দীর্ঘ ২২ বছর পর শুক্রবার সকালে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সম্মেলন হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশনে তোলা শোক প্রস্তাবে ১২২ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক তকদির হোসেন জসিম।
ওই তালিকায় বিএনপির সাবেক মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়ার নাম না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন নেতাকর্মীদের অনেকে।
মান্নান ভূঁইয়া টানা ৭ বছরের বেশি সময় কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বেই ১৯৯২ সালে কৃষক দলের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু, যিনি এখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।
কৃষক দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমি বিস্মিত হয়েছি। প্রয়াতদের প্রতি শোক জানাতে গিয়ে এরকম কৃপণতা না করলেই পারতেন। মান্নান ভূঁইয়া জীবিত থাকাকালে নরসিংদীতে কৃষক মহাসম্মেলনও করেছেন। এক-এগারোর ঘটনাপ্রবাহে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর অনেক বছর তো পেরিয়ে গেছে। তার প্রতি শোক জানালে কৃষক দল কি ছোট হত ?”
সিরাজ বলেন, যে মাহবুবুল আলম তারা দল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তার নামও শোক প্রস্তাবে স্মরণ করা হয়েছে।
“তাহলে কেন একজন আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নাম স্মরণ করতে এতো কার্পণ্য! এই সংকীর্ণতা কৃষক দলের থাকা উচিত নয়।”
আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, ফাইল ছবি
২০০৭-০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে বাদ দিয়ে ‘রাজনৈতিক সংস্কারের’ একটি ধারণা আলোচিত হয়, যা সে সময় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামে পরিচিতি পায়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ- দুই দলেই কিছু নেতা সে সময় কথিত সেই সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে তখনকার মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া সংস্কার প্রস্তাব দিলে এ নিয়ে দলে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। পরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার মুহূর্তে মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিবের ভার দিয়ে যান।
পরে আর নিজের অবস্থান উদ্ধার করতে পারেননি সাবেক বিএনপি সরকারের এই মন্ত্রী। ক্যান্সারে ভুগে ২০১০ সালের ২৮ জুলাই তার মৃত্যু হয়।
কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে প্রকাশিত স্মরণিকায় শোক প্রস্তাবের শিরোনামে লেখা রয়েছে, “জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের দীর্ঘ পথচলার পরিক্রমায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন ১৯৯৮ সালের ১৬ মে থেকে চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন ২০১২ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত সংগঠনের যেসব নেতা-কর্মী ও পরামর্শদাতাদের আমরা হারিয়েছি তাদের তালিকা।”
এই তালিকায় কৃষক দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন (সদস্য), তরিকুল ইসলাম (সহ-সভাপতি), আফসার আহমেদ সিদ্দিকী (সভাপতি), সাদেক হোসেন খোকা (সদস্য), একেএম শামসুল বারী মোহন মিয়া (সহ সভাপতি), মাহবুবুল আলম তারা (সভাপতি), মজিবুর রহমান মোল্লা (সহ সভাপতি), আহমেদ আলীর (সহ সভাপতি) নামও রয়েছে। তবে তাদের অনেকে যাকে নেতা হিসেবে পেয়েছেন, সেই মান্নান ভূঁইয়ার নাম সেখানে আসেনি।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে সম্মেলনে আসা মাঠ পর্যায়ের নেতা রবিউল ইসলাম বলেন, “আমি ব্যথিত হয়েছি। শোক প্রস্তাবে যাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হল, তাদেরও নেতা ছিলেন তিনি। মরহুম তরিকুল ইসলাম, সাদেক হোসেন খোকা- তারা হয়ত কবরে শুয়ে লজ্জা পাচ্ছেন।
১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী কৃষক দল প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।
এরপর ১৯৯২ সালে আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে সভাপতি করে কৃষক দলের প্রথম কমিটি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক করা হয় শামসুজ্জামান দুদুকে।
১৯৯৮ সালে মাহবুব আলম তারাকে সভাপতি ও দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি হয়। এরপর ২০০১ সালে মাহবুব আলম তারা কৃষক দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে মজিবুর রহমান মোল্লা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন।
২০০৭ সালে তার মৃত্যুর পর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে আসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ মির্জা ফখরুল বিএনপির মহাসচিব হওয়ার পর কৃষক দলের দায়িত্ব ছাড়েন।
তারপর থেকে সভাপতির পদটি ছিলো শূন্য। পাঁচ বছর ওইভাবে চলার পর গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করে বিএনপি।