাবি করেন তিনি।

খালেদা জিয়ার সময় কৃষিঋণ মওকুফ, জিয়ার সময় ২৫
বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফসহ বিএনপির বিভিন্ন মেয়াদে কৃষকদের উন্নয়নে নেওয়া
পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, “এই সরকার এখন পর্যন্ত কৃষকদের
জন্য এমন কিছু করেনি যা দিয়ে তারা বলতে পারবে আমরা কৃষকদের জন্য এই এই কাজগুলো
করেছি। কোভিড-১৯ এর প্রণোদনা দিয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে, কৃষি ক্ষেত্রেও দিয়েছে।
কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রের টাকাগুলো তাদের নেতারা পকেটে ভরে নিয়েছে। আড়াই হাজার টাকা
করে অনুদান দেওয়ার কথা ছিল, সেটাও তারা পকেটে ভরে নিয়েছে। এই সরকার লুটেরা সরকারে
পরিণত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ দেশটাকে পৈত্রিক
সম্পত্তি করে নিয়েছে। এই যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তিনি খুব
সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, চমৎকার চমৎকার আসনে বসে তিনি প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে
বিষোদগার করতে থাকেন। প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে ধমক দেন, শিক্ষা দেন। আরে আপনি আগে
নিজের ঘরকে শিক্ষা দেন।”

“আপনার ভাই কাদের মির্জা সাহেব যে সমস্ত কথা
আপনার সম্পর্কে বলেন, আপনাদের নেতাদের সম্পর্কে বলেন, সেটার পরে তো আপনাদের থাকার
কথা না, পদত্যাগ করা উচিত। আপনারা নিজের ঘরে নিজেরা মারামারি করে, দলাদলি করে
ইতিমধ্যে দুইজনকে হত্যা করেছেন, একজন সাংবাদিক, একজন রাজনৈতিক কর্মী। কোনো বিচার
নাই। এটাই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র “

উন্নয়নের নামে ‘মেগা লুট’ হচ্ছে উল্লেখ করে
ফখরুল বলেন, “আজকের পত্রিকায় দেখলাম দ্রুতগামী ট্রেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার জন্য
দুইটা চীনা কোম্পানি সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটে করে দিতে চায়। পয়সা দেবে কে? পয়সা ওরা
এখন দেবে এবং সরকার আমাদের পকেট থেকে কেটে নেবে।”

“আমাদের প্রশ্ন আপনারা যে উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার
করছেন, এই উন্নয়নে লাভবান হচ্ছে কে? লাভবান হচ্ছে আপনাদের কিছু মানুষ, যারা কমিশন
এজেন্সি করে, যারা দালালি করে, বখরা নেয়। শুধুমাত্র আপনাদের মানুষ উপকৃত হচ্ছে,
সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই উপকৃত হচ্ছে না।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে কৃষক দলকে
কৃষকদেরকে সংগঠিত করে একটা গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করার আহ্বান জানান বিএনপি
মহাসচিব।

কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুর
সভাপতিত্বে ও সদস্য এস কে সাদীর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষক
দলের সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিমউদ্দিন, আফতাব উদ্দিন
আহমেদ মণ্ডল, জামালউদ্দিন মিলন, এমএ হালিম, নাসির হায়দার, জিয়াউল হায়দার পলাশ, লুৎফুর
রহমান, মাহমুদুল হক সানু, শরীফুল ইসলাম মোল্লা, মহসিন আহমেদ তুষার, আনোয়ারুল হক,
এনায়েতুল্লাহ খোকন, রবিউল হাসান পলাশ, সালাহউদ্দিন খান মিলকী, নাসিরউদ্দিন আহমেদ
বাচ্চু, রফিকুল আলম রফিক, মাহবুবুর রহমান আউয়াল, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বক্তব্য
রাখেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ
করেন কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তকদির
হোসেন জসিম।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব,
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ
প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুজ্জামান
শিমুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম ও ছাত্রদলের ইকবাল
হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।