সম্প্রতি বসানো আটটি ক্যামরায় নদীর প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ পর্যবেক্ষণের আওতায় এসেছে।
হালদায় কার্প জাতীয় মা মাছের প্রজনন মৌসুমের আগে এ ব্যবস্থা চালু করাকে স্বাগত জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাশাপাশি নদীতে মা মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ও ডলফিনের বিচরণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত পুরো অংশকে সিসি ক্যামরার আওতায় আনা গেলে সুরক্ষা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন হালদা বিশেষজ্ঞরা।
নৌ-পুলিশের সদরঘাট থানার ওসি এবিএম মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মা মাছ যাতে কেউ ধরতে না পারে এবং বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পিটিজেড সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। মদুনাঘাট থেকে আমতুয়া অংশ এই ক্যামরাগুলোর আওতায় মনিটর করা সম্ভব হচ্ছে।
“নদীর আরও দুটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানেও আমরা সিসি ক্যামেরা লাগানোর চেষ্টা করব। সামনেই মা-মাছ ডিম ছাড়বে, তাই ফাঁড়িতে জনবলও বাড়ানো হয়েছে।”
এসব ক্যামেরা নদীর রামদাস মুন্সির হাট এলাকায় অস্থায়ী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মনিটর করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ঢাকায় নৌ-পুলিশের ডিআইজির কার্যালয়, সদরঘাট থানা থেকেও মনিটর করা হয় বলে জানান ওসি এবিএম মিজানুর রহমান।
তিন মাস আগে রামদাস মুন্সির হাটে এই অস্থায়ী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। বর্তমানে ওই ফাঁড়িতে আটজন পুলিশ সদস্য কর্মরত আছে।
ক্যামেরার মাধ্যমে হালদায় নজরদারি করা হচ্ছে এখান থেকেই।
ক্যামেরায় হালদা মনিটরিং কার্যক্রম দেখার পর হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রামদাস মুন্সির হাটে যে ক্যামেরাটি বসানো হয়েছে তা মদুনাঘাট পর্যন্ত এলাকা কভার করে। খুবই শক্তিশালী ক্যামেরা।
“এটা দারুণ উদ্যোগ। ক্যামেরাগুলোতে নাইট ভিশনও আছে। রাতের আঁধারে কেউ যদি নদীতে নামে, মাছ শিকার করে বা বালু তোলে তাহলেও তা ধরা পড়বে।”
হালদা-কর্ণফুলীর সংযোগ অংশে এবং মদুনাঘাট সেতু এলাকায় আরও দুটি ক্যামেরা স্থাপনের সুপারিশ করেছেন জানিয়ে মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, নদীর উজানের অংশে আইডিএফ-পিকেএসএফ ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
“পুরো প্রজনন ক্ষেত্রটি যদি নজরদারির আওতায় আসে তাহলে আমার নিশ্চিত হব। নদী পাহারায় এভাবে সিসি ক্যামরার ব্যবহার আমার জানা মতে দেশে এটাই প্রথম।”
হালদা নদীর ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড’ খ্যাত সাত্তার খালের মুখ থেকে রামদাস মুন্সির হাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং উজানের সমিতির হাট আলমের কুম পর্যন্ত আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে মা-মাছের চলাচল বেশি থাকে প্রজনন মৌসুমে।
হালদা যেখানে কর্ণফুলীর সঙ্গে মিশেছে সেই কালুরঘাট সেতুর কাছের অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলা।
কালুরঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশ ঘিরেই প্রজনন মৌসুমে চলে চোরা শিকারীদের উৎপাত।
দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র এবং বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রজনন মৌসুম।
এসময়ে হালদায় মা-মাছের আনাগোনা বাড়ার সঙ্গে বেড়ে যায় চোরা শিকারীদের উৎপাত; আর তাতে বিপদে পড়েছে মাছ ও ডলফিন।
বিগত বছরগুলোতে টানা অভিযান চালিয়েও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম থামানো যায়নি। জাল ফেলে ও নদীতে বিষ প্রয়োগ করে করে দিনে-রাতে মা মাছ শিকার এবং ডলফিন হত্যার মত ঘটনাও ঘটেছিল হালদায়।
শনিবার হালদা নদী থেকে বিপুল পরিমাণ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়।
এদিকে শনিবারও হালদার সত্তারঘাট থেকে কালুরঘাট ছায়ার চর অংশে দিনভর অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
এসময় পাঁচ হাজার মিটার কারেন্ট জাল এবং নদী থেকে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত তিনটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ধ্বংস করা হয়। একটি নৌকাকে জরিমানা করা হয় পাঁচ হাজার টাকা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, “ছায়ার চর অংশে বেশ কয়েকটি ডলফিনের আনাগোনা দেখি। শুনেছিলাম ডলফিন জালে আটকা পড়া ছোট মাছ খেতে আসে। তারপর তাদের লম্বা মুখের গড়নের কারণে জালে আটকা পড়ে যায়।
“তাই ডলফিনের আনাগোনা দেখে ধারণা করি আশপাশে কোথাও গোপনে জাল পাতা আছে। খুঁজতে গিয়ে কারেন্ট জাল পাই।”
নদীতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউএনও রুহুল আমিন।
আরও পড়ুন
হালদার আপদ চোরা শিকারীরা, বিপদে মা মাছ-ডলফিন
হালদার মা মাছ রক্ষায় ডিম সংগ্রহকারীদের শপথ
করোনাভাইরাস: হালদাপাড়ে আশা-আশঙ্কার দোলাচল
হালদার জন্য কমিটি করে দিল হাই কোর্ট